Advertisment

খাদ্যপণ্যে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসের বেগ দুরন্ত, স্বস্তির দিন কি দোরগোড়ায়?

গ্রেট গ্লোবাল ফুড ইনফ্লেশন বা আন্তর্জাতিক বিরাট মুদ্রাস্ফীতির পিছনে রয়েছে চারটি কারণ। আবহাওয়া, মহামারি, যুদ্ধ এবং রফতানি নিয়ন্ত্রণ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
food inflation

আন্তর্জাতিক অর্থনীতি মুদ্রাস্ফীতির শীর্ষ বিন্দু পেরিয়ে এবার নিম্নগামী। মনে করছেন টেসলার শীর্ষ ব্যক্তি এবং বিশ্বের এক নম্বর ধনী এলন মাস্ক। টেসলার সিইও মনে করেন, মুদ্রাস্ফীতির হার দ্রুত লয়ে এবার কমতে থাকবে। আগামী ৬ মাসে ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরির নানা যন্ত্রাংশের দাম কমবে।

Advertisment

খাদ্যপণ্যে ইতিমধ্যেই মুদ্রাস্ফীতির হার কমছে। ইউএন ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল অরগানাইজেশনের ফুড প্রাইজ ইনডেক্স বা এফপিআই জুলাইতে ১৪০.৯ পয়েন্টে নেমে দাঁড়িয়েছে। জুন মাসের থেকে ৮.৬ শতাংশ কমেছে যে সূচক। ২০০৮ সালের পর এটাই সবচেয়ে চড়চড়িয়ে দাম হ্রাসের ছবি। মার্চে এই ফুড প্রাইজ ইনডেক্স গিয়ে হাজির হয়েছিল সর্বকালীন রেকর্ড বিন্দুতে। ১৫৯.৭ পয়েন্টে। ইউক্রেনে রুশ প্রবেশের পরের মাস তো মার্চ, আমরা মুদ্রাস্ফীতির রকম-সকম দেখে চমকে উঠেছিলাম।

আর সাম্প্রতিকতম সূচক জানুয়ারির পর সবচেয়ে কম। জানুয়ারিতে, মানে যুদ্ধ বাধার আগে যা ছিল ১৩৫.৬ পয়েন্ট। শুনলে অবাক হবেন যে, মার্চ-এর পর থেকে জুলাইয়ে পৌঁছানোর পথে ফুড প্রাইজ ইনডেক্স কমেছে ১১.৮ শতাংশ। এর সামনে রয়েছে যে খাদ্যপণ্যটি, তার নাম ভোজ্য তেল। রয়েছে ডালও। এই সময়কালে ভোজ্য তেলের দাম কমেছে ৩২ শতাংশ এবং ডালের দাম কমেছে ১৩. ৪ শতাংশ।

ভেজিটেবল অয়েল প্রাইজ ইনডেক্সে অস্থিরতার চরম সময় ছিল বলা যেতে পারে দেড় বছরের কিছু বেশি, কোভিড পরিস্থিতিতে ২০২০-র মে মাসে ভেজিটেবল অয়েল প্রাইজ ইনডেক্স গিয়ে পৌছয় ৭৭.৪ পয়েন্টে। তার পর বাড়তে বাড়তে এ বছরের মার্চে সেটি হয়ে যায় ২৫১.৮ পয়েন্ট। তার পর জুলাইতে একেবারে মাথা হু-হু করে নোয়াতে থাকে সে, পৌঁছয় ১৭১.১ পয়েন্টে।

আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টর
গ্রেট গ্লোবাল ফুড ইনফ্লেশন বা আন্তর্জাতিক বিরাট মুদ্রাস্ফীতির পিছনে রয়েছে চারটি কারণ। আবহাওয়া, মহামারি, যুদ্ধ এবং রফতানি নিয়ন্ত্রণ। আবহাওয়া সংক্রান্ত কারণটি হল, ইউক্রেন (২০২০-২১), দক্ষিণ আমেরিকায় (২০২১-২২) খরা, ফলে সানফ্লাওয়ার এবং সোয়াবিন অয়েল সরবরাহে দারুণ ঘাটতি দেখা দেয়। মার্চ-এপ্রিলে ভারতে তাপপ্রবাহও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে।

মহামারিতে মালয়েশিয়ায় এ সংক্রান্ত চাষাবাদে নিদারুণ প্রভাব ফেলে। মূলত পরিযায়ী শ্রমিকরা এই কৃষিকাজ করে থাকেন সেখানে। এঁদের বেশির ভাগটাই ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ থেকে আসেন। যাঁরা কোভিড কালে অনেকেই নিজভূমিতে ফিরে যান, কিন্তু দীর্ঘ সময় ফিরতে পারেননি কর্মস্থলে। কারণ, নতুন কোনও ওয়ার্ক পারমিট ইস্যুই করা হয়নি। ফলে মালয়েশিয়ার মতো পাম অয়েলের বৃহৎ (দ্বিতীয়) উৎপাদক একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ে।

আরও পড়ুন- গাজায় ইজরায়েল আর প্যালেস্তাইনের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে, কারণটা কী?

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবও সীমাহীন, ২০১৯-২০ সালে, যখন খরা বা যুদ্ধ কোনও কিছুই ছিল না, তখন সারা পৃথিবীর গমের ২৮.৫ শতাংশ, ভুট্টার ১৮.৮ শতাংশ, বার্লির ৩৪.৪ শতাংশ এবং সানফ্লাওয়ার অয়েলের ৭৮.১ শতাংশ রফতানি করেছে এই দুই দেশ। রফতানি নিয়ন্ত্রণ ২০২০-র ডিসেম্বরে জারি করে রাশিয়া। কারণ, রেকর্ড উষ্ণ তাপমাত্রার জেরে অভ্যন্তরীণ কৃষিসংকট তৈরি হবে এবং খাদ্যপণ্যের অভাব প্রবল হবে, এই আশঙ্কা ছিল। দেশে ভোজ্য তেলের অভাব তৈরি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় পৃথিবীর পাম অয়েলের এক নম্বর উৎপাদক এবং রফতানিকারী দেশ ইন্দোনেশিয়াও এই সিদ্ধান্ত নেয়। ভারত এ পথে হাঁটে ২০২২ সালের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত।

একের পর এক ঝড়, দেড় বছরের মধ্যে এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, এখন হাল ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে। কৃষ্ণসাগর হয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার রফতানি শুরু হয়েছে। এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পথটি রুশ মিলিটারি অপারেশনে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্যোগে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে কৃষ্ণসাগরের বাণিজ্যপথে অবাধে আসতে পারছে এমনকি রুশ খাদ্য ও সারের জাহাজ এবং ইউক্রেন এবং রাশিয়াই শুধু নয়, ইন্দোনেশিয়া মে-র শেষ থেকে পাম অয়েল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং প্যারাগুয়ে বিপুল পরিমাণে সোয়াবিন শস্য উৎপাদনের মুখে দাড়িয়ে রয়েছে। ফলে ভোজ্য তেলের দাম আরও কমার স্পষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত প্রয়োজনের ৬০ শতাংশ ভোজ্য তেল রফতানি করে থাকে। এ দেশের খুচরো বাজারে সোয়াবিন অয়েলের দাম গত তিন মাসে কেজি প্রতি ১৭৫ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৫০ টাকা। আর পাম অয়েলের দাম ১৬৫ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৪২.৫০ টাকা।

Read full story in English

Explained Inflation
Advertisment