ফর্মুলা। না, পরীক্ষায় প্রশ্ন দেখে মাথা চুলকে লেখার ব্যাপার নয়। কোভিডের কারণে এই ফর্মুলায় পরীক্ষার ফলাফল স্থির হবে। হ্যাঁ, এখানে আমরা সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি ইডুকেশন বা সিবিএসই-র ফর্মুলার কথা বলছি। তাদের ফর্মুলা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে, অনেক অকারণ ধন্দও তৈরি হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার বারো ক্লাসের ছাত্রদের পরীক্ষার জন্য সুপ্রিম কোর্টে ওই ফর্মুলা জমা দিয়েছে সিবিএসই। নম্বর দেওয়ার ভিত্তি হল-- ৪০: ৩০: ৩০।
ফর্মুলার বিস্তারিত
ফর্মুলা অনুযায়ী, থিওরিতে নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে বারো ক্লাস মানে এ বছর ছাত্রছাত্রীরা যে সব পরীক্ষা দিয়েছেন, তার উপর ভিত্তি করে ৪০ শতাংশ মার্কস দেওয়া হবে। একাদশ শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষার ফলের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হবে ৩০ শতাংশ নম্বর, বাকি থাকা ৩০ শতাংশ নম্বর দেওয়া হবে ছাত্রছাত্রীদের দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে।
ফর্মুলার আরও গভীরে
বোঝাই যাচ্ছে, ক্লাস টুয়েলভের রেজাল্ট নির্ভর করে আছে আগের বেশ কিছু পরীক্ষার উপর। যদি কেউ এ সব পরীক্ষায় খারাপ ফল করে থাকেন, কিংবা কয়েকটিতে বিশেষ কারণে ফল মন্দ হয়ে থাকে, তা হলে তাঁর নম্বর কম হয়ে যাবে। কোনও বছর খারাপ ফল করে পরের বছরে তাক লাগানো রেজাল্ট করেছেন, এমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা তামাম পৃথিবীতেই বহু। কিন্তু কোভিড সেই সুযোগ কেড়ে নিয়ে অনেক পড়ুয়াকে অসহায় করে তুলল এভাবেই। যদিও বোর্ডের তরফে বলা হয়েছে, যে সব ছাত্রছাত্রী ফলাফলে সন্তুষ্ট হবেন না, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাঁদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে। বোঝাই যাচ্ছে, সেই পথটা সহজ হবে না মোটেই।
আরও পড়ুন, করোনার চিকিৎসায় সুগারের ওষুধ কাজ করে কী ভাবে?
মার্কসের মোদ্দা কথা
দশম শ্রেণির পরীক্ষায় কোনও বিষয়ের থিওরিতে কোনও ছাত্র মূল পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে প্রাপ্ত নম্বরের বিচারে যে তিনটি বিষয়ে সবচেয়ে ভাল নম্বর পেয়েছিলেন, তার গড় নম্বরের ৩০ শতাংশ দেওয়া হবে এবারের মার্কসশিটে। ইলেভনের ফাইনাল পরীক্ষায় কোনও বিষয়ের থিওরিতে কোনও পড়ুয়া যে নম্বর পেয়েছিলেন, তার ৩০ শতাংশ। আর ক্লাস টুয়েলভের ক্ষেত্রে প্রি-বোর্ড পরীক্ষা যেমন টেস্ট ও প্রি-টেস্ট, মিড-টার্ম পরীক্ষা যেমন হাফইয়ারলি ও অ্যানুয়ালি পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে দেওয়া হবে ৪০ শতাংশ নম্বর।
প্র্যাকটিকাল-ইন্টার্নাল অ্যাসেসমেন্ট করার কাজ ইতিমধ্যেই বেশির ভাগ স্কুলেরই শেষ হয়ে গিয়েছে। সিবিএসই-র পোর্টালে তা অপলোডও করেছে তারা। বোর্ড জানিয়েছে, যারা এখনও তা করেনি, ২৮ জুন হল কাজ মেটানোর ডেডলাইন।
রেজাল্ট কমিটি
৪০-৩০-৩০ (উল্টো করে ভাবলে ৩০-৩০-৪০) সমীকরণ হাতড়িয়ে কারা মার্কস দেবেন ছাত্রছাত্রীদের? সে জন্য তৈরি হবে রেজাল্ট কমিটি। প্রতিটা স্কুলেই গড়া হবে কমিটি। সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা প্রিন্সিপাল, দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ানো দু'জন সবচেয়ে সিনিয়র শিক্ষক এবং কোনও পড়শি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ানো দুই শিক্ষক থাকবেন কমিটিতে। শেষ দুজন থাকবেন এক্সটার্নাল মেম্বার হিসেবে। নম্বর দেওয়ায় অল্প স্বাধীনতাও দেওয়া হয়েছে এই কমিটিকে। ট্যাবুলেশন পলিসিতে বলা হয়েছে, ধরা যাক, ক্লাস টুয়েলভের ওই ৪০ শতাংশ নম্বর প্রি-বোর্ড পরীক্ষাগুলি মানে টেস্ট প্রি-টেস্টের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হবে মনে করল কোনও কমিটি, আবার কোনও কমিটি ঠিক করল-- না এ পথে নয়, একই রকম গুরুত্ব দেওয়া হবে প্রি-বোর্ড ও মিড টার্ম (হাফইয়ার্লি এবং অ্যানুয়ালি) পরীক্ষাগুলোয়।
আরও পড়ুন, কেন কেন্দ্রের নিশানায় টুইটার?
