ভগৎ সিং ১৯০৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর, লায়ালপুর জেলার (বর্তমানে পাকিস্তানের ফয়জলাবাদ) বাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৩১ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার জন সন্ডার্সকে হত্যার অপরাধে তাঁর ফাঁসি হয়েছিল। তাঁর বলিদান এবং বিচারপ্রক্রিয়ার কভারেজ ভগৎ সিংকে দেশের নায়ক করে তুলেছিল। বিশেষ করে উত্তর ভারতে তাঁর সাহসিকতা ও বীরত্ব নিয়ে গান আজও গাওয়া হয়। যদিও অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী দেশের জন্য আত্মবলিদান দিয়েছেন। কিন্তু, জনপ্রিয় শিল্প এবং সাহিত্যে ভগৎ সিং এক অনন্য আসন বরাবরই পেয়ে এসেছেন। বৃহস্পতিবার তাঁর ১১৬তম জন্মবার্ষিকী পালন করল দেশ।
ভগৎ সিং এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা কিষাণ সিং এবং চাচা অজিত সিং, দু'জনেই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন। তার পিতা ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে হামেশাই মতপ্রকাশ করতেন। এমনকী ১৯১০ সালে 'পঞ্জাবকে রাষ্ট্রদ্রোহী সাহিত্যে উদ্বুদ্ধ করার' অভিযোগে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন। তাঁর কাকাকে ১৯০৭ সালে পঞ্জাব উপনিবেশ বিলের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেওয়া এবং আন্দোলনের কারণে মান্দালেতে নির্বাসিত করা হয়েছিল। মুক্তির পর তিনি ইউরোপ এবং তারপর আমেরিকায় চলে যান। সানফ্রান্সিসকোতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত গদর পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন।
বাড়িতে এমন চালচিত্র থাকায় ছোটবেলা থেকেই ভগৎ সিং স্বভাবতই ঔপনিবেশিকতাবাদ-বিরোধী পরিবেশে বেড়ে উঠেছিলেন। এমনকী, এনিয়ে পরিবারের সঙ্গেও তিনি বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তাঁর পিতা চাননি, ভগৎ সিংয়ের ফাঁসি হোক। এজন্য বৃদ্ধ কিষাণ সিং ভারতের ভাইসরয়ের কাছে ভগৎ সিংয়ের প্রাণভিক্ষার আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই জন্য পিতাকে তিরস্কারও করেছিলেন ভগৎ সিং।
বিভিন্ন সিনেমা, যেমন রং দে বাসন্তী (২০০৬) বা দ্য লিজেন্ড অফ ভগৎ সিং (২০০২) এর মত ছবিতে, তাঁর বিপ্লবী কার্যকলাপ এবং পেশীবহুল জাতীয়তাবাদের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, বাস্তবের ভগৎ সিং ছিলেন একজন পণ্ডিত মানুষ। তিনি পিস্তলের চেয়ে কলম বেশি পছন্দ করতেন। ১৯২০-র দশকে, তিনি অমৃতসরের উর্দু এবং পঞ্জাবি উভয় সংবাদপত্রের জন্য লিখতেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সমালোচনা করে পুস্তিকা এবং অন্যান্য 'রাষ্ট্রদ্রোহী' সাহিত্যেও লেখালেখি করেছিলেন।
আরও পড়ুন- পুলিশের বুলেটবৃষ্টি, তার মধ্যেও পতাকা উঁচু করে এগিয়ে গিয়েছিলেন মাতঙ্গিনী
তিনি কীর্তি কিষাণ পার্টির 'জার্নাল কীর্তি' এবং দিল্লি থেকে প্রকাশিত 'বীর অর্জুন' পত্রিকার জন্যও লিখেছেন। লেখক হিসেবে তিনি বলবন্ত, রঞ্জিত এবং বিদ্রোহী-সহ বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। তাঁর জেলের নোটবুকগুলি কেবল তাঁর সামাজিক এবং রাজনৈতিক উদ্বেগই প্রকাশ করেনি। বরং, জেলে থাকাকালীন তিনি যে ধরনের সাহিত্য পাঠ করেছিলেন তা-ও প্রকাশ করে। সেই সব সাহিত্যের মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ, ওয়াজিদ আলি শাহ, মির্জা গালিব এবং ইকবালের কবিতা।