Advertisment

Explained: আত্মহত্যার চেষ্টা কি অপরাধ, কী বলছে মোদী সরকারের নতুন দণ্ডবিধির বিল?

মোরারজি দেশাইয়ের সরকার এই আইন বাতিলের চেষ্টা করেছিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Nyaya Sanhita

১৯ শতকে ব্রিটিশদের আনা আইনটি সেই সময়ের চিন্তাভাবনাকে প্রতিফলিত করেছিল। সেই সময় নিজেকে হত্যা বা হত্যার চেষ্টা করা রাষ্ট্রের পাশাপাশি ধর্মের কাছেও অপরাধ বলে বিবেচিত হত।

ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি), ১৮৬০-এর বেশ কিছু বিতর্কিত বিধান বদলানোর চেষ্টা হয়েছে প্রস্তাবিত ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় (বিএনএস)। যেমন এখানে অনুপস্থিত আইপিসি ধারা ৩০৯। এই ধারা, আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যুর চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য মনে করে। এই আইনটি ভারতীয় দণ্ডবিধির অন্যতম প্রাচীন আইন। দীর্ঘকাল ধরে আইনটি সমালোচিত হয়েছে। ২০১৮ সালে কার্যকর হওয়া সংসদের একটি আইন দ্বারা বেশিরভাগ অপ্রয়োজনীয় আইনই বাতিল করা হয়েছিল। তবে এটি এখনও বিধির অংশ থেকে গেছে। তাই এর অপব্যবহারের সম্ভাবনাও আছে।

Advertisment

আইপিসি ধারা ৩০৯ কী?
এই ধারাটি কোনও ব্যক্তি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলে, যে আত্মহত্যা সাধারণত গভীরভাবে ব্যথিত ব্যক্তিদের শেষ অবলম্বন বলে মনে করা হয়, সেই ব্যক্তিদের জেল অথবা জরিমানার শাস্তির কথা বলে। আইপিসি ধারা ৩০৯ বলে, 'যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে এবং এই ধরনের অপরাধের জন্য কোনও কাজ করে, তাকে একটি মেয়াদের জন্য সাধারণ কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয়ই দেওয়া যেতে পারে।' ১৯ শতকে ব্রিটিশদের আনা আইনটি সেই সময়ের চিন্তাধারাকে প্রতিফলিত করেছিল। সেই সময়ে আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার চেষ্টা করা ছিল রাষ্ট্রের পাশাপাশি ধর্মের বিরুদ্ধেও অপরাধ।

তাহলে বিধি প্রণীত হওয়ার পর থেকে বিধানটি কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে?
১৯৭১ সালে আইন কমিশন তার ৪২তম রিপোর্টে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩০৯ বাতিলের সুপারিশ করেছিল। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের জনতা পার্টি সরকার আইপিসি (সংশোধনী) বিল, ১৯৭৮ নিয়ে এসেছিল। বিলটি পেশ ও পাস করা হয়েছিল রাজ্যসভায়। কিন্তু, লোকসভায় এটি পাশ হওয়ার আগেই সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং বিলটি বাতিল হয়ে যায়। এরপর 'গিয়ান কউর বনাম পঞ্জাব রাজ্য (১৯৯৬) মামলায় সুপ্রিম কোর্টের একটি পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আইপিসি ধারা ৩০৯-এর সাংবিধানিক বৈধতাকে বহাল রাখে। যাইহোক ২০০৮ সালে আইন কমিশন তার ২১০তম রিপোর্টে বলেছিল যে একটি আত্মহত্যার প্রচেষ্টার জন্য চিকিৎসা এবং মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন, শাস্তি নয়।

আরও পড়ুন- ফৌজদারি বিধি বদলে অনুপস্থিতিতেও বিচার, কেন তার বিরুদ্ধে সোচ্চার অনেকেই?

প্রস্তাবিত বিএনএসে কি ধারাটি অপসারণের কথা বলা হয়েছে?
নতুন ফৌজদারি দণ্ডবিধি বিলে আপাতদৃষ্টিতে ধারাটিকে সরানো হয়েছে। কিন্তু, এটি আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে সম্পূর্ণরূপে অপরাধমুক্ত করেনি। প্রস্তাবিত বিএনএসের ২২৪ ধারায় বলা হয়েছে, 'কোনও ব্যক্তি কোনও সরকারি কর্মচারীকে তাঁর সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধ্য করার জন্য বা বাধা দেওয়ার অভিপ্রায়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে, তাঁকে এক বছরের জন্য সাধারণ কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়ের সঙ্গে সমাজের সেবার সাজা দেওয়া যাবে।' এইভাবে আত্মহত্যার চেষ্টাকে নতুন বিলেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবেই রাখা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, একজন প্রতিবাদকারী যদি অন্য বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করা থেকে পুলিশকে বিরত রাখতে আত্মহননের চেষ্টা করেন, তবে তা সাজা হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়াও প্রস্তাবিত বিএনএসের ধারা ২২৪ শাস্তি হিসেবে সমাজসেবার কথা বলেছে, যা আইপিসি ৩০৯ ধারায় নেই।

Suicide Modi Government IPC
Advertisment