দুষ্যন্ত চৌটালার বয়স যখন ১১ তখন মারা যান তাঁর প্রপিতামহ, হরিয়ানার প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী ও দুবারের মুখ্যমন্ত্রী এবং সম্ভবত রাজ্যের জাঠ নেতাদের মধ্যে যাঁর ছায়া রাজনীতিতে দীর্ঘতম, সেই চৌধরি দেবী লাল।
পরিবারের লোকজন বলাবলি করেন, ৬ ফিট ৪ ইঞ্চি উচ্চতা দুষ্যন্ত পেয়েছেন তাঁর প্রপিতামহের কাছ থেকে। সিরসার উমরাবাল গ্রামের কৃষক প্রীতম চাহার বললেন, আমাদের বুজুর্গরা ওঁদের পরিবারে দুষ্যন্তের মধ্যে দেবীলালের ছায়া দেখতে পান।
দুষ্যন্ত বলেন, শিক্ষার গুরুত্ব তিনি বুঝতে শিখেছিলেন দেবীলালের কাছ থেকে। হিমাচল প্রদেশের সানাওয়ারের দুষ্যন্তের মনে পড়ে প্রতিবার ছুটিতে বাড়ি আসার পর তাঁর প্রপিতামহ তাঁকে একটাই কথা শুধাতেন, "কতটা শিখলে?"
দুষ্যন্ত বিজনেস ম্যানেজমেন্টের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে এবং তার পর আইন পড়েছেন ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি থেকে।
২০০৪ সালে তাঁর পিতামহ ওম প্রকাশ চৌটালার ভোট প্রচারের সময়ে তাঁর সঙ্গে প্রথম কথা হয়েছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের। সাদা কুর্তা-পাজামা পরিহিত মোটাসোটা চেহারার যুবক তিনি তখন, একের পর এক পর গ্রামে তাঁকে দুধের গ্লাস দিয়ে অভ্যর্থনা করা হচ্ছিল, আর তিনি শুনে যাচ্ছিলেন তাঁর ঠাকুর্দা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে চলেছেন।
সেই চৌটালাই দুষ্যন্তকে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে পার্টি থেকে বহিষ্কার করে দেবেন, যখন দেবীলালের স্মৃতিতে আয়োজিত এক সমাবেশে এক দল জনতাকে তিনি শুনবে দুষ্যন্তের জয়ধ্বনি করে স্লোগান দিতে, এবং সে ব্যাপারে আর কোনও রকম কর্ণপাত করতে রাজি হবেন না তিনি।
২০১৪ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে লোকসভার সাংসদ হবার চার বছর পরে এল দল থেকে বহিষ্কারের ঘটনা। এ সুবাদে দুষ্যন্তের নাম উঠল লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে। তিনি হারিয়ে দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভজন লালের এক পুত্র কুলদীপ বিষ্ণোইকে।
জেবিটি শিক্ষক কেলেংকারিতে বাবা অজয় চৌটালার জেল বাসের সময়ে দুষ্যন্ত নিজের সময় ভাগ করে দিতে থাকেন দিল্লি ও হরিয়ানার গ্রামাঞ্চলে। ট্র্যাক্টর চালিয়ে সাংসদে গিয়ে সাড়া ফেলে দেন তিনি। ২১ অক্টোবরের ভোটে তিনি বুথেও গিয়েছিলেন এই ট্র্যাক্টর চেপেই।
সংসদে প্রথম বছরেই ২০টির বেশি বিতর্কে অংশ নিয়ে এবং দুটি বিল পেশ করে নজর কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। সংসদে তাঁর উপস্থিতির হার ছিল ৮৯ শতাংশ। তাঁর বন্ধুরা বলেন, অনুপস্থিত সাসংদদের নিয়ে তিনি বেজায় বিরক্ত থাকেন।
জানুয়ারি মাসের উপনির্বাচনে জিন্দ থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর ছোট ভাই দিগ্বিজয়। মজা করে দাদাকে তিনি ডাকেন 'বুডঢা' বলে। কেন? কারণ দুষ্যন্তের প্রিয় হিরো হলেন ধর্মেন্দ্র এবং প্রিয় গান হল শোলের 'ইয়ে দোস্তি হাম নেহি ছোড়েঙ্গে'।
সাংসদ দুষ্যন্তের নিজের বাবার প্রতিষ্ঠিত লোকদলের ছাত্র সংগঠন আইএনএসও নিয়েও আগ্রহ প্রবল। রাজ্যের রাজধানী চণ্ডীগড়ে ছাত্র রাজনীতিতে তিনি একই সঙ্গে কিং ও কিংমেকার নামে পরিচিত।
