বুধবার (৪ অক্টোবর) মহাদেব অনলাইন বেটিং মামলায় অভিনেতা রণবীর কাপুরকে তলব করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। অবৈধ অনলাইন বেটিং এবং গেমিং প্ল্যাটফর্মের প্রচারের জন্য তাকে ৬ অক্টোবর ইডি-র সামনে হাজির হতে বলা হয়েছে। ইডির মতে, মহাদেব অনলাইন বুক বিভিন্ন লাইভ গেম যেমন পোকার এবং অন্যান্য কার্ড গেম, চান্স গেম, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, টেনিস, ফুটবল এবং অন্যান্যগুলিতে অবৈধ বাজি ধরার জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে। এমনকী, ভারতের বিভিন্ন নির্বাচনে বাজি ধরার সুযোগও দেয়। এটি বেশ কয়েকটি কার্ড গেম যেমন 'তিন পাত্তি', 'জুজু', 'ড্রাগন টাইগার', ভার্চুয়াল ক্রিকেট গেম' এবং আরও অনেক কিছু খেলার সুবিধা দেয়। এর প্রধান প্রবর্তক, মূলত ছত্তিশগড়ের বাসিন্দা। থাকেন দুবাইয়ের ঠিক বাইরে। আর, এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাঁরা প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন। বেটিং তদন্তে অ্যাপটি কীভাবে পরিচালিত হয়েছে, কারা এতে জড়িত এবং ইডির তদন্তে এখনও পর্যন্ত কী প্রকাশ পেয়েছে, তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে।
অ্যাপটি কীভাবে কাজ করে?
ইডির বক্তব্য অনুসারে, মেসার্স মহাদেব বুক বিভিন্ন ওয়েবসাইট রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং চ্যাট অ্যাপগুলিতে বেশ কয়েকটি বন্ধ গ্রুপ পরিচালনা করত। তারা ওয়েবসাইটগুলিতে যোগাযোগ নম্বরের বিজ্ঞাপন দেয় এবং লোকেদের মুনাফা অর্জনের জন্য খেলতে লোভ দেখায়। এই নম্বরগুলিতে শুধুমাত্র হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যেতে পারে। একবার একজন সম্ভাব্য ব্যবহারকারী যোগাযোগ করলে, তাকে দুটি পৃথক যোগাযোগ নম্বর দেওয়া হয়। বাজি তৈরির জন্য ব্যবহৃত ব্যবহারকারী আইডিগুলিতে অর্থ জমা দেয়। আর, পয়েন্ট সংগ্রহের জন্য একটি নম্বরে যোগাযোগ করে। অন্য নম্বরটি মনোনীত আইডিগুলিতে জমা হওয়া পয়েন্ট এনক্যাশ করতে ওয়েবসাইটে যোগাযোগ করার জন্য।
জালিয়াতির কায়দা
আইডিগুলি সাধারণত laser247.com, laserbook247.com, http://www.betbhai.com, betbook247.com, tigerexch247.com এবং http://www.cricketbet9.com-এর মত ওয়েবসাইটে তৈরি করা হয় প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে। আর, bettors-দের পছন্দ, অর্থ সংগ্রহ, ব্যবহারকারী আইডি তৈরি, আইডি শংসাপত্র গ্রাহকদের বিতরণ, উপার্জিত অর্থ বিতরণ করার কাজ প্যানেল/শাখার মালিকদের দ্বারা পরিচালিত হয়। খেলোয়াড়দের অনলাইনে শেয়ার করা বেনামি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতে হয় এবং তারপর দুবাইয়ের হেড অফিস দ্বারা প্যানেল বরাদ্দ করা হয়। বেনামি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেও পেআউট করা হয়। এই ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলি হয় জালিয়াতি করে খোলা হয় বা কমিশনের জন্য ঋণ দেওয়া হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সমস্ত গেমে এমনভাবে কারচুপি করা হয়, যাতে সামগ্রিকভাবে প্যানেলের মালিকদের অর্থ না-হারাতে হয় এবং ব্যবহারকারীর কাছে প্রাথমিক লাভ থাকা সত্ত্বেও, শেষ পর্যন্ত তাদের যাতে সর্বদা ক্ষতি হয়।
আরও পড়ুন- সিসোদিয়ার বিরুদ্ধে প্রমাণ কোথায়? ইডি-সিবিআইকে কড়া বার্তা আদালতের
মহাদেব বুকের পিছনে কে?
পুলিশ সূত্রে খবর, অ্যাপটি ২০১৭ সালে সক্রিয় হয়েছিল। কিন্তু, ২০২০ সালে অতিমারী চলাকালীন ব্যবহারকারীদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই জনপ্রিয়তা ২০২২ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। সৌরভ চন্দ্রকর (২৮) এবং রবি উপ্পল (৪৩) নামে মধ্যপ্রদেশের ভিলাইয়ের দুই বাসিন্দাই মহাদেব অনলাইন বুকের প্রধান প্রবর্তক। তাঁরা দুবাই থেকে তাদের কাজকর্ম পরিচালনা করছে। এর কাজকর্মের ওপর তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল। আর, লাভের ৮০ শতাংশ তারাই নিয়েছে। ইডি সূত্র জানিয়েছে যে এই দু'জন এই অ্যাপ থেকে ৫,০০০ কোটি টাকা উপার্জন করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। প্রায় দুই বছর ধরে তারা দুবাইয়ে আছে। এর আগেও তারা প্রায়শই দুবাইয়ে যেত। উৎপল একজন ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক। চন্দ্রকরের যোগ্যতা জানা নেই। ছত্তিশগড় পুলিশের একটি সূত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছে যে প্রায় তিন মাস আগে তাদের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিশ জারি করা হয়েছে।