১৯৫৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার দলিত অনুগামীকে সঙ্গে নিয়ে হিন্দুত্ব ছেড়ে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। আম্বেদকরের বৌদ্ধ ধর্মগ্রহণ ভারতের দলিত আন্দোলনে নতুন সাড়া জাগায় এবং হিন্দুত্বের চতুর্বর্ণ প্রথার শৃঙ্খল থেকে তাঁদের মুক্তি দিয়ে দলিতদের নিজস্ব স্বর গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
আম্বেদকর দীর্ঘদিন ধরেই হিন্দুত্বের সমালোচক ছিলেন এবং ভারতীয় সমাজের পক্ষে একে ব্রিটিশদের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক বলে বোধ করতেন। ১৯৩৬ সালে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের সবাইকে খুব সুনির্দিষ্ট ভাবে বলছি, মানুষ ধর্মের জন্য, ধর্মের জন্য মানুষ নয়। মানুষের মত ব্যবহার পেতে চাইলে ধর্মান্তরিত হোন”।
অঙ্কের শিক্ষক থেকে হিজবুলের কম্যান্ডার, কে এই নাইকু?
এরপর ২০ বছর ধরে তিনি কোন ধর্ম তাঁর পক্ষে সবচেয়ে ভাল, তা স্থির করেন। তিনি এ বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে ধর্মেই তিনি যান না কেন, তা হত হবে ভারতের মাটির ধর্ম। শেষ পর্যন্ত তিনি বৌদ্ধ ধর্মকে বেছে নেন এবং বৌদ্ধ ধম্মের নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করেন, ধর্মের কিছু অংশ বদলে নেন, যেগুলি তাঁর বিশ্বাসমতে বৌদ্ধধর্মের সার্বিকতার পরিপন্থী।
আম্বেদকরের বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে গবেষকরা প্রচুর কাজ করেছেন। কেউ মনে করেন, এ ছিল আম্বেদকরের রাজনৈতিক পদক্ষেপ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি দলিতদের আলাদা নির্বাচকমণ্ডলীর দাবি করে আসছিলেন, কিন্তু তাতে কৃতকার্য হননি। গেইল ওমভেটের মত সমাজতাত্ত্বিকরা মনে করেন, তাঁর বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ ছিল এ সম্পর্কিত রাজনৈতিক প্রতিবাদ।
কেন সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেল অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ?
দ্বিতীয়ত, আরেকটা মতামত রয়েছে, যে তাঁর এই ধর্মান্তরণ ছিল হিন্দুত্ব সম্পর্কে তাঁর সারা জীবনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। তা ছাড়া বেশ কিছু রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বও আম্বেদকরের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল- যাঁদের মধ্যে ছিলেন মৌর্য্য সম্রাট অশোক এবং দ্বাদশ শতাব্দীর দক্ষিণ ভারতের দলিত শহিদ নন্দনর, যিনি হিন্দুত্বের মতবাদকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন।
সবচেয়ে বড় কথা হল, আম্বেদকর সত্যিই বিশ্বাস করতেন বৌদ্ধধর্ম যুক্তি ও আধুনিকতার স্পিরিট বহন করে। আম্বেদকরের যুক্তি, নৈতিকতা ও ন্যায়ের জটিল চাহিদাগুলি তাঁর বৌদ্ধ ধর্মগ্রহণের মধ্যে দিয়ে পূরিত হয়েছিল বলেই মনে করা হয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন