Advertisment

Explained: এক্কেবারে ভারতের হাল! সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে বিবাদ, কী করলেন নেতানিয়াহু?

বিরোধীরা জনসাধারণকে পথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Israel

সোমবার ২৪ জুলাই, ২০২৩, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকারের বিচার ব্যবস্থার পরিবর্তনের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় জেরুজালেমে বিক্ষোভকারীরা একটি রাস্তা অবরোধ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিতর্কিত বিচার বিভাগীয় সংস্কার পরিকল্পনার একটি মূল অংশ পাস করেছে ইজরায়েলের পার্লামেন্ট। মন্ত্রীদের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো যাতে সেদেশের সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করতে না-পারে, সেই কথা আছে বিচার বিভাগীয় সংস্কারের বিলে। এই বিল ইজরায়েলের পার্লামেন্টে ৬৪-০ ভোটে পাস হয়েছে। কারণ, বিরোধী আইনপ্রণেতারা ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। তাঁরা কক্ষ ত্যাগ করেছিলেন।

Advertisment

ইজরায়েলজুড়ে প্রস্তাবিত পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে এই বিল পাসের ঘটনাটি ঘটল। যদিও সমালোচকরা অভিযোগ করেছেন যে এই ব্যাপক সংস্কার গণতন্ত্রকে দুর্বল করবে, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিকে ইন্ধন দেবে। তবে সরকার এবং রক্ষণশীলদের বিশ্বাস যে এই পরিবর্তনগুলো 'হস্তক্ষেপবাদী বিচারকদের' পরিবর্তে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয়।

নতুন কী পাস হয়েছে?
নতুন আইনের অধীনে, সুপ্রিম কোর্ট 'যৌক্তিকতার' আইনি মান ব্যবহার করে জাতীয় সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারবে না। এই আইন আনার কারণ, বিচারকরা আগে আইন প্রণেতা ও মন্ত্রীদের নেওয়া সিদ্ধান্ত ইচ্ছেমতো বাতিল করতেন।

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, 'যুক্তিসঙ্গত কারণ অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন এবং কানাডা-সহ বিভিন্ন দেশের বিচার ব্যবস্থার একটি আইনি মানদণ্ড। সরকারের একটি সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলে গণ্য করা হয় যদি একটি আদালত রায় দেয় যে এটি সমস্ত প্রাসঙ্গিক কারণ বিবেচনা না-করে বা প্রতিটি বিষয়কে প্রাসঙ্গিক গুরুত্ব না-দিয়ে বা অপ্রাসঙ্গিক কারণগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'

নেতানিয়াহুর সরকার যুক্তি দিয়েছে যে নতুন বিলের মাধ্যমে এই পরিবর্তন ইজরায়েলে গণতন্ত্রকে লালন-পালন করতে সাহায্য করবে। কারণ, এটি অনির্বাচিত বিচারকদের তুলনায় নির্বাচিত বিধায়কদের বেশি ক্ষমতা দিয়েছে। অর্থাৎ জনপ্রতিনিধিদের বেশি ক্ষমতা দিয়েছে। বিরোধীরা, অবশ্য এটিকে এমন একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, যেটার দৌলতে অতি-ডানপন্থী সরকার বিচার বিভাগের কোনও হস্তক্ষেপ ছাড়াই নীতি প্রণয়ন করতে চাইছে। যেমন একটা চেষ্টা মোদী সরকারের জমানায় ভারতেও ঘটছে।

অন্যান্য প্রস্তাবিত সংস্কারের কী অবস্থা?
ইজরায়েলে এখনও পর্যন্ত, ক্ষমতাসীন জোট কেবলমাত্র সেই আইন প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা যুক্তিসঙ্গততার আইনি ধারণাকে উদ্বিগ্ন করেছে। মার্চ মাসে সংঘটিত বৃহৎ আকারের বিক্ষোভের কারণে অন্যান্য সংস্কারগুলো ইতিমধ্যেই পিছনের দিকে সরে গেছে।

এরপরই নেতানিয়াহুর সরকার প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে জানুয়ারিতে বিচার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে। যুক্তিসঙ্গততা ছাড়াও, আরও তিনটি বড় সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথমত, সরকার ১২০ সদস্যের পার্লামেন্ট বা নেসেটে এমন ব্যবস্থা করতে চায়, যেখানে পক্ষে ৬১ ভোট পেলেই সুপ্রিম কোর্টের যে কোনও রায়কে অগ্রাহ্য করা যাবে।

