কোনও অ্যাপে খুব মন দিয়ে কোনও একটি কাজ করে যাচ্ছেন। হঠাৎ দেখলেন কিচ্ছুটি আর করতে পারছেন না। হতাশ হয়ে মাথায় হাত দিলেন। ফোনটাকে শাপ-শাপান্ত করতে শুরু করলেন। মোদ্দা কথাটা তো তখনও জানেন না। জানেন না যে আপনার অজান্তে অ্যাপটির চওড়া চিনা ঘাড়ে কোপ পড়েছে। জানেন না, তখনও, কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের নির্দেশিকাই হল সেই তলোয়ার, যেটি নেমে এসেছে ওইটির স্কন্ধে। না শুধু আপনারটা নয়, মোট ৫৪টি অ্যাপ নির্দেশিকা বলে নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে এ দেশে। এই অ্যাপগুলি নয় চিনে তৈরি কিংবা কোনও ভাবে চৈনিকে সংযুক্ত। অ্যাপগুলির মাধ্যমে জাতীয় সুরক্ষায় বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তাই এই সিদ্ধান্ত, জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
অ্যাপগুলি কী, নিষিদ্ধ করার বিস্তারিত কারণ কী?
নতুন তালিকা অনুযায়ী, ভিডিও এডিটিং অ্যাপ, যেমন ভিভা ভিডিও এডিটর-- স্ন্যাক ভিডিও মেকার উইথ মিউজিক এবং নাইস ভিডিও বাইদু, এই দুটি ছোট ভিডিও তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গেমসের মধ্যে যেমন অনমোয়োজি চেস এবং কনকোয়্যার অনলাইন টু রয়েছে তালিকায়। আবার গরিনা ফ্রি ফায়ার- ইল্যাস্ট্রেটের মতো খেলা রয়েছে, যেটি তুমুল জনপ্রিয়, পাবজি-র নিষিদ্ধ হওয়ার পর এটি এ দেশে দারুণ বেড়ে ওঠে। নতুন এই অ্যাপগুলি সম্পর্কে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক বলেছে, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই নিষিদ্ধ করার কাজটি সারা হয়েছে। মন্ত্রকের আধিকারিকদের মতে, আগে যে সব অ্যাপ ব্যান করা হয়েছিল, তাদের ক্লোন অ্যাপ বা শ্যডো অ্যাপ হিসেবে হাজির হয় এগুলি। এই সিদ্ধান্তটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সুপারিশক্রমে নেওয়া হয়েছে। এবং গুগল প্লে-স্টোর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অ্যাপগুলিকে। গুগল তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, সাময়িক ভাবে এই সব অ্যাপ ভারতে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।
কী বলেছে তারা? তাদের এক মুখপাত্রের বক্তব্য হল, আইটি আইনের ৬৯-এ ধারা অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ পেয়ে সে সম্পর্কে আমরা এই সব অ্যাপ ডেভেলপারদের জানিয়ে দিয়েছি। বলা হয়েছে, ভারতে এই অ্যাপগুলি আপাতত ব্লক।
আগে কবে অ্যাপ নিষিদ্ধ করে কেন্দ্র?
২০২০ সালের জুন মাসে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক একই আইনের অস্ত্রে একই ধরনের একটি নির্দেশিকা জারি করে। তখন ৫৯টি অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে ছিল টিকটক। যেটি বন্ধের পর, বহু জনের কান্নার রোল পড়ে যায়। এছাড়াও শেয়ারআইটি, ইউসি ব্রাউজার, উইচ্যাট, লাইকি এবং বিগো লাইভ ছিল তালিকায়। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে জানানো হয় তখনও। এর পর, ওই বছরের জুলাই, ৪৭টি অ্যাপ নিষিদ্ধ করে কেন্দ্র। এগুলি প্রথম দফায় বাতিলের কোপে পড়া অ্যাপের প্রক্সি হিসেবে কাজ করছিল। ২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস, কেন্দ্র ব্যান করে ১১৮টি চিনা মোবাইল অ্যাপ, যার মধ্যে ছিল জনপ্রিয়তার মিনারে ওঠা পাবজি, চিনের সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিন প্রোভাইডার বাইদুও বন্ধ হয় তখন। সব মিলিয়ে মোটামুটি ৩০০টি অ্যাপ এবং তাদের প্রক্সি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রক।
তাই মোবাইলটা ভাল করে চেক করে নিন এক বার। কোনও নিষিদ্ধ অ্যাপের যেন কোনও চিহ্ন না থাকে।
আরও পড়ুন- শেয়ার বাজার থেকে কর বৃদ্ধির বিশাল আশা, কিন্তু আশঙ্কা এর পর কী হবে?
Read in English