হরিয়ানভি ও ইংরেজি, দুই ভাষাতেই স্বচ্ছন্দ তিনি গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাদের ভাষায় কথা বলে যান তুখোড় ভাবে। আইএনএসও-র গৌরব দুহান, যিনি এ বছরেই পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, তিনি বলছিলেন, "উনি রাজনীতিবিদদের মত নন, খুব শান্ত, ভদ্র। বয়সের বালাই না রেখে সকলের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন।"
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: ৩০৩+৩৭০-এর হিসেব কাজে এল না
২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জননায়ক জনতা পার্টি প্রতিষ্ঠা করার পর নিজের দলে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যে সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন তিনি। তাঁর টিমে একদিকে যেমন রয়েছেন লোকদল থেকে আসা প্রবীণ ৬৩ বছরের নিশান সিং, যাঁকে প্রায়শই দুষ্যন্তের পাশে দেখা যায়, তেমনই রয়েছেন ৩০ বছরের ইঞ্জিনিয়র নিতিন সেহরাওয়াত, যিনি দলের সোশাল মিডিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত।
৩৬ বছরের বরিন্দর সান্ধু জেজেপি নির্বাচনী ইস্তেহার কমিটির সদস্য। দুষ্যন্তের মত তরুণ নেতার জনপ্রিয়তার মূলে রয়েছে তৃণমূল স্তরের ইস্যুগুলি তাঁর নখদর্পণে থাকায়।
কিন্তু শুরুটা এত সহজ ছিল না। প্রথমবার ভোটে প্রতীক পেয়েছিলেন চপ্পল। লোকসভা ভোটে এক সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর জনতার বলেছিলেন, যারা চপ্পলের নামে ভোট চাইতে আসছে তাদের চপ্পলের মালা পরিয়ে দিতে।
জেজেপি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর কাকা অভয় চৌতালা বলেছিলেন "আমি শুধু চপ্পলের কথা শুনেছি, আর কিছু জানি না।"
ছাত্রদের মধ্যে ভিত্তি তাঁকে দলে তরুণ কর্মী পেতে সাহায্য করলেও, প্রার্থী বাছাই মোটেও সহজ নয়। চারজন জয়ী প্রার্থী তাঁর সঙ্গে যোগ দেন অক্টোবর মাসে, টিকিট পেতে অস্বীকৃত হওয়ার পর।
গোটা প্রচার জুড়ে দুষ্যন্ত একবারও দুর্নীতি মামলায় তাঁর বাবার প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাননি। তিনি যে কথা বলে গিয়েছেন, তা হল, "উনি নির্দোষ... ওঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই, আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।"
ভিতরের লোকজন বলে মা-কেও রাজনীতিতে আসার জন্য উৎসাহ দিয়ে চলেন তিনি। নয়না সিং চৌটালা দাবওয়ালি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তাঁর সঙ্গেই ভোটের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তার পর থেকে মহিলাদের নিজের রাজনীতিতে নিয়ে আসার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নয়না।
দুষ্যন্তের স্ত্রী আইপিএস অফিসারের মেয়ে নয়না সিংও শাশুড়িকে নীরবে সাহায্য জুগিয়ে চলেন।
অধিকাংশ মানুষই দুষ্যন্তকে ভোট দিয়েছেন তাঁর পরিবর্তন ও চাকরির প্রতিশ্রুতির দিকে তাকিয়ে। ভোটের কয়েকদিন আগে কার্নালের যুবক সুখবিন্দর সিং ক্রমবর্ধমান চাকরিহীনতার জন্য বিজেপির উপর ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন। তাঁর কথায়, "দুষ্যন্ত অন্যরকম, উনি বিজেপিকে শিক্ষা দিয়ে ছাড়বেন।"
Read the Full Story in English