ধনকুবের শিল্পপতি জর্জ সোরোস আদানি গ্রুপের হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে গৌতম আদানির যোগসাজশের বিষয়ে তাঁর মন্তব্যের জন্য শিরোনামে এসেছেন।
ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদন অনুসারে সোরোস বলেছেন, “মোদি এই বিষয়ে নীরব, কিন্তু তাঁকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এবং সংসদে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে”। “এটি ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের উপর মোদির আধিপত্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করবে এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করবে। আমি নির্বোধ হতে পারি, কিন্তু আমি ভারতে একটি গণতান্ত্রিক পুনরুজ্জীবনের প্রত্যাশা করি,” মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের আগে ধনকুবের সোরোস একথা বলেছেন।
ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ইতিমধ্যেই সোরোসের মন্তব্যে পাল্টা আঘাত করেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি সোরোসের মন্তব্যকে "ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করার ঘোষণা" বলে অভিহিত করেছেন এবং যোগ করেছেন, "ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বেঁধে দেওয়া হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর এবং দেশের স্বার্থের ণাঝে দাঁড়িয়ে আছেন," উদ্ধৃত করছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই।
জর্জ সোরোস কে?
জর্জ সোরোস একজন কোটিপতি হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান শিল্পপতি, হেজ-ফান্ড ম্যানেজার, শর্ট-সেলার এবং সমাজসেবী। ১৯৩০ সালে হাঙ্গেরির একটি সমৃদ্ধ ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, তাঁর পরিবার হাঙ্গেরিতে ইহুদি বিরোধিতার উত্থানের মধ্যে তাঁদের ইহুদি পরিচয়কে ছদ্মবেশ দেওয়ার জন্য "শোয়ার্টজ" থেকে "সোরোস" নাম পরিবর্তন করেন। সেই সময় হাঙ্গেরি নাৎসি দখলে চলে যায়। জাল পরিচয়পত্র কিনে তাঁর পরিবার ইহুদি-নিধন থেকে বেঁচে গিয়েছিল।
ধনকুবের পরে স্মরণ করেছিলেন যে, "আমাদের ভাগ্যের কাছে নতি স্বীকার করার পরিবর্তে, আমরা একটি অশুভ শক্তিকে প্রতিরোধ করেছি যেটি আমাদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল - তবুও আমরা জয়ী হয়েছি। আমরা শুধু বেঁচেই ছিলাম না, অন্যদেরও সাহায্য করতে পেরেছি।”
আরও পড়ুন Explained: নতুন না, ভারতে বিবিসির সম্প্রচার বারবার ধাক্কা খেয়েছে, জানেন সেকথা?
যুদ্ধের পরে, কমিউনিস্টরা হাঙ্গেরিতে তাঁদের অবস্থান সুসংহত করার সঙ্গ সঙ্গে, সোরোস লন্ডনে চলে যান যেখানে তিনি বিনিয়োগ ব্যাংকার হওয়ার আগে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে তার প্রথম হেজ ফান্ড, ডাবল ঈগল খোলেন। ১৯৭৩ সালে, তিনি সোরোস ফান্ড ম্যানেজমেন্ট খোলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল বিনিয়োগকারীদের একজন হয়ে ওঠেন।
মোদির সমালোচনা এই প্রথম নয়
উল্লেখ্য, জর্জ সোরোস এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেছেন এমনটা নয়। ২০২০ সালে, "ভারতে জাতীয়তাবাদের ভীতিকর উত্থান" সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে, সোরোস বলেছিলেন: "সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ধাক্কাটি ভারতে ঘটেছে যেখানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নরেন্দ্র মোদি একটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র তৈরি করছেন, কাশ্মীরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ করছেন, একটি আধা-স্বায়ত্তশাসিত মুসলিম অঞ্চল, এবং লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে তাঁদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করার শাস্তি দিচ্ছেন।"
একজন স্ব-স্বীকৃত উদারপন্থী, সোরোস বিশ্বজুড়ে "দমনমূলক শাসনের" দৃঢ় প্রতিপক্ষ। “একনায়কতন্ত্রের সবচেয়ে বড় ত্রুটি হল তারা যখন সফল হয়, তারা জানে না কখন বা কীভাবে দমনমূলক হওয়া বন্ধ করতে হবে। তাদের চেক এবং ভারসাম্যের অভাব রয়েছে যা গণতন্ত্রকে একটি মাত্রার স্থিতিশীলতা দেয়। ফলে নির্যাতিতরা বিদ্রোহ করে। আমরা আজ সারা বিশ্বে এটি ঘটতে দেখছি,” সোরোস ২০২০ সালে বলেছিলেন।