অ্যাসেসমেন্ট মডারেশন মার্কস
তা হলে দশম একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির নম্বরের ৩০-৩০-৪০ শতাংশের ভিত্তিতে থিওরি নম্বর দেওয়া হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। তার পর থাকছে প্র্যাকটিকাল মার্কস। এর পরও নম্বর পেতে পারেন তাঁরা। সেই নম্বর তাঁরা পেতে পারেন পারে স্কুলের মানের ভিত্তিতে। একেই মডারেশন মার্কস বলা হয়। কোনও স্কুলের গত তিন বছরের বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল বিচার করে দেওয়া হবে এই মডারেশন মার্কস।
কী সেই পদ্ধতি?
কোনও স্কুলের গত তিন বছরের মধ্যে যে বছরের দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের ফল সবচেয়ে ভাল, সেই বছরটিকে রেফারেন্স ইয়ার হিসেবে ধরতে বলছে সিবিএসই। ধরা যাক, কোনও একটি স্কুলের ২০১৭-১৮-এ বোর্ড পরীক্ষায় মোট ছাত্রছাত্রীর গড় নম্বর ৭২, ২০১৮-১৯-এর গড় নম্বর ৭৪, ২০১৯-২০-র নম্বর ৭১। তা হলে মডারেশন মার্কস দেওয়ার বিচারে রেফারেন্স ইয়ার ২০১৮-১৯। যদি কোনও স্কুলের বোর্ড পরীক্ষা গত দু'বছর ধরে হয়ে থাকে, তা হলে ওই দু'বছরের মধ্যে যে বছরের ফল সবচেয়ে ভাল, তার উপর বিচার করতে হবে। আবার এবারই প্রথম বোর্ড পরীক্ষা হলে, তা হলে কী নিয়ম হবে তাও আদালতকে জানিয়ে দিয়েছে সিবিএসই। তবে এই মডারেশন মার্কসের ফলে দেখা যায় খারাপ ছাত্রছাত্রীদের ভাল ফল হয়ে গেছে, কিন্তু খুব ভাল পেয়েছেন যাঁরা যাঁরা, তাঁদের লাভ বিশেষ হয়নি।
যদি কেউ পাশ মার্কস না পান?
কেউ কোনও একটি বিষয়ে পাশ মার্কস না পান, তা হলে তাঁকে কমপার্টমেন্ট ক্যাটেগরিতে ফেলা হবে। পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে পরবর্তীতে। কোভিড এভাবেই পরীক্ষা কেড়ে নিয়েছে। এখন মান বিচারে পুরনো পরীক্ষাই সম্বল। তবে এত বিশাল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে জটিল এই পদ্ধতিতে নম্বর দেওয়াটা কি আদৌ স্বচ্ছতার সঙ্গে করা যাবে, সেই প্রশ্নটা শেষপর্যন্ত থাকছে। সিবিএসই-র কাছে এটা চ্যালেঞ্জও। তা ছাড়া, হয়তো খারাপ পড়ুয়ার ভাল ফল, মানে পড়ে-পাওয়া চোদ্দ আনা, আর ভাল পড়ুয়ার খারাপ ফল, মানে অকারণ দুঃখ, চোখের জল… মিশে থাকবে বহু মার্কশিটে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন