রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ২১ বছরের শাসন জমানায় তিনিই ছিলেন ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় পুতিন সমর্থক। সেই কারণে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ৪৮তম দিনে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পালটা আঘাত করতে পুতিনের বন্ধু ভিক্টর মেদভেদচুককে গ্রেফতার করেছেন। বিদ্যুত্গতিতে এক ভয়ঙ্কর অভিযানের মাধ্যমে তা সম্ভব হয়েছে। ইউক্রেন পুলিশ বিধ্বস্ত মেদভেদচুকের এক ছবি প্রকাশ করেছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে তাঁর হাতে হাতকড়া। গায়ে সামরিক বাহিনীর পোশাক।
মেদভেদচুককে ছাড়াতে হলে রাশিয়াকে বন্দি বিনিময় করতে হবে বলেই জানিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। এর আগে মেদভেদচুককে গৃহবন্দি করা হয়েছিল। কিন্তু, ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালাতেই মেদভেদচুক পালিয়ে যান। রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও মেদভেদচুকের বিরুদ্ধে নানাপ্রকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। স্বভাবতই মেদভেদচুকের গ্রেফতারিতে পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া। পুতিন বলেছেন, এই গ্রেফতারি রাজনৈতিক নিপীড়ন ছাড়া আর কিছুই না।
কে এই ভিক্টর মেদভেদচুক?
এক ধনী ব্যবসায়ী। রাশিয়ার তেল ব্যবসার দৌলতেই ধনী ব্যবসায়ী হয়েছেন মেদভেদচুক। ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থী বিরোধীদের তিনি নেতা। তাঁর পিছনে রয়েছে বেশ কয়েকজন অর্বুদপতি। যাঁরা ক্রেমলিনের সঙ্গে মেদভেদচুকের এই ঘনিষ্ঠতাকে রীতিমতো পছন্দ করেন। তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল। একটা সময় তাঁর নিজস্ব চ্যানেলের মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কিকে লাগাতার আক্রমণ করে গিয়েছেন মেদভেদচুক। করোনা পরিস্থিতিতে জেলেনস্কি সরকারের ব্যর্থতা নিজের টেলিভিশন চ্যানেলে তুলে ধরেছেন।
রাশিয়ার তৈরি করোনা ভ্যাকসিন বাজারে আসার পর যে ক'জন প্রথমসারির ব্যক্তিত্ব তা পেয়েছেন, তাঁদের অন্যতম মেদভেদচুক। শুধু তিনিই নন। ভ্যাকসিন পেয়েছে তাঁর বাড়ির লোকজনও।
এমনকী, রাশিয়া থেকে ইউক্রেনে কয়েক লক্ষ করোনা ডোজ আমদানির চুক্তির ক্ষেত্রেও দালালি করেছিলেন ইউক্রেনের বিরোধী দলনেতা। কিন্তু, পরে এই চুক্তি বাতিল করে দেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। মজার বিষয় হল, করোনা আবহে ব্যর্থতার জন্য জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা কমে যায়। সেই সময় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তাদের সমীক্ষায় জানিয়েছিল, ভোটে দাঁড়ালে জিতে যেতে পারেন মেদভেদচুক।
২০২১ সালের মে মাসে, দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে তাঁকে গৃহবন্দি করা হয়। রাশিয়ার হামলার পর পালিয়ে যাওয়া মেদভেদচুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাশিয়ার দখলে রাখা ক্রিমিয়া এলাকা থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ চুরির চেষ্টা করেছিলেন। আর, ইউক্রেন সেনার গোপন তথ্য রাশিয়ার কাছে ফাঁস করে দিয়েছেন। বিতর্ক বাড়িয়ে গত বছর মেদভেদচুকের বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দেয় ইউক্রেন সরকার। জেলেনস্কি সরকারের অভিযোগ, ওই সব চ্যানেলে রাশিয়ার হয়ে প্রচার চলছিল।
চলতি বছরের মার্চে, মেদভেদচুকের দল-সহ ১১টি দলকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগে সাসপেন্ড করেন জেলেনস্কি। ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির বিরুদ্ধে নানা বিধিনিষেধ প্রয়োগ করে বিরোধীদের পর্যুদস্ত করার অভিযোগ বারবার উঠেছে। আবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, জেলেনস্কিকে সরিয়ে পুতুল মেদভেদচুককেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট করার তালে ছিল রাশিয়া।
পুতিন এবং মেদভেদচুকের সম্পর্কের ব্যাপারে আমরা কী জানি?
দু'জনের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। মেদভেদচুকের ছোট মেয়ে পুতিনকে গডফাদার মানেন। তাঁকে হামেশাই মেদভেদচুকের সঙ্গে ফর্মুলা ১ রেস এবং মার্শাল আর্টের বৈঠকে দেখা যেত। কৃষ্ণসাগরে মেদভেদচুকের সঙ্গে ছুটি কাটাতেও গিয়েছিলেন পুতিন। এক সাক্ষাত্কারে মেদভেদচুক দাবি করেছিলেন, তিনি পুতিনের সঙ্গে এই সম্পর্ককে কাজে লাগাননি। বরং, এই সম্পর্ক তাঁর রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। আর, পুতিন জানিয়েছেন, তিনি এবং মেদভেদচুক প্রায়ই দেখা করতেন। তাঁরা ঘনিষ্ঠ নন। তবে, পরস্পরকে জানেন।
Read story in English