/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/10/ie-Betlehem_woman_dancing.jpg)
১৯৩৬ সালে বেথলেহেমে একটি ঐতিহ্যবাহী নৃত্যে অংশ নিচ্ছেন প্যালেস্তিনীয় মহিলারা। (ছবি সৌ: উইকিমিডিয়া কমন্স)
ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘাতের সর্বশেষ রক্তাক্ত অধ্যায়ে মিডিয়া কভারেজের একটি বৈশিষ্ট্য হল প্যালেস্তিনীয়দের পরিচয়ের অতি সরলীকরণ। সাধারণভাবে, ভারত-সহ বিভিন্ন জায়গায় প্যালেস্তিনীয়দের মুসলিম পরিচয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। যারা ইহুদি বা ইজরায়েলিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কিন্তু, এই পরিচয় প্যালেস্তিনীয়দের সমৃদ্ধ এবং জটিল ইতিহাসের পক্ষে ক্ষতিকারক। কারণ, তা ইজরায়েল এবং প্যালেস্তিনীয়দের কয়েক দশকের পুরোনো সংঘাতকে সম্পূর্ণ ধর্মীয় যুদ্ধে পরিণত করে তুলছে। আর, সেই কারণেই আরও বেশি করে জানা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, প্যালেস্তিনীয় কারা?
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/10/ie-Sykes-Picot.jpg)
'প্যালেস্তাইন' শব্দটি প্রথম কখন ব্যবহৃত হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে কী বোঝায়?
ফিনিসিয়া (প্রাথমিকভাবে আধুনিক লেবানন) এবং মিশরের মধ্যবর্তী উপকূলীয় ভূমিকে বর্ণনা করতে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে প্রাচীন গ্রিক ঐতিহাসিক এবং ভূগোলবিদ হেরোডোটাস প্যালেস্তাইন শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। এটি 'ফিলিস্টিয়া' থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। যে নামটি গ্রিক লেখকরা দক্ষিণ-পশ্চিম লেভান্টের অঞ্চলকে দিয়েছিলেন। প্রধানত গাজা, অ্যাশকেলন, অ্যাশডোড, একরন এবং গাথ (বর্তমান ইজরায়েল বা প্যালেস্তাইন) শহরগুলোর চারপাশের অঞ্চল। লেভান্ট হল পূর্ব ভূমধ্যসাগরের চারপাশের অঞ্চলের জন্য ঐতিহাসিক-ভৌগলিক শব্দ। যা আফ্রিকা এবং ইউরেশিয়ার মধ্যে স্থল সেতুর প্রতিনিধিত্ব করে।
প্রথম থেকেই, প্যালেস্তাইন একটি স্থানের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তারপরে, জাতি বা ধর্ম নির্বিশেষে এই অঞ্চলে বসবাসকারী লোকদের জন্য একটি নাম হিসেবে তা ব্যবহৃত হতে শুরু করে। সুতরাং, শব্দটি ব্যবহার করার সময় রোমান নথি খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের মধ্যে পার্থক্য করেনি। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে লেভান্টে আরব বিজয়ের পর, প্যালেস্তাইন শব্দটির সরকারি ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। এটি বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। যাইহোক, সরকারি না-হলেও, স্থানীয়ভাবে প্যালেস্তাইন শব্দটার ব্যবহার বজায় ছিল। আরবিতে তাকে 'ফিলাস্তিন' বলা হত। প্রকৃতপক্ষে, হিন্দিতে প্যালেস্তাইনকে বলে 'ফিলিস্তিন'।
