ফরেন কনট্রিবিশন রেগুলেশন অ্যাক্ট বা ফেরা সংশোধন করে বিদেশ থেকে আত্মীয়স্বজনের পাঠানো অর্থের পরিমাণ বাড়াল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এখন ভারতে বসবাসকারী কাউকে বিদেশ থেকে তাঁর কোনও আত্মীয় ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থ পাঠাতে পারবেন এক বছরে। আগে, প্রতি বছর ভারতের বসবাসকারী কেউ এ দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে বিদেশের কোনও আত্মীয়পরিজনের থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিতে পারতেন। সোনার উপর আমদানি করের বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধির পরই সরকারের এই সিদ্ধান্ত। সোনার উপর আমদানি কর ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২.৫ শতাংশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এর ফলে কী হবে?
দুই পদক্ষেপ। একটিতে ফান্ড বাইরে বেরিয়ে যাওয়া রুখবে। আর একটিতে অর্থ দেশে আসা বাড়বে। আত্মীয়স্বজনদের অর্থ পাঠানো ১ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া মানে বিদেশি মুদ্রা আসা বাড়ানো। কারণ পাঠানো তো হবে ডলার কিংবা অন্য কোনও ফরেন কারেন্সিতে। আবার, সোনার উপর আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া মানে, সোনা আমদানি অনুৎসাহিত হবে। এতে করে অর্থের দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়া কমবে। যাতে করে একটু ধাতস্ত হবে টাকা। ফরেন রিজার্ভও সেই পথে হাঁটবে। বাণিজ্য ঘাটতি কমবে। এ বছরের এপ্রিল এবং মে মাসে এই ফারাক বিরাট বেড়ে গিয়েছে।
সমস্যাটা কী?
বাণিজ্য ঘাটতিটা অনেক বেড়েছে এপ্রিল ও মে মাসে। এপ্রিলে যা ছিল ২০.১ বিলিয়ন ডলার, মে-তে ২৪.৬ বিলিয়ন ডলার। মোট ৪৪.৭ বিলিয়ন ডলার। গত বছর এই দু'মাসের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২১.৮ বিলিয়ন ডলার। পেট্রোলিয়াম আমদানি যেমন বেড়েছে এই বছর, তেমনই সোনা আমদানিও বেড়েছে রীতিমতো। ২০২২-এর মে মাসে সোনা আমদানি করা হয়েছিল ৬ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের মে-তে যা হয়েছিল ৫৭০ মিলিয়ন ডলার মাত্র। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সোনার উপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধিতে নিশ্চিত ভাবেই আমদনি কমবে, কারণ আমদানিতে খরচ অনেকটাই বেশি হবে।
আরও পড়ুন- বানর থেকে মানুষের কাহিনিতে নয়া মোড়, পূর্বজরা আরও ১০ লক্ষ বছর পুরনো, গবেষণায় কী বলছে?
ফরেন রিজার্ভ নিয়ে কোনও চিন্তা আছে কি?
ফরেন রিজার্ভ এখন খুবই শক্তসমর্থ জায়গায় রয়েছে। ফরেন রিজার্ভ বলতে ডলারের যে সঞ্চয় থাকে আরবিআইয়ের ঘরে, সোনাতেও এই সঞ্চয় করা হয়ে থাকে। এটা ঠিকই যে, ২০২০ সালের পর থেকে চডচড় করে বাড়তে থাকে ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ। কিন্তু ২১-এর শেষ থেকে তা কমতে শুরু করেছে, যদিও বৃদ্ধি যে খাড়াই পথে হয়েছিল, হ্রাসমানতা সেই তুলনায় নগণ্য। তবুও, এটা চিন্তায় ফেলেছে সরকারকে। ২০২১-এর অক্টোবরে এ দেশের ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ ছিল ৬৪২ বিলিয়ন ডলার, তা এ বছরের জুনে গিয়ে হয়েছে ৫৯৩ বিলিয়ন ডলার।
ফলে একটা কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল, সেটাই নেওয়া হয়েছে, মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ যে দেশের যত ভাল, তার তত বেশি বিদেশ থেকে কোনও কিছু কেনার ক্ষমতা রয়েছে। এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির পুরো পরিচায়ক না হলেও, কোনও দেশের আত্মবিশ্বাসের খাতিরে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। তেল-খাদ্য ইত্যাদি নানা দেশীয় সঙ্কটে ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভের গুরুত্ব টের পাওয়া যায়। বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনে সঙ্কট মোকাবিলা করতে হয় তখন। তা ছাড়া, টাকার মূল্য দুর্বার গতিতে কমে গেলেও, ডলার বিক্রি করে তাতে লাগাম দিতে হয়। তখনও ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভের গুরুত্ব অনুভব করা যায়।
Read full story in English