Advertisment

নাস্তানাবুদ! ৬৫-র যুদ্ধে কোন ছকে পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করেছিল ভারতীয় সেনা?

কাকভোরে শুরু হয়েছিল হামলা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Frontline troops of the Indian Army

পাকিস্তানের কাসুর সেক্টরে হামলা চালাচ্ছেন ভারতীয় সেনার প্রথম সারিতে থাকা জওয়ানরা। (আর্কাইভ)

এই দিনে, ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ হামলা চালিয়েছিল। ভোরের আলো ফুটতেই ভারতীয় সেনাবাহিনী তিন দিক থেকে লাহোরের ওপর হামলা শুরু করেছিল। তার দুই দিন পরে, ৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি শহর শিয়ালকোটের ওপরও পাঠানকোট-জম্মু থেকে একযোগে আক্রমণ শুরু হয়। লাহোরে ৬ সেপ্টেম্বরের হামলা জম্মু ও কাশ্মীরে পাকিস্তানি আগ্রাসনের প্রতিশোধ ছিল। এই হামলায় পাকিস্তানি সেনা পুরোপুরি হকচকিয়ে গিয়েছিল। তারা এত সাহসী এবং বড় সামরিক হামলা হতে পারে, এমনটা অনুমান করেনি। ভাবতে পারেনি যে, ভারত জম্মু ও কাশ্মীরে হানাদারির বদলা নেবে।

Advertisment

১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কী ঘটেছিল?
১৯৬৫ সালের এই দিনের প্রথম প্রহরে, ভারতীয় সৈন্যরা তিনটি ফ্রন্টে অগ্রসর হয়ে পাকিস্তানের লাহোর সেক্টরে আক্রমণ শুরু করে। আক্রমণের এই তিনটি ফ্রন্ট ছিল ওয়াঘা-ডোগরাই, খালরা-বুরকি এবং খেমকারন-কাসুর অঞ্চল। যার অর্থ হল লাহোরকে তিনটি বিভিন্ন দিক থেকে ঘিরে ফেলা। পূর্ববর্তী গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক (জিটি) রোডের বিখ্যাত ওয়াঘা সীমান্তের যৌথ চেকপোস্টে কয়েকটি গুলি ছুড়ে ভারতীয় সেনা বাহিনীর জওয়ানরা লাহোরের দিকে রাস্তায় নেমেছিলেন। সামনের সারির ভারতীয় সেনারা লাহোরের উপকণ্ঠে বাটাপুর, ডোগরাই এবং বারকিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন। বর্তমানে, এই গ্রামগুলো বৃহত্তর লাহোর শহরের অংশ।

লাহোরে এই হামলার পিছনে কারণ কী ছিল?
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৬৫ সালের আগস্ট থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে একটি অঘোষিত যুদ্ধ চালাচ্ছিল। পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীরা অপারেশন জিব্রাল্টার-এর অংশ হিসেবে জম্মু-কাশ্মীরে ঢুকে এসেছিল। ১ সেপ্টেম্বর, পাকিস্তানিরা জম্মুর কাছে আখনুর সেক্টরে ট্যাংক এবং বিমানবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে হামলা শুরু করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর লক্ষ্য ছিল আখনুর দখল করে জম্মুর দিকে অগ্রসর হওয়া। এই সেক্টরে পাকিস্তানি আগ্রাসনের জবাব দিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী পঞ্জাবের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে পালটা হামলা শুরু করে। ৫ এবং ৬ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতের কিছু পরে, ভারতীয় সৈন্যরা পঞ্জাবের বেশ কয়েকটি জায়গায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে। তার মধ্যে লাহোর সেক্টরে হামলা পাকিস্তান সেনাকে রীতিমতো অবাক করে দিয়েছিল।

