আন্তর্জাতিক মন্দার পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন? আতঙ্কের ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে কি মেরুদণ্ড দিয়ে? আমেরিকার নানা নামজাদা ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, মূর্তিমান মন্দা সম্মুখে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতিতে লাগাম দিতে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডেরাল রিজার্ভ ফের একবার সুদের হার বাড়াতে পারে। এবং সেটা জুলাইতেই। জুলাইয়ের ২৬-২৭ তারিখের ফেডের বৈঠকে সুদের হার দশমিক ৭৫ শতাংশ বা ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর ব্যাপারে মোটামুটি একটা সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। এতে মন্দায় কি সুবিধে হবে? অনেকের মত, নিশ্চয় হবে, হবেই।
একটা বড় অংশ আবার সন্দিহান, হবে কি? সারা বিশ্বের অর্থনীতি কতটা নড়বড়ে হবে যদি সত্যিই মন্দা ফোঁসফোঁস করে ওঠে, কতটা এর জন্য দায়ী কোভিড কতটা রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ এই নিয়ে বিস্তর সস্তা এবং রাসভারী আলোচনা চলছে। আমেরিকার কোনও কোনও সংস্থা এর মধ্যেই ছাঁটাই করে ফেলেছে তাদের কর্মীদের একটা বড় দলকে। অনেক সংস্থার ব্যালান্সশিট ক্ষতিতে কাতর। আর ভারত, সারা বিশ্বে ভয়ে ভয়ে চোখ রেখে বসে আছে, কী হয়, কা জানি কী হয়!
এই অবস্থায় ডিজেল এবং এভিয়েশন টার্বাইন ফিউয়েলে সেস আর লেভিতে কাটছাঁট করেছে ভারত সরকার। এবং পেট্রোলে রফতানি সেস তুলে নেওয়া হয়েছে। কিছু দিন আগে হঠাৎই এগুলি চালু করা হয়। কিন্তু কমল কেন কেন? কারণটা অতি সহজ, আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দা-আতঙ্কে তেলের দাম পড়েছে, তাতেই।
শুল্ক কাটছাঁট
পেট্রোল রফতানিতে অতিরিক্ত শুল্ক প্রতি লিটারে ৬ টাকা ছিল, যা তুলে নেওয়া হয়েছে। ডিজেলের ক্ষেত্রে আগে যা ছিল প্রতি লিটারে ১৩ টাকা, কমিয়ে করা হয়েছে লিটারে ১১ টাকা। যে দেশীয় অপরিশোধিত তেল বিক্রি করা হয় দেশের বিভিন্ন তেল শোধনাগারে, তাতে প্রতি টনে ২৩,২৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৭ হাজার টাকা করা হয়েছে এই অ্যাডিশনাল এক্সসাইজ ডিউটি। এভিয়েশন টার্বাইন ফিউয়েলে রফতানি শুল্ক প্রতি লিটারে ৪ টাকা থেকে কমিয়ে করা হয়েছে দু’টাকা। পাশাপাশি, দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে থাকা সংশোধনাগারগুলি থেকে যে পেট্রোল এবং ডিজেল রফতানি করা হয়, তাতে লেভি দিতে হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন- ঋষি সুনাক এবং লিজ ট্রাস, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার শেষ দৌড়ে এখন দু’জন
কেন অতিরিক্ত, কেন হ্রাস?
এখানে বলতে হবে যে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারেও তার দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়। ক্ষতির মুখে পড়তে থাকে দেশের তেল সংস্থাগুলি, কারণ তেলের দাম বাড়াচ্ছে না সরকার। দেশের বিভিন্ন আউটলেটে তেল বিক্রিতে ডিজেলে লিটার পিছু যা ২০-২৫ টাকা এবং পেট্রোলে লিটার পিছু ১০-১৫ টাকা। পকেট ভরাতে বেসরকারি তেল কোম্পানিগুলি তেল রফতানি বাড়িয়ে দেয়। বেচারাদের এ ছাড়া আর কিই বা করার ছিল, কিন্তু এই প্রশ্ন এখানে ওঠে যে, যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ফুটো কড়িও ছিল না, তখন কিন্তু এই সব মহান তেল কোম্পানি দাম কমায়নি, সে পথে ভারত সরকারও উদ্যোগী হয়নি।
যা হোক, গত ১৫ দিনে ছবিটা কিন্তু বদলেছে, সৌজন্যে মন্দার আতঙ্ক। ইন্টারন্যাশনাল এক্সচেঞ্জে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম কমেছে ১২ শতাংশের বেশি, তাতেই সরকার এই হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে।
Read full story in English