Advertisment

বিশ্লেষণ: বাংলাদেশের নোবেল লরিয়েট ইউনূস কেন গ্রেফতারির মুখে

বাংলাদেশের সংবাদপত্র ডেলি স্টারে এক খোলা চিঠি প্রকাশ করে ইউনূস নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করলে কেমন হয় সে নিয়ে জনগণের কাছে প্রশ্ন রাখেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Yunus, Nobel

ফাইল ছবি

ঢাকার এক শ্রম আদালত বাংলাদেশের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। ১৯৮৩ সালে ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাঙ্কের আইটি বিভাগ গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের তিন কর্মীকে বরখাস্তের মামলায় শুনানিতে গরহাজির থাকার জন্য ইউনূসের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে।

Advertisment

ওই সংস্থার তিন কর্মচারী ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেন। কর্মক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন তৈরির দায়ে তাঁদের গত জুন মাসে বরখাস্ত করা হয়েছিল বলে জানান তাঁরা।

২০০৬ সালে তিনি ও তাঁর গ্রামীণ ব্যাঙ্ক নিচে থেকে অর্থনীতি ও সামাজিক বিকাশ সৃষ্টির জন্য নোবেল পুরস্কার পান।

ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কী করে?

ইউনূস বিশ্বাস ও নির্ভরতার নীতর উপর ভিত্তি করে গ্রামীণ বাংলাদেশের দরিদ্রতম মানুষদের ক্ষুদ্র ঋণ দেবার উদ্দেশ্যে এই ব্যাঙ্ক তৈরি করেন। এদের ওয়েবসাইট অনুসাপে এই ব্যাঙ্ক ৮০ হাজার গ্রামে পরিষেবা প্রদান করে থাকে। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মোট ২,৫০০ শাখা রয়েছে। একে ব্যাপক সাফল্যের কাহিনি বলেই দেখা সম্ভব। প্রয়োজনীয় ঋণদানের ব্যাপারে দরিদ্রদের ক্ষমতায়ন যেমন হয়েছে, তেমনই প্রদত্ত ঋণের অর্থ ফেরত পাবার হারও উচ্চমানের হবার কারণে এ মডেল টিকেও গিয়েছে।

নরওয়ের নোবেল কমিটি ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাঙ্কের এই প্রয়াসকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বলা হয়েছে, "জনসাধারণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ দারিদ্র্যকে ভেঙে যদি না বেরোতে পারে তাহলে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি আসতে পারে না। ক্ষুদ্র ঋণ তেমনই এক উপায়। নিচের থেকে বিকাশ একই সঙ্গে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকেও এগিয়ে নিয়ে যায়।"

আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার কারণ কী?

২০১৮ সালে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেছিলেন, "আর্থিক ব্যবস্থা অন্যভাবে তৈরি করা উচিত। যদি আপনার কিছু না থাকে, তাহলে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার আপনি পাবেন। প্রশ্ন হল, রাষ্ট্রের দায়িত্ব কি যার হাতে প্রচুর অর্থ রয়েছে, তার হাতে আরও অর্থ জোগানো না কি যার অর্থ নেই তার হাতে অর্থ জোগানো?"

ইউনূস কীভাবে বিতর্কে জড়ালেন?

ইউনূস এই প্রথমবার বিতর্কে জড়ালেন না। ২০১৫ সালে তাঁকে বাংলাদেশের রাজস্ব কর্তৃপক্ষ সমন পাঠায়। তাঁর বিরুদ্ধে ১.৫১ মিলিয়ন ডলার কর বাকির অভিযোগ ছিল।

২০০৯ সালে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে তদন্ত হয়েছে, অভিযোগও এসেছে। ২০০৭ সালে ইউনূস সামান্য কিছুদিনের জন্য রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ করার পর থেকেই এই সমস্যার সূত্রপাত।

বাংলাদেশের সংবাদপত্র ডেলি স্টারে এক খোলা চিঠি প্রকাশ করে ইউনূস নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করলে কেমন হয় সে নিয়ে জনগণের কাছে প্রশ্ন রাখেন। ডেলি স্টারের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল, "তাঁর মতে বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ দেশের সম্ভাবনা বিনষ্ট করতে চায় এবং ব্যাপক পরিবর্তন ছাড়া দেশ তার চূড়ান্ত প্রাপ্য পেতে পারে না।"

তিনি আরও বলেন, "এতদিনের হতাশা কাটিয়ে ওঠার সময় হয়েছে এবং এবার সময় বাংলাদেশ যে রাজনৈতিক পরিসরের স্বপ্ন দেখে সেখানে পৌঁছানোর।"

২০১০ সালে একটি ড্যানিশ তথ্যচিত্রে অভিযোগ করা হয় ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ১০০ মিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার করেছেন। তবে এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক সরকারের নজরদারিতে আসে। অভিযোগ উঠেছিল ব্যাঙ্ক নির্দিষ্ট অঙ্ক নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করছে না। এই অভিযোগের ভিত্তিতে সরকার ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয়। এর প্রেক্ষিতে "রাজনৈতিক আক্রমণের হাত থেকে" ইউনূসকে বাঁচাতে "ফ্রেন্ডস অফ গ্রামীণ" নামে একটি গ্রুপ তৈরি হয়।

২০১১ সালে দেশের অবসর আইন ভঙ্গ করার দায়ে ইউনূসকে ব্যাঙ্কের প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়। দেশের অবসরের বয়স ৬০ হলেও, ইউনূসের সে সময়ে বয়স ছিল ৭০। ২০১১ সালের মে মাসে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ক রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দেয়।

Read the Full Story in English

Bangladesh Explained
Advertisment