বিজেপিকে আটকাতে জনতার দরবারে পৌঁছনোর জন্য তৃণমূল কংগ্রেস সোমবার বড়সড় এক কর্মসূচি ঘোষণা করল। দিদিকে বলো নামের এই প্রকল্পে টোল ফ্রি একটি হেল্পলাইন নাম্বার ও একটি ওয়েবসাইট থাকছে যেখানে যে কোনও রকমের অভিযোগ জানাতে পারবেন, এবং পরামর্শ দিতে পারবেন।
এ ছাড়া বিধানসভা এলাকার দলীয় নেতারা গ্রামে গ্রামে পরিদর্শন করবেন, সেখানে রাত কাটাবেন, বুথকর্মীদের বাড়িতে খাবেন। ১০০ দিনে ১০ হাজার গ্রাম ও শহরাঞ্চল পরিদর্শন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করেছে দল। দলের নেতারা বলছেন এ উদ্যোগের পিছনে রয়েছে প্রশান্ত কিশোরের মাথা। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের জন্য মমতা তাঁকে ডেকেছেন। এ ছাডা় আগামী বছর রাজ্যে পুরভোটও রয়েছে।
প্রশান্ত কিশোর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে হাজির থেকে তৃণমূল পর্যায়ের তথ্য দেখেছেন। কীভাবে জনতার বিশেষত যুবসমাজের মন জয় করা যায় সেদিকেই নজর তাঁর। এবারের লোকসভা ভোটে বিজেপি ১৮টি আসন ও ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। বিজেপি পেয়েছে ২২টি আসন ও ৪৩ শতাংশ ভোট। ২০১৪ সালে তৃণমূল পেয়েছিল ৩৪টি আসন ও ৩৯.০৫ শতাংশ ভোট, বিজেপি পেয়েছিল দুটি আসন ও ১৬.৮ শতাংশ ভোট।
আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলা, দীর্ঘ এক যাত্রাপথ
এ ছাড়া কাটমানি ইস্যুতেও তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিজেপির দেওয়া হাওয়ায় গ্রামাঞ্চলে এ নিয়ে জনরোষ বাড়ছে।
নজরুল মঞ্চে এদিনে কর্মসূচির সূচনা করে মমতা বলেন, "আমরা তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে মানুষের কাছে সরাসরি পৌঁছনোর নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, এবং তাঁরা কী বলেন সে কথা শুনতে চাইছি।" দলের অন্দরমহলের ধারণা, মমতা যে স্বয়ং মানুষের কথা শুনতে চান, তাঁদের পরামর্শ নিতে চান - তেমন ভাবমূর্তি তৈরির জন্যই এই উদ্যোগ।
একদিকে হেল্পলাইন নম্বর ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যেমন যুবসমাজকে আকৃষ্ট করা হচ্ছে, তেমনই প্রবীণ নেতা, বিধায়ক ও সাংসদদের গ্রামে পাঠিয়ে জেলার তৃণমূল কর্মীদের আত্মবিশ্বাস ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যে আত্মবিশ্বাস কাট মানি ইস্যুতে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ কর্মসূচির নাম বাংলায় কেন, মুখ্যমন্ত্রী তার উত্তরে বলেন, "এ ভাষাতেই রাজ্যের মানুষ কথা বলে। আমরা অন্য রাজ্যে গেলে সে রাজ্যের স্থানীয় ভাষায় কথা বলি।"
পঞ্চম দফায় লোকসভা ভোটের সময় থেকে বিজেপিকে প্রতিহত করতে তৃণমূল কংগ্রেস বাংলা সংস্কৃতির রক্ষায় উঠেপড়ে লেগেছে। লোকসভা ভোটের পর দলের মধ্যে নতুন করে বাঙালিয়ানা ফেরানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। কলকাতায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার পর রাজ্য সরকার শুধু বিদ্যাসাগরেরই নয়, বাঙালি বিভিন্ন আইকনের মূর্তি বানিয়েছে দেশ জুড়ে।
২১ জুলাই শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দেন যে তিনি বুথ স্তরের সংগঠন নতুন করে সাজাতে চান এবং দলের নেতাদের মানুষের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
২০১৪ সাল থেকেই বিজেপি বুথ স্তরে সংগঠন গড়ার ফর্মুলা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজ্যে বিজেপির সাফল্যের পিছনে তাদের বুথ ম্যানেজমেন্ট মেশিনারি অনেকটাই কাজ করেছে।