কার্গিল যুদ্ধের সময় কেন নিয়ন্ত্রণরেখা পেরোতে পারে নি বায়ুসেনা?

মে মাসের ১০ তারিখে সেনা নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়, কার্গিলে বায়ুসেনার সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে। এম আই-২৫ এবং এম আই-৩৫ হেলিকপ্টার যুদ্ধবিমান এবং এম আই-১৭ সশস্ত্র হেলিকপ্টারের সাহায্য চাওয়া হয়েছিল।

মে মাসের ১০ তারিখে সেনা নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়, কার্গিলে বায়ুসেনার সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে। এম আই-২৫ এবং এম আই-৩৫ হেলিকপ্টার যুদ্ধবিমান এবং এম আই-১৭ সশস্ত্র হেলিকপ্টারের সাহায্য চাওয়া হয়েছিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
কার্গিল যুদ্ধের সময় কেন নিয়ন্ত্রণরেখা পেরোতে পারে নি বায়ুসেনা?

মঙ্গলবার সকালে ভারতীয় বায়ুসেনা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তানে ঢুকে মানশেরা জেলার বালাকোটে জৈশ-এ-মহম্মদের একটি বড় জঙ্গি ঘাঁটিতে হানা দেয়। ১৯৭১-এর ভারত-পাক যুদ্ধের পর পাকিস্তানের আকাশপথে ভারতের হানা এই প্রথম। ১৯৯৯-এর কার্গিল যুদ্ধের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী ভারতীয় বায়ুসেনাকে নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করা থেকে বিরত রেখেছিলেন। আসুন ফিরে দেখি, কুড়ি বছর আগে কার্গিলে ঠিক কী ঘটেছিল।

Advertisment

অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিতকরণ

১৯৯৯-এর মে মাসের তিন তারিখ। কয়েকজন স্থানীয় মেষপালকের নজরে আসে, কিছু সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী ভারতের দিকের নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে কার্গিল পাহাড়ে ১৩০টি অস্থায়ী শিবিরে ঘাঁটি গেড়েছে। তদন্তে জানা যায়, এই অনুপ্রবেশ সবার অলক্ষ্যে চলছিল ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। প্রাথমিকভাবে ভারতীয় সেনা মনে করেছিল, এই অনুপ্রবেশকারীরা কোনও জিহাদি সংগঠনের সদস্যমাত্র, যাদের কয়েকদিনের মধ্যেই সহজে উৎখাত করা যাবে। খুব দ্রুতই অবশ্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে যায়, বিষয়টি অত সোজা হতে যাচ্ছে না। চ্যালেঞ্জটা কঠিন, এবং সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে।

অপারেশন বিজয়

Advertisment

২৫ মে প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী ঘোষণা করেন, অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতে ভারত সবরকম ব্যবস্থা নেবে, প্রয়োজনে বায়ুসেনার সাহায্যও। পরের দিন অনুপ্রবেশকারীদের উপর আকাশপথে হামলা চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা। "এয়ারপাওয়ার অ্যাট ১৮০০০: দ্য ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স ইন দ্য কার্গিল ওয়ার" শীর্ষক ২০১২ সালের এক গবেষণাপত্রে প্রখ্যাত সমরনীতি বিশেষজ্ঞ এবং আকাশপথে যুদ্ধ বিষয়ে প্রভূত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বেঞ্জামিন ল্যাম্বেথ লিখেছেন, "পুরো বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করার পর ভারতীয় সেনা পূর্ণ শক্তিতে ঝাঁপায়। পাঁচটি ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন, পাঁচটি ব্রিগেড, চুয়াল্লিশটি ব্যাটালিয়নের সেনা পাঠানো হয় কাৰ্গিল সীমান্তে। জড়ো করা হয় মোট কুড়ি হাজার সেনা।" এই অপারেশনের উদ্দেশ্য ছিল অনুপ্রবেশকারীদের হঠিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখায় স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনা।

publive-image কার্গিল, ১৯৯৯

অপারেশন সফেদ সাগর

কার্গিল যুদ্ধের সময় ভারতীয় বায়ুসেনার প্রধান ছিলেন এয়ার চিফ মার্শাল অনিল যশবন্ত টিপনিস। ২০০৬ সালে কার্গিল যুদ্ধের স্মৃতিচারণে বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত টিপনিস বলেছিলেন, মে মাসের ১০ তারিখে সেনা নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়, কার্গিলে বায়ুসেনার সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে। এম আই-২৫ এবং এম আই-৩৫ হেলিকপ্টার যুদ্ধবিমান এবং এম আই-১৭ সশস্ত্র হেলিকপ্টারের সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। বায়ুসেনার তরফে বলা হয়েছিল, যেহেতু 'অপারেশনাল এরিয়া'-র উচ্চতা হেলিকপ্টারগুলির কার্যকরী উড়ান-উচ্চতার থেকে বেশি, তাই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করার আগে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

ল্যাম্বেথ তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, "যেহেতু নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি বায়ুসেনার ব্যবহার উত্তেজনার মাত্রা অনেকটা বাড়িয়ে দিতে পারে, তাই টিপনিস বায়ুসেনার বিমান পাঠানোর আগে 'রাজনৈতিক সবুজ সঙ্কেত' নেওয়ার উপর জোর দিয়েছিলেন। ১৫ মে বায়ুসেনার পদস্থ অফিসারদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন। এই বৈঠকের পর ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, পরিস্থিতির নিরিখে কার্গিলে হেলিকপ্টারের ব্যবহার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হবে।"

publive-image কার্গিলে ব্যবহৃত মিগ-২১

২৩ মে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল বেদপ্রকাশ মালিকের সঙ্গে টিপনিসের বৈঠক হয়। ২০০৬ সালে টিপনিস বলেছিলেন, শেষমেশ নিজের "বিচারবুদ্ধির বিরুদ্ধে" গিয়েই বেদপ্রকাশের প্রস্তাবে রাজি হন। তিনি এবং বেদপ্রকাশ হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে পরের দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।

২৫ মে নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির বৈঠক ডাকেন বাজপেয়ী। জেনারেল মালিক প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে বলেন হেলিকপ্টার ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার কথা। টিপনিসের স্মৃতিচারণ অনুযায়ী, "বাজপেয়ী সব শুনে বলেন, 'বেশ, তাহলে কাল ভোর থেকেই শুরু করা যাক'।" এরপরই উঠে আসে সবচেয়ে জরুরি প্রশ্নটি। টিপনিস জিজ্ঞাসা করেন, "বায়ুসেনা কি প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরোতে পারে?" বাজপেয়ী তৎক্ষণাৎ দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দেন, "না, নিয়ন্ত্রণরেখা পেরোনো যাবে না।"

বায়ুসেনা এরপর শুরু করে 'অপারেশন সফেদ সাগর', যা আগাগোড়াই নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল বাজপেয়ীর নির্দেশিকা মাথায় রেখেই।

indian air force pakistan Atal Bihari Vajpayee