একজন যৌন পেশাদার শুধুমাত্র একজন 'নারী', 'ইভটিজিং' হল 'রাস্তায় যৌন হয়রানি', 'বলপূর্বক ধর্ষণ' হল 'ধর্ষণ'। যৌনতার ধারণাগুলোয় এই সংশোধনগুলো বুধবার ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের প্রকাশিত বিচারক এবং অন্যান্য আইনি অনুশীলনকারীদের জন্য নির্দেশিকা বা হ্যান্ডবুকের অংশ। হ্যান্ডবুক অনুযায়ী, যেখানে বিচারের বক্তৃতার ভাষা মহিলাদের সম্পর্কে পুরোনো এবং ভুল ধারণাকে প্রতিফলিত করেছে, সেখানে তা আইন এবং ভারতের সংবিধানের রূপান্তরকে বাধা দেয়। কারণ, সংবিধান লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল ব্যক্তির সমান অধিকার সুরক্ষিত করতে চায়।
হ্যান্ডবুক কী?
সুপ্রিম কোর্টের হ্যান্ডবুক একটি ৩০ পাতার পুস্তিকা, যার লক্ষ্য হল বিচারক ও আইনি ক্ষেত্রে মহিলাদের সম্পর্কে বিশেষণগুলো চিহ্নিত করা, তা বোধগম্য করা। আর, মহিলাদের সমস্যা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সহায়তা করা। এই নির্দেশিকায় মহিলাদের সম্পর্কে ব্যবহৃত সাধারণ ধারণাজাত শব্দ এবং বাক্যাংশগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সব শব্দগুলোর অনেকক'টাই নিয়মিতভাবে বিচারে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ২০১৭ সালে দিল্লি গণধর্ষণ মামলায় দোষীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ধর্ষিত বলতে বারবার 'র্যাভিশড' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
আদালত যা বলেছে
আদালত দিল্লি গণধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে বলেছিল, এটা একেবারেই স্পষ্ট যে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁর (ধর্ষিতার) মধ্যে উপভোগ করার মত একটি বিষয় খুঁজে পেয়েছিল। আর, স্পষ্টতই তারা একই উদ্দেশ্য নিয়ে আচ্ছন্ন ছিল যে কোনও অনুভূতি ছাড়াই তাঁকে পছন্দ করা, তাঁর সাথে ইচ্ছেমতো আচরণ করা। বলতে গেলে স্থূল, দুঃখজনক এবং পশুত্বপূর্ণ সহজাত আনন্দগুলো তারা উপভোগ করেছিল। র্যাভিশড করার পরে, তাঁকে ও তাঁর বন্ধুকে বাস থেকে ফেলে দেওয়া এবং তাঁদের পিষে দেওয়ার চেষ্টাকে রোজকারের ব্যাপার বলে তারা (ধর্ষকরা) মনে করেছিল। শুধু দিল্লি গণধর্ষণ মামলাই নয়। দেশের অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রেও এমন গতানুগতিক বহু শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, যা বিচারক বা বিচারপতিরা তাঁদের নির্দেশিকা বা হ্যান্ডবুক মেনে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু, সেসব শব্দ বাস্তব অবস্থার সঠিক প্রতিফলন ঘটায়নি বলেই অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন- দারিদ্র কমানোর বিরাট দাবি প্রধানমন্ত্রীর, কতটা সত্যি?
কেন বিচারকদের সঠিক শব্দ ব্যবহার করা এত গুরুত্বপূর্ণ?
হ্যান্ডবুকটির যুক্তি, যে বিচারক যে ভাষা ব্যবহার করেন তা কেবল তাঁদের আইনের ব্যাখ্যাই নয়, সমাজ সম্পর্কে তাঁদের উপলব্ধিও প্রতিফলিত করে। এমনকী যখন প্রচলিত কোনও শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা কোনও মামলার ফলাফলকে পরিবর্তন করে না, তখনও গতানুগতিক ভাষার ব্যবহার আমাদের সাংবিধানিক নীতির বিপরীত ধারণাকেই শক্তিশালী করতে পারে। আইনি জীবনের জন্য ভাষা গুরুত্বপূর্ণ। শব্দ হল সেই বাহন, যার মাধ্যমে আইনের মূল্যবোধ প্রতিফলিত হয়। শব্দগুলো আইনপ্রণেতা, বিচারক ও তাঁর চূড়ান্ত অভিপ্রায় জাতির কাছে তুলে ধরে।