ইয়েতি একটি কাল্পনিক জন্তু। অনেকের বিশ্বাস নেপাল এবং তিব্বত এলাকায় এদের দেখা মেলে। গত শতাব্দী থেকেই এই জন্তুর অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক চলছে। ফের এ বিতর্ক সামনে এসেছে মঙ্গলবার। এদিন ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে মাকালু পর্বতাভিযানের সময়ে তাঁরা ইয়েতির তাজা 'রহস্যজনক পদচিহ্ন' আবিষ্কার করেছেন।
ইয়েতি শব্দটি এসেছে নেপালি অভিধান থেকে। এর অর্থ নচ্ছার তুষারমানব। তিব্বতিয় লোককথায় একে মে তে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। শহুরে লোককথা অনুসারে, ইয়েতি হল দু পেয়ে, শ্বেতকায় বানর জাতীয় জন্তু, যাদের উচ্চতা ১০ থেকে ১২ ফুট। ভারতীয় সেনাবাহিনীযে পদচিহ্ন খুঁজে পেয়েছে তার আকার ৩২× ১৫ ইঞ্চি। স্পষ্টতই এ পদচিহ্ন কোনও মানুষের নয়।
ইয়েতির পায়ের ছাপ দাবি করে এই ছবি প্রকাশ করেছে ভারতীয় সেনা
ইয়েতি সম্পর্কিত প্রথম বিবরণ পাওয়া যায় ১৯২১ সালে। ব্রিটিশ অভিযাত্রী চার্লস হাওয়ার্ড-বারি হিমালয় অভিযানের সময়ে লেখপা লা পাসের কাছে ইয়েতির পায়ের ছাপ দেখতে পান। এ ঘটনার কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে তাঁর লেখা বই (Mount Everest: the reconnaissance, 1921)-য়ে। তিনি লিখেছেন অনেক জন্তুর পায়ের ছাপের মধ্যে তিনি মানুষের মত কোনও জন্তুর পায়ের ছাপ দেখতে পান, এবং পরে এলাকাবাসীর কাছে বন্য, লোমশ জন্তুর কথা জানতে পারেন, যাকে দুর্গম পর্বতাঞ্চলে দেখা যায়।
১৯৫১ সালে, বিশিষ্ট হিমালয় অভিযাত্রী ব্রিটেনের এরিক শিপটন তাঁর ক্যামেরায় ইয়েতির ফেলে যাওয়া পায়ের ছাপের ছবি তোলেন। এ ছবিতে গোড়ালির জায়গার আকৃতি ছিল বুড়ো আঙুলের মত। ১৯৬০ সালে স্যার এডমন্ড হিলারি একটি খুলি নিয়ে আসেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল সে খুলিটি ইয়েতির, যার আকৃতি অনেকটা হেলমেটের মত। পরে অবশ্য জানা গিয়েছিল সেটি ছাগলের মত কোনও একটি জন্তুর খুলি। ২০১০সালে চিনা শিকারীরা একটি নির্লোম চতুষ্পদ জন্তুকে পাকড়াও করে। তাদের দাবি ছিল সেটিই ইয়েতি। কিন্তু পরে জানা গিয়েছিল সেটি একটি গন্ধগোকুল, কোনও এক রোগে যার গা থেকে লোম খসে গিয়েছিল। ২০১১ সালে গবেষকরা দাবি করেন তাঁরা ইয়েতির আঙুল খুঁজে পেয়েছেন, তবে পরে ডিএনএ পরী৭ায় জানা যায় যে সে আঙুল কোনও মানুষেরই। ২০১৩ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক হিমালয়ে ইয়েতির উপকথা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে।
ইয়েতির অস্তিত্ব নিয়ে কোনও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ না মিললেও লোককথা এবং কার্টুনে ইয়েতির জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। টিনটিন থেকে স্কুবি ডু, বহু জায়গায় বারবার ইয়েতির পুনর্জন্ম হয়েছে।
Read the Story in English