Advertisment

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ব্যালান্স শিট- কোথা থেকে অর্থ আসে, কোথায় খরচ হয়

ভারত হু-এর সদস্য হয় ১৯৪৮ সালের ১২ জানুয়ারি। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার হু আঞ্চলিক কমিটির প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দফতরে, ১৯৪৮ সালের ৪-৫ অক্টোবর। উদ্বোধক ছিলেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
WHO, Coronavirus

সদস্য রাষ্ট্রগুলির দেয় মোট অর্থের ১ শতাংশ যায় ভারতের কাছ থেকে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অর্থসাহায্য বন্ধ করে দেবার কথা বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে হু। বিশ্বে অতিমারীতে আক্রান্ত প্রায় ২০ লক্ষ, মৃত একলক্ষের বেশি, মোট সংক্রমিতের সংখ্যা আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি (৬ লক্ষের উপর) এবং মৃত্যু ২৬০০০-এর বেশি, সে সময়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প।

Advertisment

ট্রাম্পের ঘোষণা নিয়ে ভারত সাবধানী। তারা এ ব্যাপারে কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া জানায়নি, দেশের মধ্যে সংক্রমণ রোধ করা ও মহামারী মোকাবিলায় লক্ষ্য স্থির রাখা হয়েছে।

মুখ ঢাকা বাধ্যতামূলক, থুথু ফেলা নিষিদ্ধ- ভারতের নয়া বিধিসমূহ

 হু-কে অর্থ জোগায় কারা?

বেশ কিছু দেশ, মানব-হিতৈষী সংস্থা, রাষ্ট্র সংঘ প্রমুখ হুয়ের অর্থের জোগানদার। হুয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আমেরিকার মত সদস্য রাষ্ট্রগুলির মোট অর্থের ৩৫.৪১ শতাংশ জোগান দেয়, পরিকল্পিত অনুদানের পরিমাণ ২৫.৬৬ শতাংশ, মানব হিতৈষী সংস্থাগুলির কাছ থেকে আসে ৯.৩৩ শতাংশ, রাষ্ট্রসংঘের সংস্থাগুলি দেয় ৮.১ শতাংশ এবং বাকিটা আসে বিভি্ন্ন মাধ্যম থেকেও।

WHO, Coronavirus অর্থের উৎস

হুয়ের ভাঁড়ারের প্রায় ১৫ শতাংশ আসে আমেরিকা থেকে এবং প্রায় ৩১ শতাংশ আসে সদস্য রাষ্ট্রগুলি থেকে, দুটি ক্ষেত্রেই বৃহদাংশটাই। সদস্য রাষ্ট্রগুলির দেয় মোট অর্থের ১ শতাংশ দেয় ভারত। দেশগুলি নিজেরাই স্থির করে তারা কত পরিমাণ অর্থ দেবে, এমনি অর্থ দেওয়া বাধ্যতামূলকও নয়।

তাদের মোট অর্থের ১৫ শতাংশ ক্ষতি মানে হুয়ের সারা বিশ্বের কাজকর্মেই তার উপর প্রভাব পড়বে। তবে অন্য রাষ্ট্রগুলি যদি আমেরিকার পথে না হাঁটে তবে হুয়ের কাজে ব্যাপক ক্ষতি হবে- এমনটাও নয়।

 এই অর্থ নিয়ে হু কী করে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। যেমন ২০১৮-১৯ সালে এই অর্থের মোট ১৯.৩৬ শতাংশ (প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার) ব্যয় হয়েছিল পোলিও দূরীকরণে, ৮.৭৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছিল প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি পরিষেবা যাতে সকলের কাছে পৌঁছয় সে ব্যাপারে দেখবার জন্য, ৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছিল প্রতিরোধযোগ্য অসুখের ভ্যাকসিনের জন্য এবং ৪.৩৬ শতাংশ ব্যয় হয়েছিল মহামারী প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য।

publive-image তথ্যসূত্র- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

publive-image তথ্যসূত্র- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

আফ্রিকার দেশগুলি হুয়ের বিভি্ন্ন প্রকল্পে পেয়েছিল প্রায় ১.৬ বিলিয়ন ডলার, ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়া পেয়েছিল ৩৭৫ মিলিয়ন ডলার। ভারত হুয়ের দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সদস্য। আমেরিকা পেয়েছিল ৬২.২ মিলিয়ন ডলার। আমেরিকা থেকেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ আসে এবং সেখানেই সবচেয়ে কম খরচ হয়ে থাকে।

