প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার (২৬ আগস্ট) ঘোষণা করেছেন যে বুধবার চন্দ্রযান-৩ ল্যান্ডারটি চন্দ্রপৃষ্ঠে যে বিন্দুটি স্পর্শ করেছে, তার নাম হবে 'শিব শক্তি'। প্রধানমন্ত্রী বেঙ্গালুরুতে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) সদর দফতরে বক্তৃতা করছিলেন। সেখানে তিনি অভিযানের সাফল্যে অবদান রাখা বিজ্ঞানীদের সাথে দেখা করেছেন। মোদী বলেন, 'সাধারণত, সারা বিশ্বে এই ধরনের সফল অভিযানগুলোর একটি ঐতিহ্য আছে। দেশগুলো যেখানে অভিযান চালায়, সেখানকার নামকরণ করে থাকে।' মোদী যোগ করেছেন যে ২০১৯ সালে যেখানে চন্দ্রযান-২ বিধ্বস্ত হয়েছিল, সেই স্থানটির নামকরণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু, বিজ্ঞানীরা চাইছেন, আলতোভাবে অবতরণ সফল হলে তবেই নামকরণ করা উচিত। সেক্ষেত্রে স্থানটির নামকরণ করা হবে, 'তিরাঙ্গা'।
ইসরো প্রধান বলেছেন
ইসরো প্রধান কে সোমনাথ রবিবার তিরুবনন্তপুরমে মিডিয়াকে সম্বোধন করে বলেন, 'দেশের অবতরণ স্থানের নামকরণ করার অধিকার রয়েছে। অবতরণ স্থানের নামকরণ প্রথম ঘটনা নয়। চাঁদে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি ভারতীয় নাম রয়েছে। চাঁদে আমাদের একটি সারাভাই গর্ত আছে। অন্যান্য দেশগুলোও তাদের বৈজ্ঞানিক কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত স্থানের নামকরণ করেছে। এমনকী, ছোটখাটো পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত স্থানের নামকরণও করা হয়। এটা একটা ঐতিহ্য।' আসলে, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন (আইএইউ) এই নামে চূড়ান্ত সিলমোহর দেয়। এই সংগঠনের ৯২টি দেশ সদস্য। ভারত তার অন্যতম। দেশগুলো প্রথমে নাম দেয়। যা থাকে প্রস্তাব আকারে। আইএইউ সিলমোহর দিলে যা চূড়ান্ত হয়।
চাঁদ কারও অধীনস্ত নয়
চাঁদ কোনও দেশের অধীনে নয়। সেই কারণে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা চাঁদে অনুসন্ধান এবং অভিযান চালায়। কেন কেউ চাঁদের মালিক নন রাষ্ট্রসংঘের আউটার স্পেস অ্যাফেয়ার্স দফতর ১৯৬৬ সালে আউটার স্পেস চুক্তি করেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই চুক্তি হয়েছিল ঠান্ডা যুদ্ধের যুগে। সেই সময় দুটি মহাশক্তি ইউএসএসআর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়ে পড়েছিল। এটি ছিল সামরিক আধিপত্যের ওপর একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং মহাকাশ প্রতিযোগিতা। তারই ভিত্তিতে উভয় দেশই প্রথমে চাঁদে কোন দেশের মানুষ নামবেন, মহাকাশে প্রথমে কোন দেশের নভোচারী নামবেন- এই প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়েছিল।
আরও পড়ুন- চার দেশের মহাকাশচারীকে মহাকাশে পাঠাল নাসা, কোন অভিযানে কেন এমন সিদ্ধান্ত?
রাষ্ট্রসংঘের নীতি নির্ধারণ
সেই সময় হওয়া রাষ্ট্রসংঘের মহাকাশ চুক্তিতে কিছু সাধারণ নীতি নির্ধারণ করা হয়েছিল। যেখানে চুক্তিটি তার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে ঘোষণা করেছিল, 'চাঁদ এবং অন্যান্য মহাকাশ-এর ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্বের দাবি করা যাবে না। এটা কোনও দেশের অধীনে নয়। কোনও জাতির অধিকারভুক্ত নয়।' সহজভাবে বলতে গেলে, এর অর্থ হল দেশগুলো শুধু মহাকাশ অনুসন্ধান কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল'-র প্রধান আলেকজান্ডার সোসেক একটি প্রতিবেদনে বলেছেন, 'একটি জাতি চাঁদে তাদের পতাকা রাখতেই পারে। কিন্তু, এর কোনও আইনি বৈধতা নেই।'