তিন বছর আগে পর্যন্তও বছর ৩৫-এর হিজবুল মুজাহিদিন কম্যান্ডার রিয়াজ আহমেদ নাইকুর নাম উপত্যকার বাইরে কেউ জানত না। নাইকু দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তপুরায় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে গুলিযুদ্ধে মারা গিয়েছে।
২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে, হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর এক বছর পর শোপিয়ানে নিরাপত্তাবাহিনী গুলি করে মারে তার উত্তরসূরী ইয়াসিন ইটু ওরফে মেহমুদ গজনভিকে। এর পর নাইকুর দিকে নজর পড়ে জঙ্গি বাহিনীর, তার উপরেই দায়িত্ব দেওয়া হয় উপত্যকায় অপারেশন পরিচালনা এবং নিচের তলার কর্মীদের ফের সংগঠিত করার।
কেন সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেল অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ?
নাইকু মহম্মদ বিন কাসিম নাম নিয়ে কাজ শুরু করার পর হিজবুল দ্রুত উপত্যকায় জঙ্গি কার্যকলাপ শুরু করে, তার উপর নজর পড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর।
অতি দ্রুত সে হয়ে ওঠে মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি। সরকার তার সম্পর্কে কোনও রকম খবর দিতে পারলে ১২ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে।
কে এই ছলনাময় রিয়াজ নাইকু?
দক্ষিণ কাশ্মীরের অবন্তীপুরার বেগপোরা গ্রামের এক দর্জির ছেলে নাইকু অঙ্কের স্নাতক হওয়ার পর একটি স্থানীয় স্কুলে অঙ্কের শিক্ষক হিসেবে কাজ করে। গ্রামের বাসিন্দারা তাকে ছাত্রদের মধ্যে জনপ্রিয় এক শিক্ষক হিসেবেই মনে রেখেছেন।
কিন্তু ২০১২ সালের ১ জুন নিরুদ্দেশ হয়ে যায় ওই অঙ্কের শিক্ষক - পরিবারের অভিযোগ পুলিশ তাকে মারধর ও হেনস্থা করে। ফের যখন তাকে দেখা যায়, তখন সে বন্দুকধারী। পরের পাঁচ বছরে সে হিজবুলের কর্মী হিসেবে উন্নত হয় এবং ইয়াসিনের মৃত্যুর পর যখন তাকে উপত্যকায় সংগঠনের কাজ দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়, সে সময়ে সে প্রস্তুত।
কীভাবে করোনা সঙ্কট চিরদিনের মতো পাল্টে দিতে পারে খেলার দুনিয়া
নাইকুর উত্থান আরও একটা কারণে হিজবুলের নজরে পড়েছিল। হিজবুল কমান্ডার জাকির রশিদ ভাট ওরফে জাকির মুসা যখন ভারতীয় উপমহাদেশের আল কায়েদা (AQIS)-এর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত করে এবং ঘোষণা করে সে ইসলামিক খলিফাচন্ত্র তৈরি করবে, তখননাইকু এই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।
হিজবুল নাইকুকে সংগঠনের নরমপন্থী মুখ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং নির্দেশ দেয় নিচের তলার কর্মীদের অবিচ্ছিন্ন রাখতে, কারণ জাকির মুসার সিদ্ধান্তের ফলে ভাঙন ছিল অবশ্যম্ভাবী। নাইকু শুধু সংগঠনকে বিচ্ছিন্ন হতে দেয়নি, তাই নয়, একই সঙ্গে হিজবুলকে সুসংগঠিতও করেছিল।
তার পাকিস্তানপন্থী ঝোঁক, বাচনভঙ্গি এবং অল্পবয়সীদের হাতে বন্দুক তুলতে উদ্বুদ্ধ করার জেরে সে দ্রুত হয়ে ওঠে হিজবুলের ডিভিশনাল কমান্ডার। পাকিস্তানবাসী সংগঠনের প্রধান সৈয়দ সালাহ উদ দিনের আস্থাও সে অর্জন করে নেয় সহজেই।
নাইকু সোশাল মিডিয়ায় জঙ্গি বাহিনীর রিক্রুটদের ফোটো আপলোড করত এবং কাশ্মীরে পণ্ডিতদের ফিরে প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছিল এবং অমননাথ যাত্রীদের অতিথি বলে সম্বোধিত করেছিল। গুলিযুদ্ধে নিহত জঙ্গিদের গান স্যালুট দেওয়ার অভ্যাসও তার তৈরি।
২০১৮ সালে তার ৭০ বছর বয়সী বাবা আসাদুল্লা নাইকুকে পুলিশ আটক করার প্রত্যুত্তরে জম্মু কাশ্মীরের পুলিশ আধিকারিকদের পরিবারের লোকদের অপহরণ করে সে নিরাপত্তাবাহিনীর কালঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিল। কয়েকঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ১২ জনেরও বেশি পুলিশকর্মীর পরিবারের লোকদের অপহরণ করা হয়। এর পর পুলিশ তার বাবাকে ছেড়ে দেয় এবং পুলিশকর্মীর পরিবারের লোকেরাও বাড়ি ফিরে আসেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন