রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছিল বেশ কয়েকমাস আগে। সেই সময় প্রায় ২০ হাজার ভারতীয় পড়ুয়া ইউক্রেন থেকে ফিরে আসেন। তাঁদের বেশিরভাগই ইউক্রেনের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে পড়ছিলেন। এখন সেই যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই স্তিমিত। ভারতীয় পড়ুয়ারাও ফের ইউক্রেনে ফিরতে শুরু করেছেন।
কোন পথে পড়ুয়ারা ইউক্রেনে ফিরছে?
যুদ্ধের সময় পড়ুয়ারা পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, রোমানিয়ার সীমান্ত দিয়ে ইউক্রেনে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু, এই সব দেশের সঙ্গে ইউক্রেনের বিমান যাতায়াত এখনও বন্ধ। ফলে ব্যাপক নাকাল হতে হচ্ছে ভারতীয় পড়ুয়াদের। তাই পড়ুয়ারা বাধ্য হয়ে ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিমে মলডোভা হয়ে সেখানে প্রবেশ করছে। দিল্লি থেকে তাদের বিমান যাচ্ছে তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুলে। তাতেই সময় লাগছে আট ঘণ্টা। সেখান থেকে যাচ্ছে মলডোভার রাজধানী চিসিনাউতে।
সেখান থেকে আবার একাধিক বাসে সীমান্ত পেরিয়ে তারা ইউক্রেনে নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে। এই সব পড়ুয়াদের বেশিরভাগই ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর লভিভ, ইভানো ফ্রাঙ্কিভক্স এবং ভিনিৎসিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। এই সব এলাকায় যুদ্ধের তাণ্ডব কম ছিল। অনেকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে। সেখানে অবশ্য যুদ্ধ ভালোই প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু, বাধ্য হয়ে কিয়েভের মেডিক্যাল কলেজেও ফিরছেন পড়ুয়ারা।
ভারতীয় পড়ুয়ারা মলডোভা রুট দিয়ে ইউক্রেনে যাচ্ছেন কেন?
পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন, মলডোভা হয়ে ইউক্রেনে ঢোকা এখন সবচেয়ে সহজ। কারণ, মলডোভা তার ওপর দিয়ে যাতায়াত বা পর্যটন, সব ক্ষেত্রেই ই-ভিসা দিচ্ছে। তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে ভিসা পাওয়া যাচ্ছে। খরচাও অনেক কম। কিন্তু পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি এবং রোমানিয়ার ভিসা প্রক্রিয়া বেশ জটিল। বহু পড়ুয়ার ভিসার আবেদন এই সব দেশগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। শুধু তাই নয়, এই সব দেশের ভিসা পেতেও দীর্ঘ সময় লাগে। তাই অপেক্ষাকৃত কম খরচ এবং দ্রুততার জন্য পড়ুয়ারা মলডোভা দিয়েই ইউক্রেনে প্রবেশ করছে।
ছাত্রদের ইউক্রেনে ফিরতে কত খরচ লাগছে?
ইউক্রেন থেকে ফিরে আসার সময় পড়ুয়াদের একলক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল এয়ার টিকিট, ভিসা এবং অন্যান্য খরচ। আর, মলদোভায় ভিসার জন্য পড়ুয়াদের ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাগছে। মলদোভা হয়ে ভারতে আসা এক পড়ুয়া বলেন, 'এয়ার টিকিটের দাম লাগছে ৬০ হাজার টাকা। আর, মলদোভার ভিসা ফি ৪,৭০০ টাকা। অন্যান্য খরচ যোগ করলে সেটা দাঁড়াচ্ছে ১০ হাজার টাকা। এজেন্ট ধরলে অবশ্য তারা বেশি টাকা নিচ্ছে। ওই সব মিলিয়ে ১ লক্ষ টাকা খরচা করিয়ে দেবে।'
আরও পড়ুন- ‘জঙ্গলরাজ চলছে বাংলায়’, তৃণমূলকে তুলোধনা BJP-র কেন্দ্রীয় দলের সদস্যদের
ইউক্রেনে ফিরতেও কি ভারতীয় পড়ুয়াদের হয়রান হতে হচ্ছে?
মার্চে যখন যুদ্ধ শুরু হয়, ছাত্ররা টানা এক থেকে দু'দিন হেঁটে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া এবং স্লোভাকিয়া সীমান্ত পৌঁছেছিল। সীমান্ত পেরনোর পর ভারত সরকার 'অপারেশন গঙ্গা' নাম দিয়ে বিমানে চাপিয়ে তাঁদের ভারতে ফিরিয়ে এনেছিল। কয়েকজনকে মলদোভা হয়েও ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। এখন মাত্র তিন দিনেই ভিসা অনেকে পেয়ে যাচ্ছেন। তারপর ইস্তানবুলে আট ঘণ্টার জার্নি। সেখান থেকে মলডোভা আবার ১৬ ঘণ্টার জার্নি। তারপর বাসে চেপে সীমান্ত। সেই সীমান্ত পেরিয়ে আবার বাসযাত্রা। কমপক্ষে টানা ১০ ঘণ্টা বাসজার্নির পর পড়ুয়ারা নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছচ্ছেন। যা এক বিরাট যন্ত্রণা।
কেন পড়ুয়ারা যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে ফিরছেন?
ফিরে আসা পড়ুয়ারা চেয়েছিলেন, এদেশের মেডিক্যাল কলেজগুলোয় ভর্তি হতে। কিন্তু, সেই পথ বন্ধ করে দিয়েছে মোদী সরকার। সুপ্রিম কোর্টকে মোদী সরকার জানিয়েছে, ইউক্রেন থেকে ফিরে আসা মেডিক্যাল পড়ুয়াদের ভারতের মেডিক্যাল কলেজগুলোয় ভর্তি করানো যাবে না। আর, তাই উপায় না-পেয়ে ফের যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে ফিরে যাচ্ছেন ভারতীয় পড়ুয়ারা। ডাক্তারি বিভাগে তাঁদের শিক্ষা সমাপ্ত করার জন্য।
Read full story in English