Advertisment

দিল্লিতে এত ঠান্ডা কেন?

৩০ ডিসেম্বরের মত ঘটনা গত ১১৮ বছরে মাত্র চারবার ঘটেছে, এবং আবহাওয়া দফতরের অনুমান ১৯০১ সালের পর থেকে এটিই হতে চলেছে দিল্লির শীতলতম ডিসেম্বর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Delhi Winter

ছবি- প্রবীণ খান্না

৩০ ডিসেম্বর (সোমবার) দিল্লিতে যে পরিমাণ ঠান্ডা পড়েছিল, ১৯০১ সালের পর তেমনটা আর ঘটেনি। সেদিন দেশের রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৯.৪ ডিগ্রি। দেশের আবহাওয়া দফতর এই তথ্য জানিয়েছে।

Advertisment

এর আগে ১৯৯৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর দিল্লি সফদরজংয়ের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

২০১৯ সালের দিল্লি কেন আলাদা?

প্রতি বছর ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে এবং জানুয়ারির প্রথমার্ধে, উত্তর ও উত্তর পশ্চিম ভারতের কোনও কোনও জায়গায় তাপমাত্রা কমে দাঁড়ায় ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

ডিসেম্বর মাসে পাঞ্জাবের প্রায় সর্বত্র, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ এবং পশ্চিম উত্তর প্রদেশে  দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৬ থেকে ১৮ ডিগ্রির উপর ওঠে না। দিল্লি ও উত্তর রাজস্থানে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় পুরো ডিসেম্বর মাস জুড়েই ২০ থেকে ২২ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করে।

দিল্লিতে ডিসেম্বর মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৩০ ডিসেম্বরের মত ঘটনা গত ১১৮ বছরে মাত্র চারবার ঘটেছে, এবং আবহাওয়া দফতরের অনুমান ১৯০১ সালের পর থেকে এটিই হতে চলেছে দিল্লির শীতলতম ডিসেম্বর।

১৯০১ সালে দিল্লিতে ডিসেম্বর মাসে গড় তাপমাত্রা ছিল ১৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

১৪ ডিসেম্বর থেকে দিল্লিতে প্রতিদিন ঠান্ডা পড়ছে। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে, পরপর ১৩ দিন ঠান্ডা পড়েছিল।

এ বছর এত ঠান্ডা কেন?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিস্থিতিতে এমন কিছু অস্বাভাবিক ঘটেনি যার ফলে এ অঞ্চলে এমন ঠান্ডা পড়তে পারে।

শৈত্য প্রবাহ সাধারণত পশ্চিম থেকে এ দিকে এসে পৌঁছয়। এর মধ্যে রয়েছে উত্তর ও উত্তর পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিও।

শীত কতটা পড়বে তা নির্ভর করে জম্মু কাশ্মীর, লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ ও নিকটবর্তী অঞ্চলে কতটা তুষারপাত হচ্ছে, তার উপর।

আবহাওয়া দফতরের এক প্রাক্তন বৈজ্ঞানিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, এই সমস্ত বিষয়গুলিরই নিজস্ব বার্ষিক পরিবর্তনশীলতা রয়েছে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন রকমের শীতকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ বছরের জলবায়ু পরিস্থিতিতে কোনও বড় কারণ দেখা যাচ্ছে না যার ফলে এত ঠান্ডা পড়তে পারে।

এখন জম্মু কাশ্মীর, উত্তর আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উত্তর ইরানের কিছু অংশে শৈত্য প্রবাহ চলছে।

এ সমস্ত জায়গায় গত কয়েকদিন ধরে গড় তাপমাত্রা ১ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। উত্তর-মধ্য চিন ও মঙ্গোলিয়াতেও একই রকম পরিস্থিতি চলছে।

কিন্তু এত ঠান্ডার কিছু কারণ তো থাকবে?

কিছু ব্যাপার নজর দেবার মত

দীর্ঘমেয়াদি এই ঠান্ডার একটা কারণ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত খুব নিচে থাকা স্তর মেঘ। উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত ৫০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত স্তর মেঘ গোটা উত্তর ভারতের উপর প্রভাব ফেলছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার উঁচুতে এই মেঘ সূর্যালোককে ব্যাহত করায় এত ঠান্ডা পড়ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া দফরতেরর বিজ্ঞানী আর কে জেনামণি।

প্রায়শই স্বল্প থেকে অধিক পশ্চিমি ঝঞ্ঝার কারণেও উত্তর পূর্ব ভারতে ব্যাপক ঠান্ডা পড়ছে।

এ ছাড়া উত্তরপশ্চিম ভারতে নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া উত্তর পশ্চিমি বাতাস ঠান্ডার পরিমাণ বৃদ্ধি করছে। এর ফলে ডিসেম্বর মাস স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঠান্ডা হচ্ছে।

ডিসেম্বর মাস জুড়ে প্রতিবারের পশ্চিমি ঝঞ্ঝা, কুয়াশা ও বৃষ্টির সময়ে উত্তর ভারতে ঠান্ডা আবহাওয়া দেখা দিয়েছে উত্তর ভারত জুড়ে।

জলবায়ুর বদলের বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। অস্বাভাবিক ঠান্ডা ডিসেম্বর জলবায়ু পরিবর্তনের একটি ফলও হতে পারে।

সারা পৃথিবী জুড়ে গত বেশ কয়েক বছর ধরে তাপপ্রবাহ ও শৈত্যপ্রবাহ দুইই বেড়েছে, যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এর ফলেই অতিবৃষ্টি ও খরা হচ্ছে। এ বছর ভারতে অগাস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। সেপ্টেম্বরের বৃষ্টিপাত এক শতাব্দীর অন্যতম। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন আবহাওয়ায় ব্যাপক অনিশ্চয়তা নিয়ে আসছে, যার ফলে পূর্বানুমান করাও শক্ত হয়ে যাচ্ছে।

winter
Advertisment