দ্বিতীয়ত, একটি আইন যা সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের নিয়োগে আইন প্রণেতাদের একটি বড় ভূমিকা তুলে ধরবে। এখনও পর্যন্ত, পেশাদার, বিচারপতি এবং আইন প্রণেতাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি ইজরায়েলের বিচারকদের শীর্ষ আদালতে উন্নীত করে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন পরিবর্তনটি 'এই কমিটিতে আইন প্রণেতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেবে। যাঁদের অধিকাংশই আবার ডানপন্থী এবং ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল শাসক জোটের প্রতিনিধি।' আর তৃতীয়টি হল একটি নতুন ব্যবস্থা যেখানে মন্ত্রীরা স্বাধীন পেশাদারদের ব্যবহার না-করেই তাঁদের নিজস্ব আইনি উপদেষ্টাকে বেছে নিতে পারবেন।

কেন নেতানিয়াহুর সরকার ইজরায়েলের বিচার ব্যবস্থা পরিবর্তন করছে?
ইজরায়েলের রক্ষণশীল এবং ডানপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরে বিচার বিভাগকে তার আইন প্রণয়নের এজেন্ডার বিরুদ্ধে বামপন্থার পক্ষে ঝুঁকে থাকা বাধা হিসেবে দেখে আসছে। উদাহরণস্বরূপ, ক্ষমতাসীন অতিডান জোট আদালতের রায়গুলোকে উলটে দেওয়ার জন্য আরও ক্ষমতা চায়। কারণ, ইজরায়েলে আদালতের রায় এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়কে সমর্থন করার লক্ষ্যে সামাজিক সংস্কারকে প্রসারিত করেছিল এবং পূর্ববর্তী সরকারগুলোকে প্যালেস্তাইনের জমিতে ইজরায়েলের ফাঁড়ি নির্মাণে বাধা দিয়েছিল। মূলত, সেই দেশের আদালত বেশ কিছু আইনের মাধ্যমে ইজরায়েলের ডানপন্থী সরকারের লাগাম টেনে ধরতে চায়। কারণ, এই ডানপন্থী সরকার সবসময় উগ্র ইজরায়েলের পক্ষে সওয়াল করে।

নতুন আইনে বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া কী?
ইজরায়েলের বিরোধী আইন প্রণেতাদের কাছে সরকারের বিচারবিভাগীয় সংস্কার বন্ধ করার মত পার্লামেন্ট পর্যাপ্ত সংখ্যা নেই। সেই কারণে বিরোধী আইন প্রণেতারা প্রতিবাদের ভিন্ন রাস্তা বেছে নিয়েছেন। তাঁরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে নেতানিয়াহুর জোট ক্ষমতায় এসেছে। তার পর থেকেই ইজরায়েলের বিভিন্ন শহরে বড় ধরনের বিক্ষোভ চলছে।

মোডানিতে, নতুন আইন প্রণয়নের কিছুক্ষণ পরেই নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়। নিউ ইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করেছে যে প্রতিবাদকারীরা জেরুজালেমের একটি প্রধান রাস্তা অবরুদ্ধ করেছে। সেই রাস্তায় রয়েছে ইজরায়েলের পার্লামেন্ট। বিরোধী নেতারা প্রতিবাদীদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন- বিমানসেবিকাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস, কে এই গোপাল কান্ডা?

সামরিক বিশেষজ্ঞ, প্রযুক্তিবিদ, শিক্ষাবিদ, উচ্চপদস্থ চিকিৎসক এবং ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা, যাঁরা চলতি বছরের শুরুতে নেতানিয়াহুকে কয়েক মাসের জন্য সংস্কার স্থগিত করতে বাধ্য করেছিলেন, তাঁরা ফের ধর্মঘটে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে মানবাধিকার সংগঠন মুভমেন্ট ফর কোয়ালিটি গভর্নমেন্ট নতুন আইনসভার সাংবিধানিক সংকট বাড়িয়ে ইজরায়েলের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

agitation benjamin-netanyahu Israel
Advertisment