রবিবার পালিত হল টিপু সুলতানের জন্মবার্ষিকী। যা নিয়ে বরাবরের মতই ফের বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এআইএমআইএম নেতৃত্ব, কংগ্রেস এবং সিপিএম টিপুর জন্মবার্ষিকী পালন করেছে। তাঁকে দেশের 'প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী', 'দেশের নায়কদের অন্যতম' আখ্যা দিয়েছে। পালটা বিজেপি এবং অন্যান্য ডানপন্থী সংগঠনগুলো মহীশূরের ১৭ শতকের শাসককে 'মৌলবাদী' এবং 'হিন্দু ও কন্নড় বিরোধী' আখ্যা দিয়েছে। টিপুকে নিয়ে ছড়িয়ে থাকা এবং অজস্র কাহিনী, সবই আমরা খতিয়ে দেখলাম।
কে ছিলেন টিপু সুলতান?
টিপু সুলতানের পুরো নাম ছিল সুলতান ফতেহ আলি সাহেব টিপু। বেঙ্গালুরুর দেবানাহাল্লিতে ১৭৫০ সালের ১০ নভেম্বর তিনি জন্মেছিলেন। তিনি ছিলেন হায়দর আলির ছেলে। হায়দর আলি মহীশূরের হিন্দু শাসকের সেনাবাহিনীতে উচ্চপদে ছিলেন। ১৭৬১ সালে হায়দর আলি মহীশূরের শাসন ক্ষমতা দখল করেন। আর, ১৭৮২ সালে টিপু তাঁর বাবার উত্তরাধিকারী হিসেবে মহীশূরের শাসক হন। টিপু শিক্ষিত ছিলেন। তিনি কোরান পড়েছিলেন। ইসলামি আইন পড়েছিলেন। ভাষাশিক্ষা করেছিলেন। দর্শন এবং বিজ্ঞান বিষয়েও তাঁর জ্ঞান ছিল। তিনি যুদ্ধকলা শিখেছিলেন। তাঁর যখন ১৫ বছর বয়স, সেই সময় টিপু তাঁর প্রথম যুদ্ধে যোগ দেন।
টিপুর লড়াই
১৭৬৭ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় টিপু প্রথমবার ইউরোপীয় সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার সংস্পর্শে আসেন। যা তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। তাঁর এই মুগ্ধবোধ মহীশূরের শাসনেও প্রতিফলিত হয়। টিপু শাসনক্ষেত্রে বিভিন্ন নীতি এবং সংস্কার করেন। যা তাঁর রাজ্যকে আধুনিক করেছিল। পাশাপাশি, তাঁর উত্তরাধিকারকে প্রসারিত করেছিল। ১৭৮২ সালে হায়দর আলির মৃত্যু হয়। এই সময় কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে টিপু সেই সিংহাসনে বসেন। তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল, উত্তরাধিকারসূত্রে পিতার কাছ থেকে প্রাপ্ত অঞ্চলকে একত্রিত করা। তাঁর ২০ বছরের শাসনে মহীশূরের সীমানা বেড়েছিল। যে সব জমি নিয়ে গন্ডগোল ছিল, সেই সব অঞ্চল তিনি দখল করেছিলেন। বিদ্রোহীদের থেকে তিনি মালাবার, কোদাগু এবং বেদনুর ছিনিয়ে নেন। এতে মহীশূর কৌশলগত এবং আর্থিক ক্ষেত্রে লাভবান হয়। তবে, এই সব অঞ্চলে তাঁর শাসনকে ধর্মান্ধতা এবং স্বৈরাচারের নির্দশন হিসেবে দেখা হয়।
আরও পড়ুন- নতুন নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগে গোলমাল? খতিয়ে দেখতে নথি তলব সুপ্রিম কোর্টের
টিপু সুলতান কি অত্যাচারী এবং ধর্মান্ধ ছিলেন?
যুদ্ধক্ষেত্রে টিপু ছিলেন নৃশংস। বিদ্রোহীদের তিনি কড়া হাতে মোকাবিলা করেছিলেন। ভবিষ্যতে বিরোধিতা রুখতে দৃঢ় উদাহরণ স্থাপন ছিল তার সাধারণ অভ্যাস। টিপু বিদ্রোহীদের বা ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য যে শাস্তি প্রয়োগ করেছিলেন, তার মধ্যে ছিল জোর করে ধর্মান্তরিত করা। লোকেদেরকে নিজের এলাকা থেকে মহীশূরে স্থানান্তরিত করা। কিছু জনগোষ্ঠীকে অন্য অঞ্চল থেকে নিয়ে সেখান জমি ও জায়গা দান করা, ইত্যাদি। যেমন বেল্লারি জেলার ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটেছিল।
ধর্মীয় গোঁড়ামির অভিযোগ
কোডাগু এবং মালাবার উভয় জায়গা থেকেই তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের চলে যেতে বাধ্য করেছিলেন। কারণ, ওই অঞ্চলের বাসিন্দা নায়ার এব খ্রিস্টানরা টিপুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। কিন্তু, এর জেরে ওই বাসিন্দা অ্যাংলো-মহীশূর যুদ্ধে টিপুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। শুধু তাই নয়, টিপু স্থানীয় হিন্দু শাসক এবং প্রজাদের ওপর কড়া সামরিক শাসন প্রয়োগ করেছিলেন। পাশাপাশি, হিন্দু শাসকদের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালিয়েছিলেন। যে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মীয় গোঁড়ামির অভিযোগ ওঠে।
Read full story in English