বুধবার কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী দ্বিতীয়বার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে অধীর রঞ্জন চৌধুরীর নাম ঘোষণা করেন। ফের একবার লোকসভার কংগ্রেসের দলনেতার উপরেই আস্থা রাখছে কংগ্রেস। বর্তমানে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যানও বাংলার এই কংগ্রেস নেতা। গত ৩০ জুলাই প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন নেতা সোমেন মিত্রর জীবনাবসানের পর এই সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। ২০২১-এর ভোটকে পাখির চোখ করেই অধীরকে সামনে দাঁড় করালো কংগ্রেস হাইকমান্ড। এই সিদ্ধান্তের নেপথ্য কারণগুলি -
অধীর রঞ্জন চৌধুরী- বর্ষীয়ান নেতা
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে যে দুজন কংগ্রেস নেতা জয়ী হয়েছিলেন তাঁর একজন অধীর রঞ্জন চৌধুরী। সারা দেশে যখন কংগ্রেস প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে তখন মুখরক্ষা করেছে অধীর গড়। মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কেন্দ্রের বিগত পাঁচবার তিনিই সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। ফেব্রুয়ারী ২০১৪ থেকে সেপ্টেম্বরহ ২০১৮ পর্যন্ত WBPCC সভাপতিও ছিলেন তিনি। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা হওয়ার পাশাপাশি অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান অধীর। পূর্বে মনমোহন সিংয়ের (ইউপিএ -টু ২০১২-২০১৪) সরকারে রাজ্যের রেল প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন তিনি।
জনপ্রিয়, ডাকাবুকো
বর্তমানে বাংলার সবথেকে জনপ্রিয় কংগ্রেস নেতাও ৬৪ বছরের অধীর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারের কড়া সমালোচকও বটে। গোটা রাজ্যে কংগ্রেস যখন ধস্ত, এমন অবস্থাতেও নিজের কেন্দ্র বহরমপুর ধরে রেখেছেন তিনি। বহু চেষ্টা সত্ত্বেও দাঁত ফোটাতে পারেনি ঘাসফুল। চিরকালই নিজের বক্তব্য ও চিন্তা স্পষ্টভাবে বলেছেন অধীর। তাতে দলের অন্দরেও সমালোচনা শুনতে হয়েছে, বিরাগভাজন হতে হয়েছে। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে জোট বেঁধে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মাঠে নামে কংগ্রেস। অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন অধীর। মমতা ফের সরকারে এলেও তাঁর নেতৃত্বেই রাজ্যে ৪৪টি সিট দখল করে প্রধান বিরোধী দলের তকমা পায় কংগ্রেস।
সাম্প্রতিক সমালোচনা
বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই অধীর নেতৃত্ব প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। বেশকিছু বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেয়। তাদের ধরে রাখতে না পারায় সমালোচিত হয়েছিলেন সাংসদ। বর্তমানে বাংলায় কংগ্রেসের ২৪জন বিধায়ক রয়েছে। ১৭ জন বিধায়ক তৃণমূল ও লোকসভা নির্বাচনের পর একজন বিজেপিতে যোগ দেন। ২০১৮ সালে তাঁকে সরিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্বে আসেন সোমেন মিত্র। তবে তাতেও শেষরক্ষা করা যায়নি। ক্রমাগত দলের সদস্যরা তৃণমূলে যোগ দিতে থাকে।বহু চেষ্টা করেও ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে জোট বাঁধতে পারেনি কংগ্রেস। সোমেনের সমস্ত চেষ্ট ব্যর্থ হয়েছিল। ফলাফল, মাত্র দুটি আসনে জয়ী হয়েছিল হাত। ৫.৬৭ শতাংশ ভোট পায়, যা ২০১৪-র নির্বাচনের নিরিখে ৪.০৩ শতাংশ কম।
বর্তমান পরিস্থিতি
সামনেই একুশের লড়াই। তাই দলের একজন জনপ্রিয় ও শক্তিশালী নেতাকে প্রয়োজন, যে সংগঠনকে আরও একবার চাঙ্গা করতে পারবে। সেই অঙ্কেরই সমাধান অধীর। ভোটের আগে পার্টির জায়গা তুলে ধরতে মরিয়া তিনি। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করলে অধীরের ফিরে আসা কংগ্রেস নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ২০২১-এর নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে আসন সামঝোতার ইঙ্গিতও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ অধীর বরাবরই তৃণমূলের পরিবর্তে বামেদের সঙ্গে জোট বাঁধতে আগ্রহী।
তবে, অধীরের পক্ষে কাজটা মোটেই সহজ নয়। সাংসদের গুরুদায়িত্ব ও বাংলার প্রধান-এই দুটো কাজ একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়াটা কঠিন। বিধানসভা নির্বাচন দোরগোড়ায়, তাই কেন্দ্র নয় রাজ্যকেই সময় দিতে হবে তাঁকে।
অধীর রঞ্জন চৌধুরীর বরাবরই মমতা বিরোধী। সুতরাং, বাংলার কংগ্রেসের দায়িত্বে তিনি থাকাকালীন তৃণমূল সরকারের সঙ্গে যে মিত্রতা সম্ভব নয় তা স্পষ্ট। অন্যদিকে ঘাসফুল শিবিরের কাছে শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ বিজেপি। তাই কংগ্রেস-বাম জোট বাঁধলে নির্বাচনে একাই লড়াই করতে হবে মমতাকে।তবে বিজেপিরও নির্দিষ্ট কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কংগ্রেস-বাম জোট মানেই ত্রিশঙ্কু লড়াই। বেশি সংখ্যক ভোট পাওয়াটাই যেখানে বিপেজির লক্ষ্য, এই পরিস্থিতি খুব একটা গেরুয়া শিবিরের পক্ষে ভাল ইঙ্গিতবহ নয়।
Read the story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন