ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের (এনএমসি) লোগোয় হিন্দুদের চিকিৎসার দেবতা ধন্বন্তরীর রঙিন ছবি। আর, তা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। এই ছবি সরানোর দাবি তুলেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) ছবিটি সরাতে কমিশনকে অনুরোধ করেছে। এই ব্যাপারে আইএমএর বক্তব্য, 'যে কোনও জাতীয় প্রতিষ্ঠানের লোগো দেশের নাগরিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে সমানভাবে প্রতিফলিত করে। সেকথা মাথায় রেখে সর্বক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকা দরকার। যা সমাজের কোনও অংশকে ক্ষুব্ধ করবে না।' আইএমএর এই চিঠির জবাবে এনএমসি জানিয়েছে, ধন্বন্তীর ছবিটি সবসময়ই সংস্থার লোগোর অংশ ছিল। তা অন্ধকার ছায়ামূর্তি হিসেবে ছিল। নতুন লোগোয় ছবিটিকে রঙিন করা হয়েছে। পাশাপাশি, নতুন লোগোয় 'ইন্ডিয়া'-র বদলে 'ভারত' শব্দ লেখা হয়েছে।
Advertisment
কেন নতুন লোগোর বিরোধিতা? লোগোর এই পরিবর্তনগুলো গত মাসে সামনে আসে। তার পর আইএমএ প্রতিবাদের আকারে অভিযোগ করে যে, এই সব পরিবর্তন চিকিৎসকদের 'মৌলিক মূল্যবোধ'-এ আঘাত করেছে। এব্যাপারে আইএমএ সভাপতি ডা. শরদ আগরওয়াল বলেন, 'চিকিৎসকরা জাতি, শ্রেণি, ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকের চিকিৎসা করার শপথ নেন। তাহলে ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে এমন প্রতিষ্ঠানের লোগোয় কেন ধর্মীয় সম্পর্ক থাকবে?' ডা. আগরওয়াল আরও জানিয়েছেন যে, চিকিৎসকরা বাড়িতে তাঁদের ধর্মবিশ্বাস অনুসরণ করতেই পারেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর তা করার কথা নয়। আইএমএ সভাপতি বলেন, 'বিতর্ক তৈরি করা এনএমসির কাজ নয়। তাদের উচিত দেশের চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করা। আইএমএ এনএমসিকে এমন লোগো গ্রহণ করতে অনুরোধ করেছে, যা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হবে। সমস্ত নাগরিকদের প্রতি ডাক্তারদের শপথ এবং কর্তব্যবোধকে তুলে ধরবে। বিশেষ করে এনএমসির মত কোনও সংস্থাকে যাতে ধর্মপরিচয়ের প্রতীক বলে অন্তত মনে করা না-হয়, তা নিশ্চিত করবে।'
স্বাস্থ্য কমিশনের লোগোয় ধন্বন্তরী কেন? ধন্বন্তরীকে আয়ুর্বেদ এবং ওষুধের দেবতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের কর্তারা মনে করেছেন, এই ছবি একটি চিকিৎসা সংস্থার লোগোতে উপযুক্ত সংযোজন। স্বাস্থ্য কমিশনের এক কর্তা এই প্রসঙ্গে বলেন, 'দুটি সাপ দ্বারা পরিবেষ্টিত কর্মীরা- যা গ্রীক পুরাণে রয়েছে, সেই ক্যাডুসিয়াস যদি ডাক্তারদের লোগো হতে পারে, তবে আমরা কেন আমাদের নিজস্ব পুরাণ থেকে প্রতীক ব্যবহার করতে পারব না?' জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক উভয়ের কর্তারাই জোর দিয়ে দাবি করেছেন যে ধন্বন্তরী সর্বদা জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের লোগোর অংশ ছিল। পুরোনো লোগোটি ২০২২ সালে গৃহীত হয়েছিল। তার আগে ২০২০ সালে 'মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া' নাম বদলে হয়, 'ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন'।
ধন্বন্তীর সিলুয়েট-সহ এমএনসির পুরোনো লোগো।
Advertisment
তাহলে এখন কেন প্রতিবাদ করছেন চিকিৎসকরা? ডা. আগরওয়াল বলেছেন যে সমস্যাটি প্রচারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আইএমএ ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, 'জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জিজ্ঞাসা করেছে কেন ডাক্তাররা এখন আপত্তি করছেন? কারণ, লোগোয় তো আগেও ধন্বন্তরীর ছবি ছিল। তবে, ছবিটি স্পষ্টভাবে দেখা যেত না। এই কারণেই ছবিটিকে রঙ করা হয়েছে। প্রচারে আনা হয়েছে।'
এর আগেও বিবাদ জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বিরুদ্ধে এর আগেও চিকিৎসকদের একাংশ গেরুয়াকরণের অভিযোগ করেছেন। গত বছরই স্নাতকস্তরে চিকিৎসা প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন 'চরক শপথ' চালু করেছে। তার পরও চিকিৎসকদের একাংশ এভাবেই প্রতিবাদ করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল যে, 'চরক শপথ' ডাক্তার কোর্সের শপথের বদলে চালু করা হয়েছে। কিন্তু, স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, 'চরক শপথ' কোর্সের শুরুতে চিকিৎসা বিভাগের ছাত্রদের নিতে হবে। ছাত্ররা স্নাতক হলে, আগের মতই চিকিৎসকের শপথই গ্রহণ করবেন। এর পাশাপাশি, গত বছর মেডিক্যাল পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে যোগের অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করেছে জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। তার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করেছেন চিকিৎসকদের একাংশ।