রবিবার, ১২ জানুয়ারি অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল নিযুক্ত হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এস আবদুল নাজির। মাসখানেক আগেই, গত ৪ জানুয়ারি তিনি বিচারপতির পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় ছয় বছর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। তার আগে ছিলেন কর্ণাটক হাইকোর্টের বিচারপতি।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন বিচারপতি কেএস পুট্টাস্বামীর মামলায় যে বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, বিচারপতি নাজির তার অংশীদার ছিলেন। ২০১৮ সালের ওই রায়ে গোপনীয়তাকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। তার আগের বছর ২০১৭ সালে, তিন তালাক মামলায় সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাককে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছে। অবশ্য বিচারপতি নাজির সেই মামলায় অসাংবিধানিক নির্দেশের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু, পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে তিন বিচারপতিই তিন তালাকের বিরুদ্ধে থাকায় বিচারপতি নাজিরের মত গৃহীত হয়নি। ২০১৯ সালে বাবরি মসজিদ মামলার রায়দানকারী বেঞ্চেও ছিলেন বিচারপতি নাজির।
বিচারপতি নাজিরের আগে সুপ্রিম কোর্টের আরও অন্তত দু'জন বিচারপতি সম্প্রতি রাজ্যপাল নিযুক্ত হয়েছেন। তাঁদের একজন হলেন দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবম। অন্যজন, বিচারপতি এম ফতিমা বিবি।
বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) সদাশিবম
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রাজ্যপাল নিযুক্ত ছিলেন, সেই তালিকার শেষ উদাহরণ ছিলেন দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবম। তিনি ২০১৪ সালে কেরলের রাজ্যপাল নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালে তিনি মাদ্রাজ হাইকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন। রিট, সিভিল, ক্রিমিনাল, কোম্পানির কার্যকলাপ, দেউলিয়া মামলার আবেদন, হেবিয়াস কর্পাস মামলা-সহ সব ধরনের মামলা লড়ারই অভিজ্ঞতা আছে বিচারপতি পি সদাশিবমের।
সুপ্রিম কোর্টে তাঁর বিবরণপঞ্জী অনুযায়ী, বিচারপতি সদাশিবম সরকারি আইনজীবী হিসেবেও কাজ করেছেন। অতিরিক্ত সরকারি আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন। মাদ্রাজ হাইকোর্টে বিশেষ সরকারি আইনজীবী হিসেবেও কাজ করেছেন। বিভিন্ন সরকারি পরিবহণ সংস্থার তিনি আইনি পরামর্শদাতা ছিলেন। এছাড়াও পুরসভা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেরও তিনি আইনি পরামর্শদাতা ছিলেন। ১৯৯৬ সালের ৮ জানুয়ারি, তিনি মাদ্রাজ হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি নিযুক্ত হন।
২০০৭ সালের এপ্রিলে তিনি পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের বিচারপতি পদে স্থানান্তরিত হন। ২০০৭ সালের আগস্টে তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে উন্নীত হন। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ২০১৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ওই দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৪ সালে এনডিএ সরকারের জমানায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁকে কেরলের রাজ্যপাল নিযুক্ত করে।
বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) ফতিমা বিবি
সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এম ফতিমা বিবি ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল ছিলেন। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদ থেকে অবসর নেন এম ফতিমা বিবি। তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ১৯৫০ সালে আইনজীবী হিসেবে তিনি নিজের নাম নথিভুক্ত করেন। ১৯৫৮ সালের মে মাসে তিনি কেরলের মহকুমা আদালতে মুন্সিফ নিযুক্ত হন। সেখান থেকে জেলা বিচারক হন।
এরপর ১৯৮৪ সালে কেরল হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন। ১৯৮৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন। তারপর ১৯৯২ সালে অবসর নেন। এইচ ডি দেবেগৌড়া তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় ১৯৯৭ সালের ২৫ জানুয়ারি ফতিমা বিবি চেন্নাইয়ের রাজভবনে রাজ্যপাল পদে শপথবাক্য পাঠ করেন। তবে, মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই ২০০১ সালের ১ জুলাই তিনি রাজ্যপাল পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। কারণ, কেন্দ্রের অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকারের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ দেখা দেয়। ফতিমা বিবির দোষ ছিল, তিনি জয়ললিতাকে সরকার গড়তে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল, আবদুল নাজিরকে নিয়ে উঠেছে বহু প্রশ্ন
আর, সরকারে বসেই জয়ললিতা মধ্যরাতের মধ্যে ডিএমকে সভাপতি তথা তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধি ও তাঁর সহযোগী মুরাসোলি মারান, টিআর বালুদের গ্রেফতার করিয়েছিলেন। সেই সময় ডিএমকে আবার কেন্দ্রের বাজপেয়ী সরকারের অংশীদার ছিল। পুলিশ ঘুমন্ত করুণানিধির ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকেছিল। তাঁকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছিল। মারান সেই সময় শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী ছিলেন। আর, বালু ছিলেন কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রী। এই গ্রেফতারের পর কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অরুণ জেটলি প্রবীণ সাংবাদিক শীলা ভাটকে বলেছিলেন যে তাঁর, 'প্রাথমিক ধারণা, এই গ্রেফতারিতে আইনের চেয়ে ব্যক্তিগত অভিপ্রায়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।'
Read full story in English