Advertisment

অযোধ্যা: সুপ্রিম কোর্টের মধ্যস্থতা প্রস্তাব কী অর্থ বহনকারী?

মঙ্গলবার ঘণ্টাখানেক ধরে দু পক্ষের বক্তব্য শোনার পর সমঝোতার প্রস্তাব দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বলা হয় মধ্যস্থতার ব্যাপারে প্রস্তাব সম্পর্কিত নির্দেশ দেওয়া হবে ৬ মার্চ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
babri masjid

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয় করসেবকরা (এক্সপ্রেস আর্কাইভ)

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ অযোধ্যা রায়ের শুনানি ৫ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে। মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিষয়টি মেটানো যায় কিনা সে জন্য সব পক্ষকে এক সপ্তাহ সময় দেওয় হয়েছে। এই মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া চলবে গোপনে এবং আদালতের নজরদারিতে।

Advertisment

বিচারপতি এস এ বোবডে বলেন, "আমরা সত্যিই মধ্যস্থতার ব্যাপারটা নিয়ে চেষ্টা করতে চাইছি, যেহেতু এটা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়... যদি এক শতাংশও বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনা থাকে, তাহলে আমরা সে ব্যাপারে চেষ্টা করতে চাই।"



ওই বেঞ্চের নেতৃত্বে রয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি অশোক ভূষণ, এবং বিচারপতি এস আবদুল নাজির। ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে আবেদনের শুনানি চলছে এই বেঞ্চে। এলাহাবাদ হাইকোর্ট রাম জন্মভূমি বাবরি মসজিদের বিতর্কিত ২.৭৭ একর এলাকা নির্মোহী আখড়া, উত্তর প্রদেশের সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড এবং রামলালা বিরাজমনের মধ্যে সমভাবে বণ্টনের কথা বলা হয়েছিল।

আরও পড়ুন, বনভূমি থেকে বনবাসীর উচ্ছেদ: রায় বিবেচনাধীন সুপ্রিম কোর্টে

'মুসলিম' পক্ষ বেঞ্চকে জানিয়েছে, মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমাধানের রাস্তায় যেতে তাদের তেমন কোনও অসুবিধা নেই। 'হিন্দু' পক্ষের মধ্যে রামলালা বিরাজমন এবং মহান্ত সুরেশ দাসের কৌঁসুলি এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, মধ্যস্থতার চেষ্টা আগেও হয়েছে, এবং তা ব্যর্থ হয়েছে। নির্মোহী আখড়া অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে।

মঙ্গলবার ঘণ্টাখানেক ধরে দু পক্ষের বক্তব্য শোনার পর সমঝোতার প্রস্তাব দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বলা হয়, মধ্যস্থতার ব্যাপারে প্রস্তাব সম্পর্কিত নির্দেশ দেওয়া হবে ৬ মার্চ।

সিভিল প্রসিডিওর কোডের ৮৯ নং ধারায় বলা হয়েছে, যদি আদালতের মনে হয় যে সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনও সমঝোতার উপাদান রয়েছে, সেক্ষেত্রে আদালত সমঝোতার শর্তসমূহ স্থির করে সব পক্ষকে সে বিষয়ে জানিয়ে তাদের মতামত নেবে এবং সে মতামত পাওয়ার পর আদালত ১) সালিশি, ২) মিটমাট, ৩) লোক আদালতের মাধ্যমে বিচারবিভাগীয় সমঝোতা বা ৪) মধ্যস্থতার পথ নেওয়ার প্রস্তাব দেবে।

অযোধ্যা মামলায় তিন বিচারপতির লখনউ বেঞ্চ ২০১০ সালে ৩ অগাস্ট সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর মধ্যস্থতার পথে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। সমস্ত আইনজীবীদের চেম্বারে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তারা মিটমাট চায় কিনা। এ প্রক্রিয়া কৃতকার্য হয়নি, কারণ হিন্দু পক্ষ বলেছিল, এ প্রস্তাব তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে অনেক আবেদন জমা পড়ার পর, ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, এ বিষয়টি ধর্ম ও অনুভূতির, এবং প্রস্তাব দিয়েছিল এ ধরনের বিতর্কিত বিষয় যদি সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করা যায় তাহলেই সবচেয়ে ভাল হয়।



২০১৭ সালের ২১ মার্চ ভারতের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর বলেছিলেন, "কিছুটা দিন, কিছুটা ছাড়ুন। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। এসব ব্যাপারে যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়াই সবচেয়ে ভাল... এগুলি অনুভূতি ও ধর্মের বিষয়। যদি আপনারা সমাধান না করতে পারেন, তখনই আদালতের কাছে আসা উচিত... যদি সব পক্ষ চায় আমি দুপক্ষের পছন্দের মধ্যস্থতাকারীর সঙ্গে বসি, তাহলে আমি সে দায়িত্ব নিতে রাজি আছি।"

এ ব্যাপারে বিজেপি সভাপতি সুব্রহ্মণ্যন স্বামী দ্রুত শুনানির আর্জি জানালে বিচারপতি খেহর বলেছিলেন, "যদি আপনারা চান, আমি রাজি। যদি আপনারা না চান, আমি করব না। যদি আপনারা অন্য বিচারপতিদের চান, তাদেরও নিতে পারেন, কিন্তু সবার আগে সবার সঙ্গে বসে বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করুন। শেষ পর্যন্ত এসব অনুভুতির ব্যাপার। এবং যদি আপনারা কোনও মুখ্য মধ্যস্থতাকারী চান, আমরা সে ব্যবস্থাও করতে পারি।"

১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের আগে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং সারা ভারত মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মধ্যে কথাবার্তা চালানোর প্রভূত চেষ্টা হয়েছিল, যে ব্যাপারে চন্দ্র শেখর এবং পিভি নরসিমহা রাও সহ অন্তত তিনজন প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দেন নি। তার মূল্য দিতে হয়েছে ধ্বংসের মাধ্যমে।

Read the Full Story in English

Ram Temple Babri Mosque Explained Ayodhya
Advertisment