Chaudhary Charan Singh: চৌধুরি চরণ সিং ছিলেন মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বাধীন জনতা পার্টির সরকারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এই সরকার ১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে বিপি মণ্ডলের অধীনে অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন নিয়োগ করেছিল। ১৯৮০ সালের ডিসেম্বরে এই কমিশনের পেশ করা রিপোর্ট ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি) সম্প্রদায়ের জন্য ২৭% সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। এর পাশাপাশি, ১৯৯০ সালের আগস্টে তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতির (এসসি/এসটি) জন্য ২২.৫% সংরক্ষণের সুযোগও সৃষ্টি করেছিল এই কমিশন। ১৯৪৭ সালের ২১ মার্চ, সরকারি চাকুরি এবং সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃষকদের সন্তান বা নির্ভরশীলদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রসঙ্গ উঠেছিল। সেই প্রসঙ্গে চরণ সিং বলেছিলেন, 'কৃষি বিভাগে এমন অনেক আধিকারিক আছেন, যাঁরা বার্লি গাছ এবং গম গাছের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। সেচ বিভাগে এমন অনেক আধিকারিক আছেন, যাঁরা জানেন না কত জল কোন সময়ে একটি নির্দিষ্ট ফসলের জন্য প্রয়োজন হয়।'
শহর বনাম গ্রাম
চরণ সিং মণ্ডল কমিশনের গঠনকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি জোর দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, কৃষক সংরক্ষণের সঙ্গে জাতপাতের কোনও সম্পর্ক নেই। কৃষকদের দুরবস্থা দূর করা দরকার। একইসঙ্গে চরণ সিং স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, এসসি/এসটি ব্যতীত একজন প্রার্থীর জাত, 'শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সরকারি পরিষেবাতে ভর্তির ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা করা উচিত নয়।' চরণ সিং মনে করতেন, ভারতীয় সমাজে বিভাজনের প্রধান রেখা হল গ্রামবাসী বা চাষি এবং নগরবাসী। তিনি আরও মনে করতেন, নগরবাসী 'দরিদ্র কৃষকদের ওপর কর্তৃত্ব করে। আর, কৃষকদের সমস্যার প্রতি তেমন একটা সহানুভূতিশীল নয়। শহরের জন্মান কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন লোকজন গ্রামের দরিদ্র দেশবাসীকে অবজ্ঞাপূর্ণ সুরে দেহাতি, গাঁওয়ার বা দাহকানি বলে ডাকেন। যার সঙ্গে ইউরোপীয়দের ডাকা নেটিভ ভারতীয় শব্দের তেমন কোনও পার্থক্য নেই।' অথচ, ভারতের প্রায় ৭০% কর্মশক্তিকে নিযুক্ত করে কৃষি। ১৯৫০-৫১ সালে জিডিপির ৫৪% এসেছিল কৃষি থেকে।
আরও পড়ুন- ভারতের অর্থনীতি বদলে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী, তাঁর যে চারটি বিষয় অনেকেই জানেন না
চরণ সিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গি
চৌধুরি চরণ সিং সংরক্ষণকে কৃষকদের অগ্রগতির বা তাঁদের উত্থানের পথ হিসেবে দেখেছিলেন। তিনি মনে করতেন, কৃষক পরিবারের সন্তানরা সুযোগের অভাবে দারিদ্রের শিকার। তাঁরা শহরের ব্যবসায়ী, পেশাজীবী বা অন্য শ্রেণির পরিবার থেকে আসা ছেলেমেয়েদের মত উন্নতি করতে পারছে না যথেষ্ট সুযোগের অভাবে। ১৯৬১ সালের একটি সমীক্ষা দেখিয়েছিল যে, ভারতীয় প্রশাসনের মাত্র ১১.৫% শতাংশ এসেছেন কৃষি পরিবার থেকে। আর, ৪৫.৮% আধিকারিকের মা-বাবা সরকারি চাকরিজীবী। সেই কারণে চরণ সিং কৃষক পরিবারের সন্তানদের জন্য ৬০% সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পাশাপাশি, যাঁদের মা-বাবা সরকারি চাকরিজীবী, তাঁরা সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন না বলেও প্রস্তাব দিয়েছিলেন।