টুইটার ও ভারত সরকারের লড়াই এবার এলন মাস্কের হাতের অস্ত্র। এলন মাস্কের বিরুদ্ধে টুইটার চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে মাঠে নেমেছে। ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কেনার যে চুক্তি, তা থেকে সরে এসেছেন এলন, তার বিরুদ্ধেই টুইটার আদালতে লড়াইয়ে। আগেই এলনের তরফে যুক্তি শোনা গিয়েছিল-- টুইটার তাঁদের কাছ থেকে ফেক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য গোপন করেছে। এবার মাস্ক বললেন, ভারত সরকারের নির্দেশের বিরুদ্ধে টুইটার যে মামলা করেছে, তাও তারা এলন মাস্ককে জানায়নি। ফলে মাস্ক বনাম টুইটার-- এই হাইপ্রোফাইল মামলা নিয়ে ফেলেছে চমকপ্রদ একটি মোড়।
ভারত যোগে মাস্কের বক্তব্যের বিস্তারিত
ভারতের বৈদ্যুতিন এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে টুইটারের বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট ব্লক করার যে নির্দেশ, তা চ্যালেঞ্জ করেছে এই সোশ্যাল সাইট। এই সিদ্ধান্তের মানে টুইটার তাদের রাস্তা থেকে সরছে। যদিও রুশ সরকারের হয়ে তারা ইউক্রেন-পন্থীদের অ্যাকাউন্টগুলি ব্লক করে দিয়েছে। মামলায় এমনই বলেছেন ধনকুবের মাস্ক। মাস্কের বক্তব্য, তিনি মত প্রকাশের স্বাধীনতার সমর্থক হলেও তিনি মনে করেন যে দেশে ব্যবসা করছে টুইটার, তাদের নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। তা ছাড়া ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছে টুইটার, সে সম্পর্কে তাঁকে জানানোও হয়নি। যে সিদ্ধান্ত ভারতে টুইটারের ব্যবসা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। ভারতে টুইটারের তৃতীয় বৃহত্তম মার্কেট।
টুইটার মাস্কের আক্রমণের উত্তর দিয়েছে। বলেছে, আন্তর্জাতিক যে নীতি রয়েছে তাদের, সেই অনুযায়ীই টুইটার এগিয়েছে। যদি তারা মনে করে, কোনও দেশের সরকারের কোনও নির্দেশ বা আইন যুক্তিযুক্ত নয়, অথবা যদি তারা মনে করে, এর ফলে টুইটার ব্যবহারকারীদের মত প্রকাশ সহ অন্যান্য অধিকার খর্ব হচ্ছে, তা হলে তারা ওই সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এগিয়ে থাকে। টুইটার ভারতের বৈদ্যুতিন এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের ১ হাজার ৪০০টি ব্লকিংয়ের নির্দেশের বিরুদ্ধে কর্নাটক হাইকোর্টে মামলা করেছে।
টুইটার এমনও বলেছে যে, কোনও নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যদি কোনও কনটেন্ট বা এ জাতীয় কিছু তুলে নেওয়ার নির্দেশ পায় তারা, সেই সব নির্দেশ যদি তারা যথাযথ বলে মনে করে, তা হলে সেটি মেনে নিয়ে থাকে। না হলে তারা সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে।
এলন মাস্কের বিরুদ্ধে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কেনার চুক্তি ভঙ্গের বিরুদ্ধে এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট মামলা করেছে ডেলাওয়্যারের কোর্ট অফ চ্যান্সারিতে। ভারতকে টেনে এনে যুক্তির লড়াই সেখানে নয়া উচ্চতায় উঠেছে সন্দেহ নেই। এপ্রিলে মাস্ক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কেনার কথা ঘোষণা করেন। সারা পৃথিবীতে তা নিয়ে সাড়া পড়ে যায়। বহু আলোচনা ও লেখালিখি হয় বিরাট অঙ্কের এই বিস্ময়কর ডিল নিয়ে। কিন্তু সময় যত গড়ায়, ততই দেখা যায় যে, মাস্ক এটিকে পাশে সরাচ্ছেন, এড়াচ্ছেন। গত মাসে যার পরিণতিতে মাস্কের কাছ থেকে চুক্তি ভঙ্গের স্পষ্ট বক্তব্যের বিস্ফোরণটি হয়। টুইটার এই সিদ্ধান্ত মানতে পারেনি। মাস্কের বক্তব্য-- টুইটার তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু গোপন করেছে, তাই এই চুক্তি সম্পূর্ণ করা যাবে না। টুইটার বলছে, মাস্ক তাঁর ব্যবসায় ধাক্কা খেয়ে এখন উল্টো সুর ধরছেন। এটাই এত বড় একটি ডিল ভেঙে দেওয়ার কারণ হলেও, তা কোনও ভাবেই গ্রাহ্য হতে পারে না। তাদের সাফ কথা. মাস্ককে চুক্তি ভাঙলে চলবে না। প্রতিশ্রুত অঙ্কে এই সোশ্যাল সাইট-টি কিনতেই হবে।
ভারতের টুইটারের মামলার আরও কিছু
কর্নাটক হাইকোর্টে টুইটার ভারতের বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের বিরুদ্ধে বলেছে, মন্ত্রকের তরফে তাদের না জানিয়েই নির্দেষ্ট কিছু টুইটের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পুরো অ্যাকাউন্ট ব্লক করার নির্দেশ জারি করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক এবং সাংবাদিকতা সম্পর্কিত কনটেন্ট সমন্বিত অ্যাকাউন্টস। যা ব্লক করা মানে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করা।