/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/01/Murderers-of-Gandhi.jpg)
বাম থেকে ডান সামনের সারি: নাথুরাম বিনায়ক গডসে, নারায়ণ দত্তাত্রয় আপ্তে, বিষ্ণু রামকৃষ্ণ কারকর। পিছনে বসে আছে (বাম থেকে ডানে) দিগম্বর রামচন্দ্র ব্যাজ, শংকর (কিস্তার সন্তান), বিনায়ক দামোদর সাভারকর, গোপাল বিনায়ক গডসে এবং দত্তাত্রেয় সদাশিব পারচুরে।
নাথুরাম গডসে। নামটা শুনলেই আপামর ভারতবাসী একবাক্যে বলে দেবে, কে এই নাথুরাম। প্রতিবছর গান্ধীজয়ন্তী থেকে গান্ধীজির প্রয়াণ দিবস, এই নামটা কমপক্ষে অন্তত দু'বার শুনেই থাকে দেশবাসী। তাছাড়া যাঁরা গান্ধীজির কথা প্রায়ই আউড়ান, তাঁদের মুখে ঘুরেফিরে নামটা আসে। সংঘ পরিবারের বাপ-বাপান্ত করতেও কংগ্রেস ও তাদের ঘনিষ্ঠরা হামেশাই নাথুরামকে বক্তব্যে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আনেন। সংঘ পরিবারের জবাবেও উঠে আসে নাথুরামের নাম। কিন্তু, নাথুরাম একা না। ৭৫ বছর আগে ৩০ জানুয়ারি নাথুরাম ছাড়া আরও চার জন মহাত্মা গান্ধীর হত্যায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল। কারা তারা? দেখে নেওয়া যাক গান্ধী হত্যার সাজাপ্রাপ্তদের।
নাথুরাম গডসে
নাথুরামের ভাই গোপাল গডসে। তাঁদের বাবা ছিলেন গ্রামের পোস্টমাস্টার। নাথুরামের কাপড়ের ছোট ব্যবসা ছিল। সেই ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর ২২ বছরের নাথুরাম যোগ দিয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘে। কয়েক বছর পর পুণেতে চলে যায় নাথুরাম। হিন্দু মহাসভার স্থানীয় শাখার সম্পাদকের দায়িত্ব পায়। সেখানে 'অগ্রণী' নামে এক মারাঠি দৈনিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেখানে গান্ধীর বিরুদ্ধে লিখত নাথুরাম। পাশাপাশি, মুসলমানদের বিরুদ্ধেও উসকানিমূলক লেখা থাকত সেখানে। এজন্য সরকার তাকে বেশ কয়েকবার সতর্কও করেছিল। বিচারপতি খোসলা লক্ষ্য করেছেন, ভগবত গীতার বেশ কিছু শ্লোক নাথুরামের মুখস্থ ছিল। হায়দরাবাদে সেই সময় নিজামের সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দুরা বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ এনে আন্দোলন করছিলেন। নাথুরাম সেই আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। এজন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়। বেশ কিছু সময় নিজামের জেলে ছিল নাথুরাম।
গোপাল গডসে
নাথুরামের ছোট ভাই গোপাল গডসে। তিনিও কিছুকাল হিন্দু মহাসভার হয়ে কাজ করেছিলেন। তারপর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পুনের কাছে কিরকি সেনা ছাউনিতে মোটর ট্রান্সপোর্ট স্পেয়ার সাব-ডিপোর স্টোরকিপারের দায়িত্বে ছিলেন। গোপাল বিশেষভাবে বিনায়ক সাভারকর ও ভারত ভাগের দাবিতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। দাদা নাথুরাম গোপালকে গান্ধী হত্যার পরিকল্পনায় অংশ না-নেওয়ার অনুরোধ করেছিল। তারপরও গোপাল গডসে তার দাদার সঙ্গেই গান্ধী হত্যার পরিকল্পনায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।
নারায়ণ আপ্তে
বিএসসি পাস আপ্তে আহমেদাবাদের স্কুলশিক্ষক ছিল। হিন্দু রাষ্ট্রদলের সদস্য ছিল আপ্তে। ১৯৪৩ সালে ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগ দেয়। 'কিংস' কমিশনের পুরস্কারে ভূষিত হয়। তার ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর পর আপ্তেকে বাহিনী থেকে পদত্যাগ করে দেশে ফিরে আসতে হয়েছিল। গডসের মত ধর্মীয় ক্ষেত্রে তার বিশেষ উৎসাহ ছিল না। তবে গডসের সঙ্গে আপ্তেও একমত ছিলেন যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভারতীয় রাজনীতিতে বিশেষ কিছু মিলবে না। এমনটাই লিখেছেন বিচারপতি খোসলা।
বিষ্ণু কারকারে
কারকারে কঠোর শৈশবের মধ্যে প্রতিপালিত হয়েছিল। অর্থের অভাবে বাবা-মা তার যত্ন নিতে ব্যর্থ হয়। তার ফলে কারকারের ছোটবেলা কাটে অনাথ আশ্রমে। যদিও সেই অনাথ আশ্রম থেকে কারকারে শীঘ্রই পালিয়ে যায়। নানা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে। পরে আহমেদাবাদে নিজের রেস্তোরাঁ খোলে। কারকারের সঙ্গে আপ্তের দেখা হয়। হিন্দু মহাসভায় যোগদানের পর আপ্তের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠে। আপ্তের সমর্থনে, কারকারে আহমেদনগর মিউনিসিপ্যাল কমিটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়।
আরও পড়ুন- বিশ্ব কি আর্থিক মন্দার গ্রাসে, কী বলছে আইএমএফের নতুন রিপোর্ট?
মদনলাল পাহওয়া
পাহওয়া ছোট থেকেই দুষ্টু ছিল বলেই বিচারপতি খোসলা লিখেছেন। পাহওয়া রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভিতে যোগ দেওয়ার জন্য স্কুল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, পরীক্ষায় পাস করতে ব্যর্থ হয়। পরে, পাহওয়া সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। কিন্তু, অল্প সময়ে চাকরির পরে পদত্যাগ করে। এরপর পাহওয়া পাকপত্তনে (বর্তমানে পাকিস্তানে) নিজের বাড়িতে ফিরে যায়। শহরে বড় আকারের দাঙ্গা শুরু হওয়ার পরে, পাহওয়াকে পঞ্জাবের ফিরোজপুরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে, আপ্তে এবং গডসের সঙ্গে দেখা করেন পাহওয়া। উদ্বাস্তুদের দলের হয়ে বিক্ষোভ সংগঠিত করতে শুরু করে। এই উদ্বাস্তুদের দল বিশ্বাস করত, সরকার দেশভাগের শিকার হিন্দুদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়।
Read full story in English