জম্মু-কাশ্মীর থেকে ধারা ৩৭০ প্রত্যাহার সারা দেশে তুফান তুলেছিল। ২০১৯-এর অগস্টে কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দরজা খটখটাতে অনেকেই বেশি কালক্ষেপ করেননি। ৩৭০ ধারা, যা ভূস্বর্গ-রাজ্যের মানুষজনকে বিশেষ সুবিধা সুনিশ্চিত করত, এটি প্রত্যাহারই শুধু নয়, জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইনে এই রাজ্যকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখে ভাগ করা হয়েছে, এ নিয়েও অনেকের আপত্তি রয়েছে রীতিমতো।
কতগুলি আবেদন?
২৩টির মতো আবেদন জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। বেশ কয়েক জন আইনজীবী, সমাজকর্মী, রাজনীতিবিদ এবং অবসরপ্রাপ্ত আমলা রয়েছেন এই আবেদনকারীদের তালিকায়। আইনজীবী এমএল শর্মা, সোয়েব কুরেশি, মুজফফর ইকবাল খান, রিফাত আরা ভাট এবং শাকির শাবির, ন্যাশনাল কনফারেন্সের লোকসভার সদস্য মহম্মদ আকবর লোন, হাসনেন মাসুরি, সিপিআই নেতা মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি, কাশ্মীরি শিল্পী ইন্দর সেলিম, সাংবাদিক শতীশ জেকব।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত মধ্যস্থকারী দলের প্রাক্তন সদস্য রাধা কুমার, জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যসচিব হিন্দল হায়দার তায়েবজি, বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত ভাইস মার্শাল কপিল কাক, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোককুমার মেহতা, ভারত সরকারের আন্তঃরাজ্য কাউন্সিলের প্রাক্তন সচিব অমিতাভ পাণ্ডে, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রচিব গোপাল পিল্লাই। প্রাক্তন আইএএস অফিসার শাহ ফায়জল, মানবাধিকার কর্মী শেহলা রশিদ। আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছে পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ, জম্মু-কাশ্মীর বার অ্যাসোসিয়েশনও।
আরও পড়ুন- বিমানভাড়া বৃদ্ধির জন্য বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলোকে দায়ী করলেন মন্ত্রী
কী চ্যালেঞ্জ ?
২০১৯-এ অগস্টের ৫ তারিখ রাষ্ট্রপতির এক নির্দেশনামায় জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এবং জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন আনা হয়। রাজ্যসভায় এই বিলটি পেশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই দিনই রাজ্যসভায় তা পাশ হয়ে যায়। পর দিন লোকসভায় পাশ হয়। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করেন ৯ অগস্ট। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার এবং জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠনের বিরুদ্ধে এই গুচ্ছ আবেদন। কিছু আবেদন হয়েছে ধারা ৩৭০-এর বিরুদ্ধেও, সেখানে দাবি করা হয়েছে, এই ধারাটি অসাংবিধানিক এবং সাম্যের অধিকারে ধাক্কা দেয়।
জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের ২৩ দিন পর, ২০১৯-এর ২৮ অগস্ট কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রকে নোটিশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আবেদনগুলির শুনানির জন্য পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ গঠন করা হয়। প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা এই বেঞ্চের নেতৃত্বে। ১৯-এর ১ অক্টোবর মামলা প্রথম ওঠে বেঞ্চে। ছ' দিন শুনানি হয়েছে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। ন' সিনিয়র আইনজীবী সওয়াল করেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল ও সলিসিটর জেনারেলও সওয়াল করেছেন। সোমবার সিনিয়র আইনজীবী শেখর নাপহাদে, এবং পি চিদম্বরম এই মামলায় জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আর্জি জানান প্রধান বিচারপতিকে।
প্রধান বিচারপতি জানান, পাঁচ সদস্যের ওই বেঞ্চের একজন বিচাপতি অবসর নিয়েছেন, সেই শূন্যস্থান পূর্ণ করতে হবে আগে। আইনজীবীরা আগামী সপ্তাহে শুনানির কথা বললে, প্রধান বিচারপতি জানান এটা সম্ভব নয়, কারণ তাঁকে এ নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এই বেঞ্চের সদস্য বিচারপতি সুভাষ রেড্ডি অবসর নিয়েছেন জানুয়ারিতে। আর প্রধান বিচারপতি রামানা জুলাইতে মামলা শুরু করার জন্য রাজি হয়েছেন। তবে, ২৬ অগস্ট তিনি অবসর নিচ্ছেন। তিনি অবসরের আগে মাত্র এক মাসের কিছু বেশি সময় পেতে পারেন এই মামলায়। ফলে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে আগামীতে দুই নতুন মুখ আমরা দেখতে চলেছি।
Read story in English