Advertisment

Explained: বিমানে মাঙ্কিপক্স আক্রান্তের সঙ্গে ভ্রমণ করলে কতটা ঝুঁকি অপেক্ষা করছে আপনার জন্য?

যাদের পক্সের মতো ফুসকুড়ি দেখা দিয়েছে তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা উচিৎ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Express Explained, Explained Health, monkeypox, monkeypox cases, monkeypox cases in India, monkeypox vaccination, monkeypox symptoms, monkeypox deahts, is monkeypox deadly"

এই ধরনের ক্ষেত্রে, কারা এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যেতে পারে?

একই বিমানে মাঙ্কিপক্স আক্রান্তের সঙ্গে ভ্রমণ করলেও আপনার মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থাৎ কোথাও করোনা আর মাঙ্কিপক্সের মধ্যে আমরা যদি একটি তুলনামূলক আলোচনা করি তাহলে দেখা যাবে করোনা যেভাবে আমাদের সংক্রমিত করেছে, মাঙ্কিপক্সের ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

Advertisment

সংক্রমণটি প্রধানত ত্বক থেকে ত্বকে, মুখ থেকে মুখের মাধ্যমে অথবা মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত কারুর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে যদি কেউ লিপ্ত হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে সংক্রমণের একটা গুরুতর সম্ভাবনা থাকে।  ত্বকের ক্ষত বা র‍্যাশে থাকা তরল বা লিনেনগুলির মতো দূষিত উপাদানের সঙ্গে পরোক্ষ যোগাযোগ থেকেও মানুষ জন এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। মাঙ্কিপক্স বিরল ও স্বল্পপরিচিত একটি রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাগুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও অবসাদ। জ্বর কমলে শরীরে দেখা দেয় ফুসকুড়ি। অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। পরে অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলায়। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে ভঙ্গুর ত্বক, শ্বাসনালী, চোখ, নাক বা মুখের মাধ্যমে।

ভারতে বেশ কয়েটি মাঙ্কিপক্স আক্রান্তের ঘটনা সামনে আসতেই মানুষজনের মধ্যে তৈরি হয়েছে নয়া আতঙ্ক। রাজধানীতে থাবা চওড়া হচ্ছে মাঙ্কিপক্সের। এবার আরও এক নাইজেরিয়ান তরুণ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলেন। দিল্লিতে থাকা ৩১ বছরের ওই নাইজেরিয়ান নাগরিকেরও মাঙ্কিপক্স টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। দিল্লিতে এখনও পর্যন্ত মোট তিন জন মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলেন। রবিবার এবং সোমবার দিল্লির লোক নায়ক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নাইজেরিয়ার তিন নাগরিকের মধ্যে দু’জনের শরীরেই মিলেছে মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস। উল্টোদিকে, এদিনই দিল্লিতে মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তিকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

সোমবারও দিল্লিতে এক নাইজেরিয়ান নাগরিকের মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার খবর মেলে। গতকাল ওই ব্যক্তির শরীরে মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস মেলার পর আজ ফের এক নাইজেরিয়ান নাগরিকের শরীরেও একই ভাইরাসের হদিশ মিলল। জানা গিয়েছে, মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত দুই নাইজেরিয়ানই দিল্লির রেস্তোঁরায় কাজ করেন। বিশ্বের বহু দেশে ইতিমধ্যেই আতঙ্ক তুঙ্গে তুলেছে এই ভাইরাস। ভারতে এখনও পর্যন্ত আট জন মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন। কেরলে পাঁচ আক্রান্তের প্রত্যেকেরই সংযুক্ত আরব আমিরশাহী থেকে ফেরার ইতিহাস ছিল। তবে দিল্লিতে তিন আক্রান্তের অবশ্য বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস নেই। মঙ্গলবার সংসদে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনসুখ মাণ্ড্যভিয়া বলেন, “এখনও পর্যন্ত দেশে আটটি কেস (মাঙ্কিপক্স) শনাক্ত করা হয়েছে। যাঁদের মধ্যে পাঁচজনের বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে। তাঁরা দুবাই বা শারজাহ থেকে ফিরেছিলেন।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা কোভিড-১৯ মহামারীর সময় দেখেছি থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের পরেও কিছু মানুষকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তাঁরা খুব সহজেই দেশে ঢুকে পড়েন, কারণ তাঁরা প্যারাসিটামল খেয়ে নেন। আমরা দুবাই সরকারকে চিঠি দিয়েছি। তাঁদের ট্রেসিংয়ে আরও জোর দিতে আবেদন করা হয়েছে। ওঁদের কাছে এব্যাপারে তথ্য থাকলে দ্রুত আমাদের জানাতে আবেদন করা হয়েছে।” এদিকে, ভাইরাল ইনফেকশন ডিটেক্ট করার ব্যাপারে যাবতীয় তৎপরতা নিতে এবার আরও উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। পরিস্থিতি নিরীক্ষণের জন্য নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ডাঃ ভি কে পলের নেতৃত্বে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্সে স্বাস্থ্য মন্ত্রক, ফার্মাসিউটিক্যাল এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের সচিবদের রাখা হয়েছে।

