বহু চেষ্টা করেও প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারলেন না পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা পাকিস্তান-তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ইমরান খান। চার বছর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকার পর ১০ এপ্রিল আস্থাভোটে তিনি অপসারিত হয়েছেন। নতুন প্রধানমন্ত্রীও ঠিক হয়ে গিয়েছে, শেহবাজ শরিফ।
কে এই শেহবাজ
রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরাধিকারী তো বটেই। ইমরানের অভিযোগ অনুযায়ী, পাকিস্তান রাজনীতির পরিচালকও এই শেহবাজ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরানের পূর্বসূরি নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই। পাকিস্তান-মুসলিম-লিগ-নওয়াজ, পাকিস্তানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। সেই দলের প্রতিষ্ঠাতা নওয়াজ শরিফ। এখন তিনি থাকেন লন্ডনে। তাঁর হয়ে ভাই শেহবাজ পাকিস্তান-মুসলিম-লিগ-নওয়াজ দল চালনা করেন। পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি বা পিপিপি। যার প্রধান বরাবরই ভুট্টো পরিবার। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এই দলের প্রধান। তিনিও চান শেহবাজই পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হোক। অন্তত এখনকার জন্য। কিন্তু, কেন খামোকা পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা শেহবাজের ওপর ভরসা রাখছেন?
পাকিস্তানের বাইরে পরিচিতি নেই
পাকিস্তানের বাইরে শেহবাজ শরিফের তেমন একটা পরিচিতি নেই। যেমনটা, তাঁর দাদা নওয়াজ শরিফের আছে। এমনকী, ভাইঝি মরিয়মের মতোও জনপ্রিয় নেতাও নন শেহবাজ। কিন্তু, পাকিস্তানের রাজনীতির প্রতিটি প্রান্ত জানে, প্রশাসক হিসেবে শেহবাজের দক্ষতা প্রশ্নাতীত। ঐশ্বর্যশালী পরিবারে জন্মালেও পারিবারিক ব্যবসার চেয়ে বরাবর রাজনীতিতেই বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন শেহবাজ। অন্য ধনী পরিবারের সন্তানদের মতো তিনি লেখাপড়া করেছেন লাহোরের সরকারি কলেজে। এরপর যোগ দেন পরিবারের ব্যবসা গ্রুপ ইত্তেফাকে। সেটা ১৯৯০ সাল। সেই সময় ইত্তেফাক শুধুমাত্র ইস্পাত এবং লোহার ব্যবসা করত।
রাজনীতিতে বরাবর দাদার ছত্রছায়ায়
নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী পদে জয়লাভের পর শেহবাজও দেশের জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন। ১৯৯৭ সালে তাঁর দাদা যখন দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন, সেই সময় শেহবাজ পাকিস্তান পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন। পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল এবং ক্ষমতাশালী প্রদেশ এই পাকিস্তান পঞ্জাব। কিন্তু, দু'বছর বাদে নওয়াজ যখন সেনাপ্রধান বদলের চেষ্টা করেন, সেই সময় সেনা অভ্যুত্থান ঘটে। নওয়াজ এবং শেহবাজ সেই সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। গোটা শরিফ পরিবারকে বন্দি করা হয়। ২০০৭ পর্যন্ত তাঁরা সৌদি আরবে নির্বাসিত ছিলেন।
দুর্নীতির অভিযোগ
ফেরার পর দুই ভাই ফের নিজেদের পদে বহাল হন। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শেহবাজ পরিকাঠামোর ওপর নজর দেন। ২০১৭ সালে নওয়াজ ফের অপসারিত হন, এবার দুর্নীতির দায়ে তাঁকে সরানো হয়। ২০১৮ সালে ইমরানের কাছে হেরেও যান নওয়াজ। এরপর পাকিস্তান-মুসলিম-লিগ-নওয়াজের দায়িত্ব ভাইয়ের হাতে তুলে দেন বড় শরিফ। তারপর থেকেই শেহবাজ শরিফ পাকিস্তান-মুসলিম-লিগ-নওয়াজ দলের সভাপতি। আর, একইসঙ্গে পাকিস্তানের বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। এবার তিনিই সামলাতে চলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি।
Read story in English