প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জার্মানিতে কাটালেন দু'দিন। গ্রুপ অফ সেভেন বা জি সেভেনের সম্মেলন হয়ে গেল জার্মানির স্লস এলমাও-তে। সেখানেই অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিল ভারত। কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, ব্রিটেন এবং আমেরিকা-- এই সাত দেশের গোষ্ঠী হল জি সাত। ভারত ছাড়াও এ বারের আমন্ত্রিত দেশগুলি হল-- আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, সেনেগাল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর কিন্তু চড়া আলো ছিল। সেই আলোর উজ্জ্বলতা আরও বাড়ল যখন সোমবার তাঁর দিকে খানিকটা হেঁটে এসে পিঠে হাত দিয়ে ডেকে করমর্দন করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সেই ছবি ভাইরালও হয়ে গিয়েছে তার পর। সেটাই তো স্বাভাবিক, তাই না! সারা পৃথিবীতে এখন নিদারুণ মুদ্রাস্ফীতির মরশুম। তাকে নিয়ন্ত্রণে উঠেছে নাভিশ্বাস। যার কারণ কিছুটা কোভিড আবার অনেকটাই রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ। ফলে, জি সেভেনের এই সম্মলনটি এই কঠিন সময়ে ছিল অতি-তাৎপর্যপূর্ণ। জি সাতের প্রতি দেশই রাশিয়া বিরোধী। ফলে রাশিয়াকে আক্রমণে মিলে সুর মেরা তুমহারা হয়ে উঠেছিল এখানে।
দাম বাড়িয়ে তেল বিক্রি করতে পারে না রাশিয়া। এ নিয়ে কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সামিটে। রুশ তেলের দাম সে ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। জার্মানি তাদের তেলের সিংহ ভাগই আমদানি করে নানা দেশ থেকে। ২০২১-এ রাশিয়া থেকে তারা কিনেছিল মোট আমদানিকৃত তেলের ৩৪.১ শতাংশ। আমেরিকা থেকে এনেছিল মাত্র ১২.৫ শতাংশ। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ তা বলে অবশ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনও রাখঢাক করে কথা বলেননি। ফ্রন্টফুটে খেলেছেন। বলে দিয়েছেন, (রাশিয়ার জন্য) একটি রাস্তাই খোলা রয়েছে, ইউক্রেন নিয়ে পুতিনের যে পরিকল্পনা রয়েছে তার অসাফল্য।
জি সেভেনের নেতারা মিলিত ভাবে একটি বিবৃতিও দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, আমরা সম-মতের দেশগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম যাতে তারা আমাদের সঙ্গে (রুশ বিরোধিতায়) হাতে হাত মেলায়। এবং এখানেই রয়েছে ভারতের অবস্থানের জটিলতা। কারণ, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা কারণে ভারত তো গর্জন করতে মোটেই পারবে না। সস্তায় রুশ তেলও তো কিনেছে ভারত, যখন ইউরোপ আমেরিকা রুশ তেলের বিরুদ্ধে খাঁড়া তুলেছে।
আরও পড়ুন- দাঙ্গা নিয়ে সুপ্রিম রায় ‘নৈতিক জয়’, বাড়িয়েছে মনোবল, ধারণা বিজেপি নেতৃত্বের
ফলে জি সাতের দেশগুলির রুশ বিরোধী সরগমে পুরোপুরি গলা মেলানো ভারতের পক্ষে হয়তো সম্ভব হয়নি। তবে কূটনীতি এক অজব বস্তু, সেখানে নীতি-কথার কোনও জায়গাই নেই। এবং আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যে এখন স্বাভাবিক, বা তার চেয়েও এগিয়ে-- উষ্ণ, সেটা বাইডনের এগিয়ে এসে মোদীর সঙ্গে হ্যান্ডশেকটাই প্রমাণ করে দিচ্ছে, বলছেন অনেকেই। যে হ্যান্ডশেক একেবারেই সাজানো বলে কারওর মনে হচ্ছে না, বরং খুবই হার্দিক এবং সহজ-- ছবিতেই তা জ্বলজ্যান্ত।
যোগে জেলেনস্কি
জি সেভেন হল প্রথম সারির শিল্পোন্নত দেশগুলির একটি ফোরাম। কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, জাপান, ব্রিটেন এবং আমেরিকা, জি সেভেন ভুক্ত দেশগুলির নাম থেকেই সেটা স্পষ্ট। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা এর বাৎসরিক বৈঠকে সব সময়তেই উপস্থিত থাকেন। এবার জার্মানি এই সম্মেলনের আয়োজক। আমন্ত্রিত দেশগুলির নাম শুরুতেই বলেছি। সেই সঙ্গে বলতে হবে, সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে যোগ দিয়েছিলেন সম্মেলনে। তিনি অত্যাধুনিক মিসাইল সিস্টেম চেয়েছেন শক্তিধরদের থেকে।
যে দাবি তিনি নানা ভাবে এর আগেও জানিয়েছেন। সহযোগিতাও যে পাচ্ছেন না তা বলা যাবে না। রুশ হামলা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে সরব হয়েছেন জেলেনস্কি। বলেছেন মিসাইল হামলার কথা। কিন্তু তার পর… এই সব কথাবার্তার ২৪ ঘণ্টা কেটেছে কি কাটেনি, ইউক্রেনের ক্রেমেনচোকের শপিংমলে বড়সড় রুশ হামলার খবর এসে হাজির হয়েছে। ১৮ জনের মৃত্যুসংবাদ মিলেছে। অনেকে নিখোঁজ, ফলে মৃত্যু বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপের দেশগুলি প্রথম থেকেই জোটবদ্ধ। আমেরিকা, কানাডার মতো মহাশক্তিধররা তীব্র আক্রমণাত্মক। তাদের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কড়া। কিন্তু তাতে অর্থনীতির উপর মিসাইল হামলা হচ্ছে একের পর এক। আসছে শীতে ইউরোপের বড় অংশে জ্বালানির ছবিটা কী হবে, তা নিয়ে চিন্তার সুনামি তৈরি হয়েছে। ফলে মধ্যবর্তী কোনও একটি পন্থা বার করে 'সাপ মরল লাঠিও ভাঙল না', গোঁ ছেড়ে সেই পথের সন্ধান এখন জরুরি, বলছেন বিশ্লেষকদের অনেকেই।
Read full story in English