বিজেপি প্রকাশ্যেই তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-কে তাদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ডাক দিয়েছে। বিজেপি নেতা জিভিএল নরসীমা রাও, যিনি নিজেও অন্ধ্র প্রদেশের, তিনি দুবার প্রশ্ন করেছেন টিডিপি তাঁর দলের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত রয়েছে কিনা, এবং যদি টিডিপি চায়, তাহলে সেনিয়ে কথা বলার ডাকও দিয়েছেন।
২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে বিধানসভা ভোটে ১ শতাংশেরও কম ভোট পাওয়া দলকে ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জেতা দল একত্রিত হওয়ার ডাক দিচ্ছে কেন? এই আহ্বানের পিছনে রয়েছে দক্ষিণ ভারতের রাজনীতির বর্তমান অবস্থা এবং বিজেপির বৃ্দ্ধির পরিকল্পনা।
অন্ধ্র প্রদেশের পরিস্থিতি
কর্নাটক ছাড়া দক্ষিণের কোনও রাজ্যেই বিজেপির বৃদ্ধির পরিমাণ খুব ভাল নয়। টিডিপি বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোয় তারা একটু আশার আলো দেখতে শুরু করেছে। বিজেপি ক্রমাগত টিডিপিকে দুর্বল করার চেষ্টা করে গিয়েছে। টিডিপি একসময়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র সঙ্গে ছিল, কিন্তু এ বছেরের লোকসভা নির্বাচনের আগে তিক্ততার সঙ্গে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
আরও পড়ুন, কালীপুজো এসে গেল- পরিবেশবান্ধব বাজির কী খবর?
২০১৪ সালে ১১৭টি আসন নিয়ে অন্ধ্র প্রদেশে ক্ষমতায় আসা টিডিপি এ বছরের বিধানসভা ভোটে রাজ্যের মোট ১৭৫টি আসনের মধ্যে মাত্র ২৩টি আসন পায়। লোকসভায় তাদের আসন সংখ্যা ১৬ থেকে মাত্র ৩-এ নেমে আসে। নির্বাচনে খারাপ ফলের জন্য টিডিপি ও তাদের নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু ক্রমাগত ধাক্কা খেতে থাকেন। সম্প্রতি বিজেপি রাজ্যসভায় টিডিপি-র তিন সাসংদকে নিজেদের দলে নিয়ে এসেছে। এখন রাজ্যসভায় টিডিপির শক্তি মাত্র ২।
এদিকে ওয়াই এস জগমোহন রেড্ডির রাজ্য সরকার চন্দ্রবাবু এবং তাঁর দলের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় চাপ দিতে শুরু করেছে। টিডিপি অবশ্য বলছে, এই মামলাগুলি ভুয়ো এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ক্ষমতা হারানোর পর বিভিন্ন আঙিনা থেকে ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছেন নাইডু, এতে কোনও সন্দেহ নেই।
অবিভক্ত অন্ধ্র প্রদেশে একসময়ে রাজ করতে থাকা কংগ্রেস বিধানসভা ও লোকসভায় ২ শতাংশের কম ভোট পেয়ে নির্জীব হয়ে পড়েছে।
চন্দ্রবাবুর বিবৃতির আসল মানে…
বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে নাইডুর বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বিজেপি তাদের থাবার শক্তি বাড়িয়েছে।
চন্দ্রবাবু নাইডুর যে বিবৃতি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা হল, "অন্ধ্রের বিশেষ মর্যাদার জন্য আমরা বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তার চূড়ান্ত মূল্য দিতে হচ্ছে। আমরা শুধু আর্থিকভাবে নয়, রাজনৈতিকভাবেও ক্ষতির সামনে পড়েছি। কেন্দ্র আমাদের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে, এবং টিডিপি ক্ষমতা হারিয়েছে এবং খুব খারাপ ফল করেছে... আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে ভবিষ্যতে আমরা যেন এ ধরনের ভুল আর না করি।"
আরও পড়ুন, ক্রাইম ব্যুরোর রেকর্ডে প্রকাশ করা হল না গণপিটুনি বা ধর্মীয় হত্যার পরিসংখ্যান
নাইডুর এই বিবৃতিকে বিজেপি ধরে নিয়েছে এনডিএ-তে ফেরার সংকেত হিসেবে, এবং তাদের নেতারা একে প্রত্যাখ্যান করেছেন। রাও বলেছেন, টিডিপি-র সঙ্গে জোট করার কোনও প্রয়োজন বিজেপির নেই, কারণ টিডিপি দল হিসেবে শুধু বিশ্বাসযোগ্যতাই হারায়নি, আদর্শচ্যুতও হয়েছে। তিনি বলেন, নাইডু যদি টিডিপিকে বিজেপির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চান, তাহলে তিনি সে নিয়ে নিজের দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
বিজেপি ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা টিডিপি-র সঙ্গে আরেকবার জোটে যাবে না। দলের জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ সে সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। বিজেপির রাজ্য নেতারাও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন, টিডিপি-র সঙ্গে কোনও জোট হওয়া উচিত নয়।
নিজের প্রয়োজনমাফিক ব্যবহারের চেষ্টা
কিন্তু বিজেপি এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চায়। এর ফলে দল হিসেবে অন্ধ্র প্রদেশে বিজেপি তাৎপর্যপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠবে। রাজ্যে কোনও জোট হলে টিডিপির গলার জোর বেশি থাকবে বুঝেই বিজেপি এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। যেখানে তারা নিজেরা অধিক ক্ষমতাশালী হবে না, তেমন জোট তারা করবে না। ১৭৫ টি বিধানসভার আসনের একটিতেও জেতেনি তারা, সেখানে টিডিপি-র ২২ জন বিধায়ক রয়েছে। লোকসভা ভোটে তাদের ভোটশেয়ার ০.৯৬ শতাংশ।
তবে বিজেপির এই আহ্বানের ফলে টিডিপি-র আভ্যন্তরীণ সংকট বাড়বে, দলের মধ্যে সংশয় আরও জোরদার হবে। মনে রাখতে হবে, এখন প্রায় প্রতিদিন টিডিপি-র কোনও না কোনও নেতা দুর্নীতির নতুন অভিযোগের মুখে পড়ছেন। বিজেপি সাম্প্রতিকতম যে কৌশল নিয়েছে, তাতে টিডিপি থেকে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে।
বিজেপি-র সামনে উদাহরণ রয়েছে মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার। ২০১৪ সাল পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে তারা ছিল শিবসেনার ছোট ভাই। ২০১৪ সাল পর্যন্ত হরিয়ানায় তারা ছিল ক্ষুদ্র শক্তি। কিন্তু ২০১৪ সালে বিপুল জয়ের পর তারা একই কৌশল নিতে চলেছে অন্ধ্র প্রদেশের ক্ষেত্রেও। তাদের মূল বিরোধী দল তেলুগু দেশম পার্টির দুরবস্থা দেখে তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়ছে।
Read the Story in English