কেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সহ সাংসদদের প্রার্থী করল বিজেপি?

টালিগঞ্জ থেকে প্রার্থী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্য়ায় প্রার্থী হয়েছেন চুঁচুড়া থেকে।

টালিগঞ্জ থেকে প্রার্থী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্য়ায় প্রার্থী হয়েছেন চুঁচুড়া থেকে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বিজেপির দুই সাংসদ এবার লড়াই করবেন বিধানসভা নির্বাচনেও। অলঙ্করণ- পল্লবী দে

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে সাংসদদের প্রার্থী করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে পদ্মশিবির। পাশাপাশি দু-তিন আগে দলে যোগ দেওয়া প্রাক্তন মন্ত্রী বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করা হয়েছে। একদিকে যেমন মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি, অন্যদিকে কিছু ক্ষেত্রে প্রার্থী নিয়ে দলেই চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।

Advertisment

বিজেপির রবিবাসরীয় প্রার্থী তালিকায় চমকে গিয়েছে দলেরই একাংশ। টালিগঞ্জ থেকে প্রার্থী করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে। এখানে তাঁর লড়াই তৃণমূল প্রার্থী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে। হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্য়ায় প্রার্থী হয়েছেন চুঁচুড়া থেকে। কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামানিক দাঁড়িয়েছেন দিনহাটা কেন্দ্র থেকে। সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী উদয়ন গুহ। রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত প্রার্থী হয়েছেন তারকেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। লোকসভা ভোট লড়ই করা দেবজিত সরকার ও রন্তিদেব সেনগুপ্তকেও প্রার্থী করেছে বিজেপি।

রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে বর্তমান সংসদদের কেন প্রার্থী করেছে বঙ্গ বিজেপি? যে দল মূলত এক জন এক পদে বিশ্বাসী সেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও প্রার্থী! এক্ষেত্রে নতুনদের দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হল বলে মনে করছে অভিজ্ঞমহল। বিজেপি যেনতেন প্রকারে বাংলা দখলের জন্য মরিয়া উঠেছে। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতেই হবে। তা নাহলে ফের বিধায়ক ভাঙানো নিয়ে টানাহেঁচড়া হবে। এমতাবস্তায় একটা আসনে জয়ও খুব জরুরী। সিঙ্গুরের তৃণমূল বিধায়ক ৮৯ বছরের রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করা নিয়েও দলের একাংশ প্রশ্ন তুলেছে। কেন্দ্রীয় স্তরে লালকৃষ্ণ আদবানী, যশবন্ত সিনহা সহ একাধিক বিজেপি নেতাকে বয়সের কারণে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেসও ৮০ পেরনো নেতাকে টিকিট দেয়নি।

Advertisment

বাবুল সুপ্রিয় সঙ্গীত জগতের লোক। এর আগে দুটি লোকসভা নির্বাচনে জয় পেয়েছেন। ২০১৪-তে আসানসোল লোকসভা নির্বাচনে বাবুলের জয় খুব সহজ ছিল না। তখন তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী ছিলেন তৃণমূল নেত্রী দোলা সেন। তখন এরাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক হালও ছিল একেবারে তলানিতে। কীভাবে লড়াই করে জয় পেতে হয় তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। ফের ২০১৯-এ অনেকেই যখন তাঁর জয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন তখন অনায়াস জয় পেয়েছেন তিনি। এবার সেই লড়াকু মানসিকতাকে ভরসা করেই দল তাঁকে টালিগঞ্জে প্রার্থী করেছে।

টলিউডের প্রযোজক-অভিনেতা-অভিনেত্রী এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়েছেন। শুধু তৃণমূলেরই প্রার্থী হয়েছেন ১১ জন। টালিগঞ্জে একচেটিয়া কতৃত্ব চলত রাজ্যের মন্ত্রী টালিগঞ্জের বিধায়ক অরূপ বিশ্বাসের, এমনই অভিযোগ করেছেন বিজেপি যোগ দেওয়া টলিউডের শিল্পীরা। তাঁদের একটা বড় অংশ এখন বিজেপিতে। কেউ কেউ প্রার্থীও হয়েছেন। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চায় বিজেপি। একদিকে টলিউডের কর্তৃত্ব মুক্ত করা। বাবুল নিজেও সংস্কৃতি জগতের লোক। পাশাপাশি একটা আসনে জয়ের অর্থ লড়াইয়ে টিকে থাকা।

টিকিট না পেয়ে কেউ দল ছাড়ছেন তো কোথাও বিক্ষোভ হচ্ছে। তবু তিন সাংসদকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। দুজন লোকসভার সংসদের এখনও তিন বছরের ওপর মেয়াদ রয়েছে। রাজ্যসভায় রয়েছেন একজন। স্বপন দাশগুপ্ত ছিলেন দিল্লির ভোটার। সম্প্রতি এরাজ্যের ভোটার হিসাবে নথিভুক্ত হয়েছেন। কোচবিহারের সাংসদ ও হুগলীর সাংসদকে সেই এলাকার বিধানসভার টিকিট দিয়েছে দল। রাজনৈতিক মহলের মতে, এক্ষেত্রে সাংসদ এলাকার বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করে জয় নিশ্চিত করতে চাইছে বিজেপি।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এরাজ্যে ২০০ আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন। কিন্তু দলের একাংশ মনে করছে, দুশো আসনে জয় খুব সহজ ব্যাপার নয়। বরং সস্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে কিছুটা হলেও লড়াইয়ের ক্ষেত্রে ফিরে এসেছে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করার ক্ষমতা রাখেন, তা ভাল করেই জানে পদ্মশিবিরও। তাছাড়া ভোট কাটাকাটির খেলায় বিজেপি লাভবান হবে বলে অনেকে মনে করলেও আব্বাসের সঙ্গে জোট হওয়ায় অনেকটাই মনে বল পেয়েছে কংগ্রেস-সিপিএম। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য একটা আসনও জরুরি। সাংসদরা বিধানসভায় জয় পেলে তখন দল সিদ্ধান্ত নেবে। জয় না পেলে সাংসদ পদ তো থাকছেই। কারণ লোকসভায় চারজন সাংসদ না থাকলেও সংখ্য়াগরিষ্ঠতা নিয়ে বিপাকে পড়বে না বিজেপি। অভিজ্ঞ মহলের মতে, একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়েও এগিয়ে থাকতে চাইছে বিজেপি।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

bjp Babul Supriyo Locket Chatterjee West Bengal Assembly Election 2021