খরচের ব্যাপারে হু কীভাবে অগ্রাধিকার স্থির করে?

বাৎসরিক কর্মসূচি পাস হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিদ্ধান্তগ্রহণকারী কমিটি ওয়ার্ল়ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে। সেখানে সমস্ত দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে একজিকিউটিভ বোর্ডের তৈরি করা নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

এই অ্যাসেম্বলির মূল কাজ হল বছরে একবার জেনিভায় মিলিত হয়ে হুয়ের পলিসি স্থির করা, ডিরেক্টর জেনারেল নিয়োগ করা, আর্থিক নীতি পরীক্ষা করা এবং প্রস্তাবিত কর্মসূচির বাজেট পর্যালোচনা ও অনুমোদন করা।

খাবার থেকে কি করোনা সংক্রমণ হতে পারে?

কোন দেশ কত পাবে তা স্থির হয় দেশগুলির পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে। হুয়ের ত্রয়োদশ সাধারণ কর্মসূচি (২০১৯-২৩)-এ বলা রয়েছে, “বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ, বিশেষ করে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের অসম উন্নয়ন একটি সাধারণ বিপদ।”

 ভারতের সঙ্গে হুয়ের সম্পর্ক কীরকম?

ভারত হু-এর সদস্য হয় ১৯৪৮ সালের ১২ জানুয়ারি। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার হু আঞ্চলিক কমিটির প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দফতরে, ১৯৪৮ সালের ৪-৫ অক্টোবর। উদ্বোধক ছিলেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু।

স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও হুয়ের ভারতীয় দফতর মিলে হু ইন্ডিয়া কান্ট্রি কোঅপরেশন স্ট্র্যাটেজি (CCS) ২০১৯-২০২৩ তৈরি করেছে। হুয়ের বিবৃতি অনুসারে, “সিসিএস কেবলমাত্র গত বেশ কিছু বছর ধরে হু ভারতের যেসব কাজে সাহায্য করেছে তার জন্যই তৈরি হয়নি, একই সঙ্গে জটিলতর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় হাত বাড়ানোর জন্য তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অসংক্রামক রোগ, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স (AMR)নিয়ন্ত্রণ, বায়ুদূষণ কমানো, এবং মানসিক অসুস্থতার প্রতিরোধ ও চিকিৎসা। স্বাস্থ্য ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকারি ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে মিলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রকের নির্দেশনায় কাজ করবে সংস্থা এবং একইসঙ্গে রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে মিলেও কাজ চালাবে।”

সিসিএসের অগ্রাধিকার হল সকলের জন্য স্বাস্থ্যের বিষয়টি ত্বরান্বিত করা, স্বাস্থ্য নির্ধারণকারী বিষয়গুলির উপর নজর দেওয়া, স্বাস্থ্যের জরুরি পরিস্থিতিতে জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ভারতের আন্তর্জাতিক নেতৃত্বকে অগ্রবর্তী করা।

