হিমাচল প্রদেশে শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সিমলার এক শিব মন্দিরের ধ্বংসস্তূপ থেকে আরেকটি লাশ উদ্ধারের পর মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৫-এ পৌঁছেছে। ওই মন্দির-সহ সিমলায় তিনটি বড় ভূমিধসে ঘটনাস্থলেই সঙ্গে সঙ্গে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আর, মন্দিরটির ধ্বংসস্তূপে এখনও ছয়জনের চাপা পড়ে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। হিমাচল বরাবরই বর্ষাকালে ভূমিধসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বছরের পর বছর ধরে খাড়া এবং ঢালু পার্বত্য ভূমি, ভূতাত্ত্বিকভাবে ধসপ্রবণ হিমালয়, বন ধ্বংস, রাস্তা-নির্মাণ, কৃষির ধরণে পরিবর্তনের ফলে হিমালয়ের এই ধসপ্রবণতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা দূর করার জন্য আরও জলের প্রয়োজন বলেই ভূতাত্ত্বিকদের মত।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের (এনআইডিএম) 'ল্যান্ডস্লাইড হ্যাজার্ড জোনেশন অ্যাটলাস অফ ইন্ডিয়া' হিমাচল প্রদেশের বেশিরভাগ অংশকে- ৩৮,০০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকাকে 'অত্যন্ত' ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের তকমা দিয়েছে। যার মধ্যে ভূমিধসের প্রবণতা বেশি বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। তার মধ্যে একটি ছোট এলাকা (প্রায় ৭,৮০০ বর্গ কিলোমিটার) সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বা 'খুব উচ্চ থেকে গুরুতর' ভূমিধসের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল বলে পরিচিত। ২০২২-এ প্রকাশিত এনআইডিএম -এর 'আর্কাইভাল রেকর্ডস অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন অফ সোসিও-ইকোনমিক্যালি সিগনিফিক্যান্ট ল্যান্ডস্লাইডস ইন ইন্ডিয়া'-য় ভারতে কয়েক দশক ধরে হয়ে চলা সমস্ত বড় ভূমিধসের বিবরণ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হিমাচল প্রদেশের উল্লেখযোগ্য ভূমিধসের ঘটনাগুলোও।
সিমলার স্নোডনে এক বিশাল ভূমিধসে ১৯৭১ সালে নির্মাণাধীন ছ'তলা মেডিক্যাল কলেজ ধ্বংস হয়ে যায়। ভূমিধসের জায়গায় একটি ২১.৫ মিটার উঁচু, ৩৭ ডিগ্রি ঢালু একটি ডিসপেনসারি এবং একটি হাসপাতাল ভবন বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছিল। এই স্থায়িত্বে উত্সাহিত হয়ে ছ'তলা বিল্ডিংটি সম্প্রসারণ করা হচ্ছিল। কিন্তু, এতে ডিসপেনসারি ভবনে ছোটখাটো ফাটল দেখা দেয়। আর, ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা ভূমিধসে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এই ভূমিধস সিমলায় অযৌক্তিক নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে একটা বার্তা পাঠিয়েছিল। সেই সময়ে করা মূল্যায়ন অনুসারে, ভূতাত্ত্বিকের ছাড়পত্র শুধুমাত্র দোতলা পর্যন্ত দেওয়া ছিল। কিন্তু, সম্প্রসারণ, সেই অনুমতি ছাপিয়ে করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন- ফিরহাদের সংসারে অশান্তি! কংগ্রেসের হাত ধরলেন মেয়রের জামাই
এনআইডিএম রিপোর্ট বলছে, সিমলা শহরের বেশিরভাগই ৪৫ থেকে ৭৫ ডিগ্রি ঢালে নির্মিত। ৬০ ডিগ্রি ঢালে নির্মিত কেন্দ্রীয় সিমলার প্রায় ৯০ শতাংশ নির্মাণ। চার থেকে পাঁচ তলা উঁচু বিল্ডিং পর্যন্ত ওই ঢালে তৈরি হয়েছে। খরচ কমানোর জন্য বিল্ডিংয়ের স্তম্ভগুলো আলগা মাটিতেই পোঁতা হয়েছে। যা এই ধরনের নির্মাণকে ভূমিধসের জন্য অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। শুধু তাই নয়, এনআইডিএম রিপোর্ট বলছে, সিমলা শহরটি গড়ে উঠেছিল বিংশ শতাব্দীর গোড়ায়। সেই সময় সেখানে জনসংখ্যা ছিল ২৫,০০০। এখন সেখানে প্রায় ৩,০০,০০০ লোকের বাস। এখানকার নির্মাণগুলো দুর্বলভাবে পরিকল্পিত এবং সম্পাদিত। যার ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ ভূমিধসের ঝুঁকিতে রয়েছেন।