রাজ্যের উপনির্বাচনের তিনটি আসনেই জিতে লোকসভা ভোটের ফল নিয়ে যে হতাশা দেখা দিয়েছিল তা অনেকটাই অপসারণ করতে পারল তৃণমূল কংগ্রেস। একই সঙ্গে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তারা ঘুরে দাঁড়াবে বলেও আশা করতে পারবে এবার।
তৃণমূল যে কটি আসনে জিতেছে তার মধ্যে রয়েছে খড়গপুর সদর- যা বিজেপির দুর্গ বলে পরিচিত। এই বিধানসভা আসন মেদিনীপুর লোকসভা আসনের অন্তর্গত, যে লোকসভার সাংসদ হলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের এলাকা। এ বছরের মে মাস পর্যন্ত দিলীপ ঘোষ খড়গপুর সদরের বিধায়ক ছিলেন, পরে তিনি সাংসদ হন।
তৃণমূল জিতেছে কালিয়াগঞ্জেও। লোকসভা কেন্দ্র রায়গঞ্জের অন্তর্গত এই বিধানসভা। লোকসভায় রায়গঞ্জ থেকে জিতেছেন বিজেপির দেবশ্রী চৌধুরী। কালিয়াগঞ্জে ২০১১ ও ২০১৬ সালে বিধানসভায় জিতেছিলেন কংগ্রেসের প্রমথনাথ রায়।
বৃহস্পতিবার তৃণমূলের তপন দেব সিংহ বিজেপির কমল চন্দ্র সরকারকে কালিয়াগঞ্জ কেন্দ্রে ২৪১৪ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন। লোকসভায় বিজেপি এখান থেকে ৫৭ হাজার ভোটে এগিয়েছিল।
খড়গপুর সদর কেন্দ্রে প্রদীপ সরকার বিজেপির প্রেমচন্দ্র ঝাকে ২০৫৮৩ ভোটে হারিয়েছেন। লোকসভা ভোটে এখান থেকে বিজেপি ৪৫ হাজার ভোটে এগিয়েছিল।
তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের দখলে রেখেছে করিমপুর বিধানসভাও। বিমলেন্দু সিংহরায় বিজেপির জয়প্রকাশ মজুমদারকে ২৩,৯১০ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন।
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে করিমপুর থেকে জিতেছিলেন বিজেপির মহুয়া মৈত্র। তিনি এখন দলের কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের সাংসদ। করিমপুর মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত, এখানকার সাংসদ তৃণমূল কংগ্রেসের আবু তাহের খান।
তিন আসনেই তৃণমূল জিতল কেন?
তৃণমূলের জয়ের একটা কারণ নেই। দেশব্যাপী এনআরসি আতঙ্ক, নতুন ভাবে উজ্জীবিত দল, প্রশান্ত কিশোরের সফল কৌশল, এবং দলীয় নেতাদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার ফলে পুনরুজ্জীবিত স্থানীয় নেতৃত্ব, এসবই তৃণমূলের জয়ে সহায়তা করেছে।
তৃণমূলের নেতার বলছেন এনআরসি আতঙ্ক বিশেষ করে গ্রামের দিকে বিজেপির বিরুদ্ধে গিয়েছে। আসামের এনআরসি মানুষের মনে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেইছিল, ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ যাওয়ায় আগুনে ঘৃতাহুতি হয়েছে। বাংলার বিভিন্ন জেলায় মানুষ মিউনিসিপ্যালিটি দফতর ও গ্রাম পঞ্চায়েত দফতরের সামনে বিভিন্ন নথি সংশোধন করার জন্য এবং জমির দলিল পাবার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। উদ্দেশ্য নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ।
বিজেপি নেতারা বারবার বলেছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেআইনি অভিবাসীদের তাড়ানোর জন্য এনআরসি হবে। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দাবি করেছেন এনআরসির মাধ্যমে ২ কোটি বাংলাদেশি থেকে রাজ্য থেকে তাড়ানো হবে।
অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং যুবক-যুবতীদের জন্য চাকরির সংস্থান না থাকাও বিজেপির বিরুদ্ধে গিয়েছে।
তৃণমূলের প্রবীণ নেতারা বলছেন, দলের দিদিকে বলো কর্মসূচি কাজে লেগেছে। লোকসভা ভোটের পর তৃণমূল স্তরের নেতা ও কর্মীদের কাট মানি ফেরানোর জন্য অনেকে ফোন করেছেন, ফলও পাওয়া গিয়েছে।
তৃণমূল প্রার্থী নির্বাচনেও এগিয়ে থেকেছে। নামি-দামি মুখের বদলে স্থানীয় স্তরের নেতাদের প্রার্থী করা হয়েছে, যাতে উপদলীয় কোন্দলও চাপা পড়েছে।
শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত সিনিয়র নেতাদের হাতে তৃণমল স্তরে প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রচার থেকে দূরে থেকেছেন।
শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন জনসভায় পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে দলীয় নেতাদের বাড়বাড়ির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।
উপনির্বাচনে যাতে হিংসাত্মক ঘটনা না ঘটে সেদিকেও লক্ষ্য রেখেছিল তৃণমূল। ভোটের দিন একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোনও রাজনৈতিক হিংসা হয়নি।
বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস জোট বেঁধে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টিও সম্ভবত তৃণমূলের পক্ষে গিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন বাম-কংগ্রেসের প্রচুর ভোট তৃণমূলে গিয়েছে।