এই ধরনের ক্ষেত্রে, কারা এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যেতে পারে?

সংক্রমণটি প্রধানত ত্বক থেকে ত্বকে, মুখ থেকে মুখের মাধ্যমে বা মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ রয়েছে ফুসকুড়ি এমন কারুর সঙ্গে  যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলে ভাইরাসটি আপনার দেহে প্রবেশ করতে পারে। ফুসকুড়িতে থাকা থাকা তরল বা লিনেনসের মতো দূষিত উপাদানের সঙ্গে পরোক্ষ ভাবেও মানুষজন এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এটা আমাদের সকলের জন্যই স্বস্তির খবর, পাবলিক প্লেসে একসঙ্গে যাতায়াত করলে একজনের শরীর থেকে অপর জনের শরীরে মাঙ্কিপক্স সাধারণ ভাবে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। যদিও তত্ত্বগতভাবে ধরে নেওয়া হয়, ড্রপলেটের মাধ্যমে , শ্বাসনালী দিয়ে এই ভাইরাস শরীরের ভিতর প্রবেশ করে তাহলে সেক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী এবং ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের প্রয়োজন হবে। এবার একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, কোভিডের কারণে বিমানে এখনও আমরা মাস্ক ব্যবহার করে থাকি। সেক্ষেত্রে মাঙ্কিপক্স কোন ভাবেই শরীরের ভিতর প্রবেশের কোন সম্ভাবনা থাকবে না।

কিভাবে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি?

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) এর এপিডেমিওলজি এবং কমিউনিকেবল ডিজিজেস বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ডাঃ আর গঙ্গাখেদকর একটি সাক্ষাত্কারে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন অনেকের সঙ্গে যৌন মিলন বন্ধ করা দরকার। যাদের একাধিক সেক্স পার্টনার রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় অনেকটাই বেশি। অবাধ যৌন মিলনের ক্ষেত্রে অবশ্যই কনডম ব্যবহার করা উচিত।

তবে ইউনাইটেড স্টেটস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সতর্ক করে বলেছে কেবল কন্ডোমের ব্যবহার নয় তার সঙ্গে গভীর চুম্বন এড়ানোটাও বিশেষ ভাবে দরকার। ত্বকের ক্ষতের বিষয়টিও মাথায় রাখা দরকার।

যাদের পক্সের মতো ফুসকুড়ি দেখা দিয়েছে তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা উচিৎ। প্রয়োজনে ২১ দিন নিজেকে আইসোলেট করে রাখুন। তবে গত ২১ দিনের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস থাকলে মাঙ্কিপক্স হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এপর্যন্ত ভারতে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের সংখ্যা ৮।

টিকা দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি?

ডাঃ গঙ্গাখেদকর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন: এই রোগে “মৃত্যুর ঝুঁকি ১ শতাংশের কম। তিনি যোগ করেছেন: “রোগটি খুব গুরুতর নয়, অন্তত এই মুহূর্তে গণটিকাকরণের কোন প্রয়োজন নেই। পশ্চিমের দেশে যেখানে এই রোগে প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সেখানে এই সংখ্যাটি ভারতের ক্ষেত্রে অনেক কম। বেশিরভাগ রোগীকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করা সম্ভব। 

monkeypox
Advertisment