কার্যক্ষেত্রে হু টিকাকরণ কর্মসূচির অন্যতম সহায়ক, টিবি ও কুষ্ঠ এবং কালাজ্বরের মত অবহেলিত রোগের মোকাবিলা এবং সমস্ত রাজ্যে পুষ্টি কর্মসূচিতে সাহায্য করা। কোনও কর্মসূচির সাফল্যের কৃতিত্ব সেই দেশেরই, হু-এর ভূমিকা সাহায্যকারীর। সে কারণেই হুয়ের দেশীয় দফতর প্রায় কখনওই সরকারের সমালোচনা করে না, এমনকি সে সরকার হুয়ের প্রস্তাবিত উপদেশ না মানলেও। এরকমটাই দেখা গিয়েছে কোভিড ১৯এর ক্ষেত্রে, হু যেখানে বারবার আরও বেশি পরীক্ষার কথা বলেছে, সরকার তাতে কান দেয়নি।

 কোভিড ১৯ মোকাবিলায় হু এবং ভারত একযোগে কীভাবে কাজ করেছে?

ভারতে হুয়ের দেশ প্রতিনিধি ডক্টর হেঙ্ক বেকেডাম বলেন, “ভারত কোভিড ১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক গুরত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই মুহূর্তে একে রোধ করতে হবে। কোভিড ১৯-এর প্রস্তুতি ও প্রতিরোধে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে হু কাজ করে চলেছে, এর মধ্যে রয়েছে নজরদারি ও সংস্রব চিহ্নিতকরণ, ল্যাবরেটরি ও গবেষণা প্রোটোকল, সংক্রমণের ঝুঁকি, হাসপাতালের প্রস্তুতি, সক্রমণ প্রতিরোধের প্রশিক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ ও ক্লাস্টার কনটেনমেন্ট পরিকল্পনা।”

ভারত অবশ্য মূলত নিজস্ব কৌশল তৈরি করেছে, টেস্টের ব্যাপারে অনাগ্রহ থেকে চিনে যাতায়াত বন্ধ করার ব্যাপারে তাদের উদ্যোগহীনতা এবং তারপর লকডাউন। ভারতে লকডাউন যখন লাগু হয়েছে তখন সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৪১ (২২ মার্চ, ৭৫ জেলা), গণপর্যায়ে পরীক্ষা করবার ব্যাপারে তাদের অনাগ্রহ ছিল আমেরিকারই মত। মাস্ক পরাকেও ভারত সার্বজনীন ঘোষণা করেছে, অন্যদিকে হুয়ের বক্তব্য মাস্ক যিনি পরছেন, তাঁর থেকে এর সুবিধা বেশি হবে অন্যদের এবং মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজন নেই।

বিভিন্ন দেশ থেকে কিসের ভিত্তিতে হুয়ের সমালোচনা করা হচ্ছে?

সমস্ত দেশ যখন প্রথম পর্যায়ে বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করছে, তখন হু চিনের সঙ্গে যাতায়াত ও বাণিজ্যে বিধিনিষেধ সম্পর্কিত অবস্থান নিতে গড়িমসি করেছে।

৩০ জানুয়ারি হুয়ের মহাসচিব এর বিরোধিতা করেন। ওই দিনই আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধি (২০০৫) আপৎকালীন কমিটি দেশগুলিকে প্রস্তুত থাকতে বললেও একইসঙ্গে বলে, “বর্তমান তথ্যের ভিত্তিতে এই সংস্থা কোনও দেশে ভ্রমণ ও বাণিজ্য বন্ধ করার সুপারিশ করছে না।”

ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের বরিষ্ঠ আধিকারিকদের বক্তব্য অনুযায়ী, চিনে জানুয়ারি মাসে যখন সংখ্যা ক্রমবর্ধমান, সে সময়ে দিল্লিতে এক বৈঠকে হুয়ের আধিকারিকরা সরকারের উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ হচ্ছে না।” একটি সূত্র বলেছেন, “উহানে যখন সংক্রমণ বাড়তে তাকে তখন আমরা জিজ্ঞাসা করি, কী হচ্ছে! হয় কোনও একটা প্রদেশের একটামাত্র বাজারের চেয়ে উৎসের সংখ্যা বেশি অথবা মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ হচ্ছে।”

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus WHO
Advertisment