সাধারণ বর্ষা পেতে চলেছে দেশ। এ নিয়ে পর পর চার বছর। লং রেঞ্জ ফোরকাস্ট, বা এলআরএফ-- দীর্ঘকালীন পূর্বাভাসের ঘোষণা করেছে মৌসম ভবন। বলেছে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর-- এই চার মাস বর্ষার স্বাভাবিক পদসঞ্চারণা থাকবে, যেমনটা ছিল ২০১৯, ২০২০, এবং গত বছর।
দীর্ঘকালীন গড়
লং পিরিয়ড অ্যাভারেজ। বা এলপিএ। পূর্বাভাস ঘোষণার একটা বড় ভিত্তি। বৃষ্টি হবে স্বাভাবিক, স্বাভাবিকের চেয়ে কম, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি-- লং পিরিয়ড অ্যাভারেজ বা দীর্ঘকালীন গড়ের ভিত্তিতে এমন পূর্বাভাস শোনায় মৌসম ভবন। যা ৩০ কিংবা ৫০ বছর বা এমন দীর্ঘমেয়াদি গড়ের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। বৃহস্পতিবারের এই পূর্বাভাস হল ১৯৭১ থেকে ২০২০ সালের বৃষ্টিপাতের গড়ের নয়া হিসেবে। এই সময়ে দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে গড় ৮৭ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। মৌসম ভবন অতীতে ১৯৬১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গড় বৃষ্টিপাতের হিসেব করেছিল। যা ছিল ৮৮ সেন্টিমিটার। এবং ১৯৫১ থেকে ২০০০-এ বৃষ্টিপাতের গড় জানিয়েছিল ৮৯ সেন্টিমিটার। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, চার মাসে সারা দেশের বৃষ্টিপাতের প্রেক্ষিতে এই হিসেব করা হয়ে থাকে। আবার নানা অঞ্চলে নানা রকমের বৃষ্টিপাত হয়, মাস থেকে মাসান্তরে তার বদলও ঘটে। ফলে, অঞ্চল ভিত্তিক আবহাওয়া সংক্রান্ত দীর্ঘকালীন পূর্বাভাসও দিয়ে থাকে মৌসম ভবন। তারা জানিয়েছে উত্তরপশ্চিম ভারতে লং পিরিয়ড অ্যাভারেজ ৬১ সেন্টিমিটার এবং পূর্ব ও উত্তরপূর্বে ১৪৩ সেন্টিমিটার। দক্ষিণপশ্চিম ভারতের কেরলে দীর্ঘমেয়াদি বৃষ্টির যে গড়, তাতে দেখা যাচ্ছে জুনে ৫৫৬ মিলিমিটার, জুলাইতে ৬৫৯ মিলিমিটার এবং অগস্টে ৪২৭ মিলিমিটার এবং সেপ্টেম্বরে ২৫২ মিলিমিটার। মাস হিসেবে সারা দেশে বর্ষায় বৃষ্টিপাতের দীর্ঘকালীন গড়, জুনে ১৬.৩৬ সেন্টিমিটার, জুলাইতে ২৮.৯২ সেন্টিমিটার, অগস্টে ২৬.১৩ সেন্টিমিটার এবং সেপ্টেম্বরে ১৭.৩৪ সেন্টিমিটার।
কেন লং পিরিয়ড অ্যাভারেজ বা দীর্ঘকালীন গড় প্রয়োজন?
মৌসম ভবন ২,৪০০ এলাকায় এবং ৩,৫০০ কেন্দ্রে বৃষ্টির পরিমাণ মেপে থাকে। যেহেতু নানা অঞ্চলে, নানা মাসে, নানা বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বদলাতে থাকে, তাই এই দীর্ঘকালীন গড় বৃষ্টিপাতের হিসেবটা প্রয়োজন হয়, যার মাধ্যমে পূর্বাভাস দেওয়ার কাজটা সহজ হয়ে থাকে। ঠিকঠাকও হয়।
আরও পড়ুন- এবার পালটা চাপ, রাশিয়ায় জনসন, ট্রস, ওয়ালেসের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি মস্কোর
স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক বৃষ্টি বলতে কী বোঝায়?
মৌসম ভবন বলেছে, জুন-সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা ১৫ শতাংশ, এবং অতি-বৃষ্টির সম্ভাবনা ৫ শতাংশ। এর মানে হল, ৬০ শতাংশ সম্ভাবনা ভাল পরিমাণে বৃষ্টিপাতের।
এখন কতটা বৃষ্টি হলে তাকে নর্মাল বা স্বাভাবিক বলা হবে, তা স্থির করা হয়ে থাকে ওই এলপিএ থেকে, কী ভাবে সেটা বিচার করা হয়?
স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের কাছাকাছি বৃষ্টিপাত বলতে বোঝায় এলপিএ-র ৯৬ থেকে ১০৪ শতাংশের মধ্যে বৃষ্টিকে।
স্বাভাবিকের কম বৃষ্টিপাত বলতে বোঝায়, এলপিএ যা, তার কাছাকাছি ১০ শতাংশ কম বৃষ্টিকে, মানে এলপিএ-র ৯০ থেকে ৯৬ শতাংশ। বৃষ্টির ঘাটতি বলতে বোঝাচ্ছে, এলপিএ-র পরিমাণ যা, তার ৯০ শতাংশের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতকে। স্বাভাবিকের বেশি বৃষ্টি বলতে, যখন বৃষ্টিপাত হয়েছে এলপিএ-র ১০৪ থেকে ১১০ শতাংশের মধ্যে। আর অতি বৃষ্টি বলতে বোঝায় এলপিএ-র ১১০ শতাংশের বেশি বৃষ্টিকে।
মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সম্পর্কিত এল নিনো, যা কিনা উত্তরপূর্ব ভারতে অনাবৃষ্টির সঙ্গেও অঙ্গাঙ্গী, এবার বর্ষায় তার আশা করছে না মৌসম ভবন। তারা বলেছে, বর্তমানে লা নিনা পরিস্থিতি চলছে নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরে। পূর্বাভাসও তা-ই বজায় থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
Read story in English