ভারতীয় সেনার গোপন পরিকল্পনা
তৎকালীন পশ্চিমী সেনা কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরবক্স সিং-এর মতে, এই আক্রমণের কৌশলগত ধারণা ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে এই সেক্টরে তার বাহিনী মোতায়েন করতে বাধ্য করা এবং আখনুরে পাকিস্তানি আক্রমণে সহায়তার জন্য যাতে তারা সেনা মোতায়েন করতে না-পারে, সেটা নিশ্চিত করা। আখনুরের ছাম্ব-জৌরিয়ান সেক্টরে পাকিস্তানি বাহিনীকে কার্যত পর্যুদস্ত করার লক্ষ্যেই লাহোরের দিকে হামলা চালানো হয়েছিল। পাশাপাশি, ভারতের পরিকল্পনা ছিল পঞ্জাবের পাকিস্তানি ভূখণ্ডের বড় অংশ দখল করে নেওয়া। যাতে ভবিষ্যতে ভারতের দর কষাকষিতে সুবিধা হয়। লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরবক্স সিং ইছোগিল খাল দখল করে লাহোরের জন্য সমস্যা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কারণ, এই খালের জলের বাধা লাহোরকে ভারতীয় বাহিনীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছিল। ভারতীয় সেনার ১৫ পদাতিক ডিভিশন গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডে ওয়াঘায় পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সহজেই পরাজিত করে। তারপর ওই রাস্তা ধরেই লাহোরের উপকণ্ঠে বাটাপুর পর্যন্ত পৌঁছে যায় ভারতীয় সেনার একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন।

কিন্তু, লাহোরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় ভারতীয় বাহিনীকে কেন পর্যাপ্তভাবে কাজে লাগানো হয়নি?
১৫ পদাতিক ডিভিশন এবং ৪ মাউন্টেন ডিভিশনের দৌলতে বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয় বাহিনীর আক্রমণের প্রাথমিক সাফল্যের পরেও অনেক এলাকায় সাফল্যের গতি বজায় রাখা যায়নি। উচ্চপর্যায়ে দুর্বল সামরিক নেতৃত্বদানের ফলে অনেক সিনিয়র সেনাকর্তাকে কমান্ড থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। পাকিস্তানিরা খেমকারান সেক্টরে পালটা আক্রমণ শুরু করে ভারতীয় সেনার স্থবিরতার সুযোগ নিতে চেয়েছিল। আর, আসাল উতারের ঐতিহাসিক যুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের পর্যুদস্ত না-করা পর্যন্ত তারা একের পর এক অঞ্চল পুনরুদ্ধার করে গিয়েছিল। আসাল উতারের ঐতিহাসিক যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনা প্যাটন ট্যাংককে কাজে লাগিয়েছিল। কিন্তু, সেগুলোও ধ্বংস করে দিয়েছিলেন ভারতীয় সেনার বীর জওয়ানরা।

আরও পড়ুন- যেন মামাবাড়ির আবদার! প্রতীক দিচ্ছিল না কমিশন, কীভাবে আদায় করল তৃণমূলের জোটসঙ্গী?

ভারতীয় সেনার এই দুঃসাহসী অভিযানের ফল কী হয়েছিল?
পাকিস্তান সরকার এবং সামরিক বাহিনী কখনও আশা করেনি যে ভারত পঞ্জাবেও হামলা চালাবে। তারা শুধু জম্মু ও কাশ্মীরে ভারত প্রতিশোধ নেবে বলেই মনে করেছিল। তাই ৬ সেপ্টেম্বর হামলার সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিস্মিত হয়েছিল। ভারতীয় আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী লাহোর সেক্টরে শক্তিবৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়। এর ফলে, পাকিস্তান বিমান বাহিনী আখনুর ফ্রন্ট থেকে তার ফোকাস সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল এবং লাহোরের দিকে অগ্রসর হওয়া ভারতীয় সেনাদের আক্রমণ করার জন্য বিমান নিয়োগ করেছিল। পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং-সহ সামরিক ইতিহাসবিদদের মতে, ভারতীয় সেনা মোটেও লাহোর দখল করতে চায়নি। কারণ, ওই শহর ধরে রাখতে প্রচুর সৈন্যের প্রয়োজন হত। বরং, ভারতীয় সেনার পরিকল্পনা ছিল, লাহোরের শাহদারা এলাকায় রাভি নদীর ওপর সেতুটি ধ্বংস করে দেওয়া এবং লাহোর সেক্টরের সাফল্যকে আরও কাজে লাগাতে লাহোর-ওয়াজিরাবাদ হাইওয়ে বন্ধ করে দেওয়া।

pakistan India army
Advertisment