মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে এসেছে আফ্রিকান চিতারা। তাদের আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিলুপ্তির প্রায় ৭০ বছর পরে ভারতের মাটিতে চিতাদের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। তবে, বড় আকারের বিড়াল প্রজাতির এই প্রাণীরা ভারতীয় আবহাওয়া ও ভূ-প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের কতটা মানাতে পারে, তা এখনও পরীক্ষিত নয়। আর, সেই জন্যই উদ্বিগ্ন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
কুনো কি জাতীয় উদ্যান?
কুনো, ২০১৮ সালের আগে ছিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। সেখান থেকে তাকে জাতীয় উদ্যানে উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে এই বনাঞ্চলের ওপর নজরদারি আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। প্রশাসন চেষ্টা করছে, কুনো যাতে জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। সেই লক্ষ্যে চিতার জন্য বিশেষ পরিকল্পনাও নিয়েছে সরকার। সেই পরিকল্পনার পুরোটাই সাজানো হয়েছে 'চিতা মিত্র' বা চিতা বন্ধুদের সামনে রেখে।
'চিতা মিত্র' কারা?
এই 'চিতা মিত্র'রা সরকারের হয়ে জাতীয় উদ্যানের আশপাশের বাসিন্দাদের চিতা সম্পর্কে সচেতন করার দায়িত্ব পেয়েছেন। চিতা এই জাতীয় উদ্যানে আসার ফলে, যে সব পরিবর্তন ঘটতে চলেছে, সেই ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বিশেষ কিছু জানেন না। সেই ব্যাপারে তাঁদের সচেতন করাই 'চিতা মিত্র'দের কাজ। বনকর্তারা স্কুল শিক্ষক, গ্রামপ্রধান, পাটোয়ারি-সহ ৫১টি গ্রামের প্রায় ৪০০ জন 'চিতা মিত্র'কে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
'চিতা মিত্র'দের ভূমিকা কী?
যেদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কুনোতে চিতাদের মুক্তি দিয়েছিলেন, সেদিন তিনি 'চিতা মিত্র'দের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলেন। 'চিতা মিত্র'দের একটি দলকে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে দেখা যায় যে তাঁদের কাজ কী হবে? দলের একজন লোক উত্তর দেয়, 'চিতাদের সুরক্ষা'। তারা ব্যাখ্যা করে যে চিতার যত্ন নেবে। চিতা যাতে জাতীয় উদ্যানের বাইরে বা গ্রামে চলে না-আসে, তা দেখবে। প্রয়োজনে বনকর্তাদের সতর্ক করে দেবে। কারণ, মানুষের হামলায় চিতার মৃত্যু ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন- মুসলিমদের ওপর সমীক্ষার সিদ্ধান্ত মহারাষ্ট্রের শিণ্ডে সরকারের, পিছনে কোন রহস্য!
কী জানিয়েছে প্রশাসন
মোদি জানান যে ২০০৭ সালের দিকে, গুজরাটে এশিয়ার সিংহদের সংরক্ষণের চেষ্টার সময়ও এমন উদ্যোগই নিয়েছিল তাঁর প্রশাসন। সেই সময় মোদী নিজে ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন জানিয়েছে যে কীভাবে একজন প্রাক্তন ডাকাতকেও 'চিতা মিত্র'-র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রমেশ সিকারওয়ার নামে ওই প্রাক্তন ডাকাত চম্বল নদী ও তার আশেপাশের সঙ্গে গভীরভাবে পরিচিত। ১৯৭০ থেকে ১৯৮০-র দশকে এই চম্বলই ছিল রমেশ সিকারওয়ারের আস্তানা। তখন থেকেই তিনি চম্বলের ও কুনো বনাঞ্চলের সঙ্গে পরিচিত।
চিতা হত্যা রুখতে আর কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, চোরাশিকারিদের হাত থেকে চিতাদের নিরাপদে রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ১৯৫২ সালে ভারতে এশীয় চিতা বিলুপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল চোরাশিকার। সেকথা মাথায় রেখে বর্তমান সময়ে চিতাদের রক্ষার জন্য দুটি ড্রোন স্কোয়াডও প্রস্তুত রেখেছে প্রশাসন। সিসিটিভি ক্যামেরা-সহ পাঁচটি ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে। কমপক্ষে ২৪ জন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে সেই ওয়াচ টাওয়ার থেকে বনাঞ্চল পাহারা দেওয়ার জন্য।
কবে জনগণ চিতাগুলো দেখতে দেবে?
মধ্যপ্রদেশের একজন বন আধিকারিক জানিয়েছেন, 'মাসব্যাপী কোয়ারান্টাইনের পর, চিতাদের তাদের বেঁচে থাকার জন্য বৃহত্তর অঞ্চলে ছেড়ে রাখা হবে। যেখানে চিতারা নিজেরাই শিকার করে খেতে পারবে। সেখানে তারা আরও একমাস থাকবে।' অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি ও আবহাওয়ার সঙ্গে এভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারলে, তাদের শেষ পর্যন্ত জাতীয় উদ্যানে ছেড়ে দেওয়া হবে।
কী জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী?
গত ২৫ সেপ্টেম্বর, প্রধানমন্ত্রী তাঁর, 'মন কি বাত' রেডিও অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে শেষ পর্যন্ত নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার জন্য চিতাগুলোর বেশ কয়েক মাস লাগবে। তারা নিজেদের ভারতের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছে কি না, তা একটি টাস্ক ফোর্স মূল্যায়ন করবে। তারাই ঠিক করবে, কবে চিতাগুলোকে জাতীয় উদ্যানে ছেড়ে দেওয়া হবে। আর, তারপরই জাতীয় উদ্যানের পর্যটকরা চিতাগুলোকে দেখতে পাবেন।
Read full story in English