মঙ্গলবার (২৮মার্চ), প্রাক্তন সাংসদ আতিক আহমেদ এবং অন্য দু'জনকে বিএসপি বিধায়ক রাজু পালের হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী উমেশ পালের ২০০৭ সালের অপহরণ মামলায় প্রয়াগরাজ আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছে। আতিকের ভাই আশরফ-সহ সাত জনকে এই মামলায় বেকসুর খালাস ঘোষণা করা হয়েছে। আদালত আতিক, দীনেশ পাসি এবং খান শওকত হানিফকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এমনটাই জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী সুশীল বৈশ। এর আগে প্রয়াগরাজ পুলিশ তাকে শুনানির জন্য উত্তরপ্রদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। সেই সময় সবরমতী জেলের বাইরে আতিক সাংবাদিকদের বলেন, 'এরা কী করতে যাচ্ছে, আমি জানি। এরা আমাকে খুন করতে চায়।'
এই মামলায় উমেশ পালের অপহরণ-কাণ্ড আতিক আহমেদ জড়িত। উমেশ পাল ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রয়াগরাজে তাঁর দুই পুলিশ প্রহরী-সহ গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। উমেশ ২০০৫ সালে রাজু পাল হত্যা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী। ওই রাজু পাল হত্যা মামলায় আতিক আহমেদ ছিল প্রধান অভিযুক্ত। উমেশের স্ত্রী জয়ার অভিযোগ, ২০০৬ সালে প্রাক্তন সাংসদ আতিক আহমেদ ও তার সহযোগীরা তাঁর স্বামীকে অপহরণ করে এবং তাঁকে আদালতে আতিকদের পক্ষে বিবৃতি দিতে বাধ্য করে। গত মাসে উমেশ হত্যার পর, আতিক আহমেদ ও তার স্ত্রী সহিস্তা পারভিন, তাদের দুই ছেলে, তার ছোট ভাই খালিদ আজিম ওরফে আশরফ এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের হয়েছিল।
কে আতিক আহমেদ?
আতিক আহমেদ একজন প্রাক্তন সাংসদ এবং পাঁচবারের বিধায়ক। ২০১৬ সালে প্রয়াগরাজের একটি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফ্যাকাল্টি সদস্যদের ওপর হামলার অভিযোগে রবিবার পর্যন্ত সবরমতি জেলে ছিল।
তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। সেই সময় নির্দল প্রার্থী হিসেবে এলাহাবাদ পশ্চিম থেকে বিধায়ক আসন জিতেছিলেন। পরবর্তী দুটি বিধানসভা নির্বাচনে তার আসন ধরে রাখার পর, আহমেদ সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-তে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে টানা চতুর্থবার এলাহাবাদ পশ্চিমে জয়লাভ করেন। তিন বছর পরে তিনি আপনা দলে যোগ দেন। ২০০২ সালে ফের আসনটিতে জয়ী হন। পরের বছর তিনি সমাজবাদী পার্টিতে ফিরে আসেন। আর, ২০০৪ সালে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জেতা ফুলপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ হন।
রাজু পাল হত্যা মামলায় নাম জড়ানোয় তাঁর রাজনৈতিক জীবনে প্রথম বড় ধাক্কা লাগে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এলাহাবাদ পশ্চিম আসনের জন্য ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত বিধানসভা উপনির্বাচনে রাজু পাল পরাজিত করেছিলেন আতিক আহমেদের ভাই আশরফকে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, 'এটি ছিল আহমেদ পরিবারের জন্য একটি বড় ধাক্কা। কারণ, ২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে আতিক ফুলপুর থেকে লোকসভা আসনে জয়ী হওয়ার পর এলাহাবাদ পশ্চিম আসনটি খালি হয়েছিল।'
২০০৫ সালের ২৫ জানুয়ারি, রাজু তাঁর সহযোগী সন্দীপ যাদব এবং দেবী লালের সঙ্গে একটি হাসপাতাল থেকে ফেরার সময় তাঁর বাড়ির কাছে গুলিবিদ্ধ হন। পরবর্তীকালে, রাজুর স্ত্রী আতিক, আশরফ এবং সাত জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে দাঙ্গা, খুনের চেষ্টা, হত্যা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেন।
আরও পড়ুন- ভারত থেকে কিছু বাঘ কম্বোডিয়ায় পাঠানো হতে পারে, কেন এমন সিদ্ধান্ত?
রাজনৈতিক ও পুলিশি চাপের কারণে, আতিক আহমেদ অবশেষে আত্মসমর্পণ করেন ২০০৮ সালে। এরপর ২০১২ সালে তিনি মুক্তি পান। তারপর ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, কিন্তু হেরে যান। এই সময়ে তার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। কারণ, আতিক আহমেদের অপরাধমূলক রেকর্ডের জন্য অখিলেশ যাদব তাঁর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেন।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে, প্রয়াগরাজের স্যাম হিগিনবটম ইউনিভার্সিটি অফ এগ্রিকালচার, টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস-এর স্টাফ সদস্যদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগে পুলিশ আতিককে গ্রেফতার করে। কারাগারে থাকা সত্ত্বেও, আতিক আহমেদ ২০১৯ সালে বারাণসী লোকসভা আসনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আর ৮৫৫ ভোট পেয়েছিলেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬০ বছর বয়সি এই রাজনীতিকের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, অপরাধমূলক হুমকি এবং হামলার ৭০টিরও বেশি মামলা রয়েছে।