বুধবার (২৬ এপ্রিল) দান্তেওয়াড়া জেলায় ভয়াবহ মাওবাদী হামলায় নিহত হয়েছেন ১০ পুলিশকর্মী এবং গাড়ির চালক। ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলায় ২০২১ সালের এপ্রিলে মাওবাদীদের অতর্কিত হামলার দুই বছরেরও বেশি সময় পর গতকালের এই হামলা। সেই হামলায় ২২ জন সেনা-জওয়ান প্রাণ হারান।
নিরাপত্তা বাহিনীর এক সিনিয়ার আধিকারিক জানান, “মাওবাদীরা প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে এই ধরণের হামলা চালায়। এই সময়টি বেছে নেওয়া হয়েছে কারণ জুলাই মাসে বর্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গলে আক্রমণাত্মক অভিযান কঠিন হয়ে পড়ে। বর্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাওবাদী এবং নিরাপত্তা বাহিনী উভয়ই তাদের শিবিরে ফিরে যায়। সেই সময় পুলিশকে টার্গেট করা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে সেই জন্যই এই সময়টাকে বেছে নেন মাওবাদীরা ”।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে ২০১০ সাল থেকে দেশে মাওবাদী হামলা ৭৭% কমেছে। এর ফলে মৃতের সংখ্যা ৯০% কমেছে। ২০১০ সালের সর্বকালের সর্বোচ্চ ১০০৫ থেকে ২০২২ সালে মৃতের সংখ্যা ৯৮-এ নেমে এসেছে। ২০০০-এর গোড়ার দিকে মাওবাদী অধুষ্যিত জেলার সংখ্যা ছিল ২০০। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯০। অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড এবং বিহারে মাওবাদীদের উপস্থিতির হার একেবারেই তলানিতে ঠেকেছে। যেগুলি এক সময় তাদের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ছিল। গত বছর এক সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন ২০২৪ সালের মধ্যে দেশকে মাওবাদী সমস্যা থেকে মুক্ত করা হবে।
দেশের একমাত্র রাজ্য হিসাবে ছত্তিশগড়ে মাওবাদীরা এখনও তাদের ক্ষমতা কিছুটা হলেও ধরে রেখেছে। মাঝে মধ্যেই বড় হামলা চালাচ্ছে। সংসদে দেওয়া সরকারি তথ্য অনুসারে, গত পাঁচ বছরে (২০১৮-২০২২) রাজ্যে ১১৩২টি মাওবাদী হামলার ঘটনা ঘটে। যাতে ১৬৮ জন নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মী এবং ৩৩৫ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান। এই সময়ের মধ্যে সমস্ত মাওবাদী হামলার অধিকাংশই ঘটেছে ছত্তিশগড়ে। মাওবাদীরা ২০১৮ সালে ২৭৫ টি হামলা চালিয়েছে, ২০১৯ সালে সংখ্যাটি ১৮২-এ নেমে আসে, কিন্তু ২০২০-এ বেড়ে ২৪১-এ দাঁড়ায়৷ তারপর ২০২১-এ এটি ১৮৮-এ নেমে আসে, কিন্তু ২০২২-এ বেড়ে ২৪৬-এ দাঁড়ায়৷ ফেব্রুয়ারির শেষ অবধি, মাওবাদীরা এই বছর রাজ্যে ১৭ জনকে হত্যা করেছিল, যার মধ্যে সাতজন ছিলেন নিরাপত্তা কর্মী।
সরকারি তথ্য অনুসারে ২০১৮ সালে মাওবাদী হামলায় ৫৫ জন সেনা কর্মী নিহত হয়েছেন। ২০১৯ সালে সেই সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় ২২; ২০২০ সালে ৩৬; ২০২১ সালে ৪৫; এবং ২০২২ সালে সেই সংখ্যাটা ছিল মাত্র ১০। এই একই সময়ে, নিরাপত্তা বাহিনীর পালটা ৪০০টির বেশি অভিযানে ৩২৮ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়।
ছত্তিশগড় কেন অশান্তিতে?
মাওবাদী চরমপন্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুধুমাত্র রাজ্য পুলিশই জিততে পারে, কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়। এর কারণ হল রাজ্য পুলিশের স্থানীয় জ্ঞান রয়েছে, ভাষা বোঝে এবং স্থানীয় নেটওয়ার্ক রয়েছে। যা মাওবাদী দমন অভিযানে বিশেষ কাজে আসে। অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা এবং ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলি তাদের মাওবাদী সমস্যার অবসান ঘটাতে সক্ষম হয় পুলিশের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে। এই সমস্ত রাজ্যগুলি মাওবাদী দমন অভিযানে পুলিশ বাহিনীর বিশেষ ইউনিট গঠন করেছিল রাজ্যের পুলিশকর্মী এবং অফিসারদের নিয়ে, তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল। যা মাওবাদী অভিযানে বিশেষ কাজে এসেছে।
নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে খবর ছত্তিশগড়ে দেরিতে শুরু হয়েছে এই প্রক্রিয়া। এই সময়ের মধ্যে, প্রতিবেশী রাজ্যের পুলিশ তাদের রাজ্য থেকে মাওবাদীদের দমন করতে সক্ষম হন। তারা তখন ছত্তিশগড়ে আশ্রয় নেয়। এবং এখানেই তাদের একটা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করে। ছত্তিশগড় পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান,“আমরা ক্রমাগত মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। এব্যাপারে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশও বিশেষ ভাবে সাহায্য করছে।”