চলতি মাসে ভোট ঘোষণা হবে কিনা তা নিয়ে জোর জল্পনা। তার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে এসেছে ১২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ধাপে ধাপে রাজ্যে ১২৫ কোম্পানি বাহিনী এসে যাবে বলে কমিশন সূত্রে খবর। ভোট ঘোষণার আগে কমিশনের এই পদক্ষেপ 'বেনজির'। তাহলে কী ভোটের বাংলায় রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে অসন্তুষ্ট কমিশন? এই প্রশ্নে তর্জায় শাসক-বিরোধী শিবির।
নির্বাচন কমিশনের এক অধিকারীকের থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, বাংলায় ৬০ কোম্পানি সিআরপিএফ মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও থাকবে ৩০ কোম্পানি এসএসবি ও ২৫ কোম্পানি বিএসএফ। আর ৫ কোম্পানি করে মোতায়েন থাকবে সিআইএসএফ ও আইটিবিপি জওয়ানরা। প্রতি কোম্পানিতে থাকে ৮০-১০০ জওয়ান। ভোট বাংলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় উপদ্রুত এলাকা টহলদারির কাজ করবেন এঁরা।
বিগত দিনে ভোটের আগেই কমিশনের এ রাজ্যে বাহিনীর মোতায়েনের নজির নেই। তাই কমিশনের পদক্ষেপে কিছুটা হতচকিত রাজ্য প্রশাসন। উল্লেখ্য, এইসব বাহিনীর ব্যয়ভার রাজ্যকেই বহন করতে হবে। তাই ক্ষয়িষ্ণু কোষাগারের কথা মাথায় রেখে কিছুটা চিন্তিত মমতার প্রশাসন।
বাংলায় আগত ১২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় রুটমার্চ শুরু করেছে। এই কাজ আগামী দিনে রাজ্যের সব রাজনৈতিকভাবে উপদ্রুত এলাকায় চলবে বলে কমিশন সূত্রে খবর।
কমিশনের পদক্ষেপ কতটা বেনজির?
বিগত বছরগুলোতে ভোট ঘোষণার পরই রাজ্যে টহলদারির জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে ২০১৬ বিধানসভা ভোট ঘোষণার পর বাংলায় এসেছিল ৩০ কোম্পানি বাহিনী। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের নির্ঘন্ট প্রকাশের পর এ রাজ্যে আসে ৪০ কোম্পানি বাহিনী।
তবে, এবার এখনও ভোটের সূচি প্রকাশ করেনি নির্বাচন কমিশন। তার আগেই রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেছে কমিশন। যা পশ্চিবঙ্গে ভোটের ইতিহাসে কিছুটা 'বেনজির' বলেই মনে করা হচ্ছে।
কমিশনের কেন এই সিদ্ধান্ত?
ভোটের আগে বাংলার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় কমিশন। ভোটের আগে বাংলায় বাহিনী মোতায়েন করে কমিশন রাজ্য সরকারকে এই বার্তায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। মমতা প্রশাসনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তেও যে কমিশন খুশি নয় তাও সংস্থার এই পদক্ষেপে স্পষ্ট।
গত কয়েক মাসে বাংলায় রাজনৈতিক খুন বেড়েছে। নিজেদের কর্মী খুনের জন্য একে অপরকে নিশানা করেছে তৃণমূল ও বিজেপি। হিংসার অভিযোগ করেছে বিরোধী রাজনৈতিক সব দলই। গত বছর লকডাউন সত্ত্বেও এরাজ্যে রাজনৈতিক হিংসা-হত্যা বেড়েছে। পশ্চিবঙ্গে দলীয় কর্মসূচিতে এসে ডায়মন্ড হারবার যাওয়ার পথে দুষ্কূদের হাংলার মুখে পড়েছিল সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়। এক্ষেত্রে অভিযোগের কাঠগড়ায় তোলা হয় রাজ্যের শাসক শিবিরকে। যা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের আবহ তৈরি হয়।
একদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অন্যদিকে ভোটে ঘোষণার আগে রাজ্যে বাহিনী মোতায়ের করে কমিশনার বোঝাতে চেয়েছে যে, একুশে বাংলার নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে তারা তৎপর। এজন্য প্রয়োজনীয় সবধরণের পদক্ষেপ করতে কমিশন পিছপা হবে না।
সূত্রের খবর, পশ্চিবঙ্গের ভোটকে এবার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। বাংলার পাশাপাশি চলতি বছরে আসাম, তামিলনাড়ু, পদুচেরি ও কেরালায় বিধানসভা ভোট থাকলেও সেসব রাজ্যে ভোটের আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের কোনও পদক্ষেপ এখনও কমিশনের তরফে করা হয়নি।
উপদ্রুত এলাকায় (শহর/গ্রাম) টহলদারির মাধ্যমে ভোটারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির চেষ্টা করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ইতিমধ্যেই প্রায় সব জেলাতেই সেই কাজ শুরু হয়েছে। ফলে এবার ভোটে সব জেলাকেই স্পর্শকাতর বলে বিবেচনা করছে কমিশন।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে গত মাসে কমিশনের ফুল বেঞ্চ রাজ্যে ঘুরে গিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রশাসনিক ও পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন। সেই সময়ই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা জানিয়েছিলেন, বাংলায় ভোটে নিয়ম মেনেই বাহিনী মোতায়েন করা হবে। ধাপে ধাপে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন