দীর্ঘ মন্দার পরে, পেঁয়াজের দাম আবার বেড়েছে। যা বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্বেগের কারণ। ফলে অর্থ মন্ত্রক শনিবার (১৯ আগস্ট) পেঁয়াজের ওপর ৪০ শতাংশ রফতানি শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পেঁয়াজ নিলাম বন্ধ করে দিয়েছেন।
আগস্টের শুরু থেকে দাম বেড়েছে
আগস্টের শুরু থেকেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। নাসিকের নিফাদ তালুকের লাসালগাঁওয়ের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের গড় দাম ১ আগস্ট হয়েছে প্রতি কুইন্টাল ১,৩৭০ টাকা। ১৯ আগস্ট প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ২,০৫০ টাকা। এর আগে, মার্চ-মে মাসে, পেঁয়াজ চাষিরা আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেই সময় এই পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের মূল্য ঠেকেছিল কুইন্টাল প্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। বর্তমানে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির দুটি দিক রয়েছে: প্রথমত, সঞ্চিত পণ্যের ঘাটতি। দ্বিতীয়টি, পেঁয়াজ চাষের জমির অভাব। কারণ, পেঁয়াজ হল বিনস, মটরশুটি বা অন্যান্য সবজি চাষের থেকে ভিন্ন। পেঁয়াজ সারা বছর জন্মায় না।
রবি ফসল চাষে জোর
কৃষকরা সাধারণত এমন তিনটি ফসল চাষে জোর দেন, যা দীর্ঘদিন ধরে বিক্রি হয়। তার মধ্যে একটি হল রবি ফসল। যা গ্রীষ্মকালীন ফসল, ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে বপন করা হয় এবং মার্চের পরে কাটা হয়। খরিফ শস্য, যা জুন-জুলাই মাসে বপন করা হয় এবং সেপ্টেম্বরের পরে কাটা হয়। আর, পরবর্তী খরিফ ফসল, যা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বপন করা হয় এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে কাটা হয়। এই তিনটি ফসলের মধ্যে রবি সবচেয়ে কম আর্দ্রতার কারণে সঞ্চয় করার জন্য উপযুক্ত। তা সঞ্চয় করা হয় 'কান্ডা চাউল' নামে মাঠের কাঠামোয়। কৃষকরা পেঁয়াজগুলোকে আরও ভালো রাখার জন্য মাঠের মধ্যে গর্ত করে, তাতে পেঁয়াজগুলো রেখে দেন।
গত বছর চাষ কমেছে
কিন্তু, গত বছর দেশে পেঁয়াজের চাষ কমেছে। ক্রপ অ্যান্ড ওয়েদার ওয়াচ গ্রুপ জানিয়েছে যে পেঁয়াজের জন্য ৩.৭৬ লক্ষ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল। কিন্তু, তার বদলে ৩.২৯ লক্ষ হেক্টরের বেশি জমিতে পেঁয়াজ বপন করা হয়েছে। মার্চ-এপ্রিল মাসে রবি ফসলের ক্ষতির কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল। এই সময় মহারাষ্ট্র-সহ বেশিরভাগ পেঁয়াজ-উৎপাদনকারী রাজ্যগুলো অমৌসুমি বৃষ্টি এবং শিলাবৃষ্টির মুখে পড়েছিল। যার ফলে চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উদাহরণস্বরূপ, নাসিকে মার্চ মাসে একাধিক দিনে শিলাবৃষ্টি হয়েছিল। আর, ঠিক সেই সময় কৃষকরা তাঁদের ফসল কাটা শুরু করেছিলেন। অনুমান বলছে, অতিবৃষ্টি প্রায় ৪০ শতাংশ পেঁয়াজ চাষকে প্রভাবিত করেছে। শুধু তাই নয়, প্রায় ২০ শতাংশ চাষিকে ফসলের গুণমান নিয়ে উদ্বেগের কারণে ফের চাষ করতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন- ‘শেষ ১৫ মিনিটের সন্ত্রাস’, চন্দ্রযানের সাফল্য নিয়ে কেন এখনও চিন্তায় ইসরো?
আগেই কাটতে বাধ্য হন
কৃষকরা সাধারণত জুনের পরে তাদের রবি ফসল পেঁয়াজ কাটেন। কিন্তু, অনেক সময়ই দেখা যায় যে তাঁরা একাজ মে মাস থেকেই করতে বাধ্য হচ্ছেন। আর, এটা তাঁরা করতে বাধ্য হন সঞ্চিত পণ্যের গুণমান নিয়ে উদ্বেগের কারণে। তাই, মে মাসে অনেক সময়ই দেখা যায় যে বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ চলে এসেছে। যা নিম্নমানের আর, একইসঙ্গে দাম কম। এই কথা মাথায় রেখে মহারাষ্ট্র সরকার মার্চ মাসে পেঁয়াজ চাষিদের প্রতি কুইন্টাল ৩০০ টাকা করে ভর্তুকি দিয়ে একটি বিশেষ প্রকল্প ঘোষণা করেছিল। বেশিরভাগ কৃষক বলেছেন যে এই প্রকল্পের সুবিধা তাঁরা এখনও পাননি। ফলে চাহিদা এবং সরবরাহের গরমিলের কারণেই বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। যা স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।