যেহেতু এই অঞ্চলটি ইসলামিকরণের মধ্যে দিয়ে গেছে এবং আরবি সাংস্কৃতিক প্রভাবের বিস্তার দেখেছে, বেশ কয়েকটি পরিচয় এর তৈরি হয়েছে। তার 'প্যালেস্তাইন আইডেন্টিটি: দ্য কনস্ট্রাকশন অফ মডার্ন ন্যাশনাল কনসাসনেস' (১৯৯৭)- বইয়ে ঐতিহাসিক রশিদ খালিদি লিখেছেন, 'প্যালেস্তিনীয়দের জন্য আইডেন্টিটি ইসলাম বা খ্রিস্টান যাই হোক না-কেন অন্যান্য অনেক স্তরে তা পরিচয়ের অনুভূতির সঙ্গে মিশে আছে। অটোমান বা আরব, স্থানীয় বা সর্বজনীন, স্থানীয় পরিবার এবং উপজাতীয়- বিভিন্ন পরিচয়ের অনুভূতি লুকিয়ে আছে এই প্যালেস্তাইন শব্দের মধ্যে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমানদের পরাজয় এবং ১৯২২ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্য ভেঙে ফেলার পর, অটোমান সুলতানের অঞ্চলগুলি, যার মধ্যে প্যালেস্তাইনও ছিল (আধুনিক তুরস্ক, সিরিয়া এবং আরব উপদ্বীপ এবং উত্তর আফ্রিকার কিছু অংশও ছিল)- ব্রিটিশ এবং ফরাসিরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। প্যালেস্তাইনে ব্রিটিশ শাসন এর ভৌগোলিক ব্যাপ্তি নির্ধারণ করেছিল। এই শাসনই শেষ পর্যন্ত ১৯৪৭ সালে ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইন- এই দুই অঞ্চলে গোটা প্যালেস্তাইনকে ভাগ করে। প্যালেস্তিনীয়দের কল্পনায়, প্যালেস্তাইন হল সেই ভূমি, যার পূর্বে সমুদ্র (পূর্ব ভূমধ্যসাগর) এবং জর্ডান নদীর মধ্যবর্তী অংশ। এই জর্ডান নদী উত্তরে গোলান হাইটস থেকে দক্ষিণে গ্যালিলি সাগর হয়ে মৃত সাগর পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/10/ie-ch1313000.jpg)
তাহলে আজকের প্যালেস্তিনীয়রা কারা?
আজ, প্যালেস্তিনীয় বলতে প্যালেস্তাইন দেশে বসবাসকারী (পশ্চিম তীর, গাজা এবং পূর্ব জেরুজালেম) এবং পূর্ববর্তী ব্রিটিশ শাসনকালের আঞ্চলিক সীমানা থেকে আসা শরণার্থীদের বোঝায়। যাঁরা অন্যত্র বসতি স্থাপন করেছে। কিছু লোক যারা বর্তমানে ইজরায়েলি অঞ্চলে বসবাস করেন, তাঁরাও নিজেদের প্যালেস্তিনীয় বলে পরিচয় দিতে পারেন। প্যালেস্তাইনের জাতীয় সনদ ১৯৬৮, আদর্শগত দলিল যা আধুনিক প্যালেস্তাইন জাতীয়তাবাদের ভিত্তি গঠন করেছে। প্যালেস্তিনীয়দের আরব পরিচয়ের ওপর জোর দিয়েছে।
এই জাতীয় সনদের পঞ্চম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'প্যালেস্তিনীয়রা হল সেইসব আরব নাগরিক যাঁরা, ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত, প্যালেস্তাইন থেকে উচ্ছেদই হোক বা সেখানেই থাকুক না-কেন, সাধারণত প্যালেস্তাইনেই বসবাস করত। সেই তারিখের পর যে কোনও প্যালেস্তিনীয় পিতার সন্তানও স্বাভাবিক ভাবেই একজন প্যালেস্তিনীয়। প্যালেস্তাইনের জাতীয় সনদের ৬ অনুচ্ছেদ বলে, 'যে ইহুদিরা ইহুদিবাদী আক্রমণের আগে পর্যন্ত প্যালেস্তাইনে বসবাস করছিলেন, তাঁরা প্যালেস্তাইনি বলেই বিবেচিত হবেন।'
যাইহোক, ১৯৪৮ সালের পর খুব কম স্থানীয় ইহুদিই ইজরায়েলের বদলে প্যালেস্তাইনে থেকেছেন। বর্তমানে প্যালেস্তাইন সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলমান থাকেন। সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি দ্বারা প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিম তীরের জনসংখ্যার ৮০-৮৫ শতাংশ এবং গাজা উপত্যকার ৯৯ শতাংশ জনগণ মুসলিম। ইহুদিরা প্যালেস্তাইন অঞ্চলের বৃহত্তম ধর্মীয় সংখ্যালঘু। বেশিরভাগ ইহুদি বসতি পশ্চিম তীরে অধিকৃত অঞ্চলে। তাঁদের সংখ্যা ১২-১৪ শতাংশ। প্যালেস্তিনীয় খ্রিস্টানরা সংখ্যায় ২.৫ শতাংশ। পশ্চিম তীর এবং গাজা, উভয়ই সমৃদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের আবাসস্থল যাঁরা এই অঞ্চলে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বসবাস করছেন।
আরও পড়ুন-গাজায় সাদা ফসফরাস ব্যবহার করছে ইসরাইল? জানেন কী এই অস্ত্র?