গত মাসে নদীর ধার থেকে যে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল তা ২ মার্চ থেকে নিরুদ্দেশ পাকিস্তানি সাংবাদিক সাজিদ হুসেনের বলে সুইডেনের পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশের মুখপাত্র বলেছেন গত ২৩ এপ্রিল রাজধানী স্টকহোমের ৭০ কিলোমিটার উত্তরে ফাইরিস নদীর ধার থেকে সাজিদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
৩৯ বছর বয়সী সাজিদ পকিস্তানের বালোচিস্তানের মানুষ। তিনি বালোচিস্তান টাইমস নামের একটি অনলাইন ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। ২০১৫ থেকে এই পত্রিকা শুরু করেন তিনি।
হুসেন পাক সরকারের প্রকাশ্য সমালোচক ছিলেন এবং ২০১২ সালে তিনি সে দেশ থেকে পালিয়ে যান। তার আগে মানবাধিকার লঙ্ঘন, অপরাধ ও দুর্নীতি বিষয়ে রিপোর্টিং করার জন্য তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়।
দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রতিবেদন অনুসারে হুসেনের স্ত্রী ও সন্তানের পাকিস্তানেই রয়েছেন। হুসেন নিজে সুইডেন পৌঁছবার আগে ওমান, দুবাই এবং উগান্ডায় পালিয়ে বেড়ান। ২০১৮ সালে তিনি সুইডেনে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। পরে তিনি উপ্পাসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত হন, যেখানে তিনি পড়াশোনা ও অধ্যাপনা করতেন। নির্বাসনে থাকাকালীন হুসেনের বালোচিস্তান টাইমসে তাঁর প্রদেশের দীর্ঘদিনের জঙ্গি কার্যকলাপ, অপরাধ ও ড্রাগ পাচার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
নিখোঁজ ও মৃত্যু
মাস দুয়েক আগে হুসেন উপ্পাসালায় বসবাসের প্রস্তুতি শুরু করেন। ২৮ মার্চ বালোচিস্তান টাইমসে প্রকাশিত হয় ২ মার্চ উপ্পাসালা থেকে তিনি নিখোঁজ হয়েছেন এবং ৩ মার্চ সুইডিশ পুলিশের কাছে সরকারিভাবে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
হুসেনের আত্মীয়রা পাকিস্তানের ডন পত্রিকাকে বলেছেন, তাঁরা নীরবতা ভাঙার আগে তাঁরা দু সপ্তাহ অপেক্ষা করেছেন, তাঁদের মনে হয়েছিল করোনাভাইরাসের জন্য হয়ত কোথাও কোয়ারান্টিনে রয়েছেন সাজিদ।
কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ জার্নালিস্টস সুইডিশ কর্তৃপক্ষের কাছে হুসেনের নিরাপত্তার আর্জি জানিয়েছিল। ২৩ এপ্রিল সুইডিশ তদন্তকারীরা ফাইরিস নদীর ধারে একটি মৃতদেহ খুঁজে পান। পরে তা হুসেনের মৃতদেহ বলে শনাক্ত করা হয়।
সুইডিশ পুলিশ প্রথমে খুনের তদন্ত করেস অটোপ্সির ফলে হুসেনের মৃত্যুতে কোনও সন্দেহজনক কিছু রয়েছে কিনা তা খোঁজার কাজ ব্যাহত হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। তবে সাংবাদিক সংগঠনদের আশঙ্কা, হুসেনের নিখোঁজ ও মৃত্যুর পিছনে রয়েছে তাঁর করা রিপোর্টিং। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের সুইডিশ চ্যাপ্টার বলেছে তাঁর অপহরণ ও হত্যার পিছনে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার হাত থাকতে পারে।
সুইডিশ কর্তৃপক্ষ বলছে অটোপ্সির আরও ফল আসা বাকি, এবং তদন্ত চলবে।
বালোচিস্তানের বিদ্রোহ
বালোচিস্তান পাকিস্তানের বৃহত্তম এবং জনবিরল প্রদেশ, তা সত্ত্বেও এ প্রদেশকে সবচেয়ে উপদ্রুত বলে ধরা হয়ে থাকে। খনিজ পদার্থ ও প্রাকৃতিক গ্যাস এ প্রদেশে সবচেয়ে বেশি।
এই অঞ্চলে তালিবান ও আইসিস জঙ্গিরা রয়েছে বলে মনে করা হয়, রয়েছে অপরাধ সিন্ডিকেটও। কয়েক দশক ধরে বালোচিস্তানের জাতীয়তাবাদীরা পাকিস্তানের থেকে স্বায়ত্তশাসন দাবি করছেন এবং সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি সেখানে সক্রিয়।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সাংবাদিক গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানকে এই প্রদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে দায়ী করে আসছে, অভিযোগের মধ্যে রয়েছে অত্যাচার এবং বলপূর্বক নিখোঁজ করে দেওয়াও। পাকিস্তান এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে এবং হিংসায় অবদানের জন্য দায়ী করছে ভারতকে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন