Advertisment

বিশ্লেষণ: মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (RCEP)- তে কেন থাকল না ভারত?

সোমবার ব্যাংককে মোদী বলেন, "আমার মতে আরসেপ চুক্তি সমস্ত ভারতীয়ের স্বার্থ রক্ষা করছে না।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
PM Narendra Modi, Global Goalkeeper Award

ফাইল ছবি

সোমবার ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা আপাতত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (আরসেপ)-এ স্বাক্ষর করবে না। যতক্ষণ না পর্যন্ত বকেয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মীমাংসা হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে সরকার। যদিও এই চুক্তিতে যুক্ত অন্য ১৫টি দেশই জানিয়েছে ২০২০ সালে এই বিশাল বাণিজ্য চুক্তিতে সই করার জন্য তারা প্রস্তুত।

Advertisment

ভারতের সঙ্গে চিনের বাণিজ্যে ভারতের ৫০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, এ পর্যায়ে চুক্তিতে না যুক্ত হওয়ার জন্য এটিই প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (আরসেপ) কী?

এটি একটি বাণিজ্য চুক্তি যা নিয়ে আলোচনা করছে ১৬টি দেশ। এই দেশ গুলির মধ্যে রয়েছে আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত ১০টি দেশ (ব্রুনেই, কাম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, ফিলিপাইন্স, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম)। এছাড়া আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি যে ৬টি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য করতে পারে, সেই ৬টি দেশও (ভারত, অস্ট্রেলিয়া, চিন, কোরিয়া, জাপান এবং নিউজিল্যান্ডও রয়েছে এই আলোচনায়।

এই চুক্তির উদ্দেশ্য হল ১৬টি দেশের মধ্যে একটি সুসংহত বাজার তৈরি করা। এর ফলে এই দেশগুলির উৎপাদিত পণ্য এবং পরিষেবা অন্য দেশে পাওয়া সহজতর হবে।

আরসেপের বাণিজ্য চুক্তি বৃহত্তম। গোটা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক আরসেপভুক্ত দেশগুলির বাসিন্দা, বিশ্বের মোট রফতানির এক চতুর্থাংশের বেশি অবদান রয়েছে এই দেশগুলির এবং সারা পৃথিবীতে এক বছরে যত পণ্য ও পরিষেবা উৎপাদিত হয় তার ৩০ শতাংশ উৎপাদিত হয় এই দেশগুলিতে।

২০১৩ সালে থেকে এই চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে কথা চলছে, সমস্ত দেশগুলিই ২০১৯ সালের নভেম্বরে বিষয়টি চূড়ান্ত করার লক্ষ্য স্থির করেছিল।

তাহলে সমস্যা কোথায়?

আরসেপে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে ভারত ছাড়া সকলেই প্রস্তাবিত চুক্তির ২০টি অধ্যায়ের বিষয়ে আলোচনা শেষ করেছে, একই সঙ্গে তাদের বাজারের বিষয়েও আলোচনা সাঙ্গ। মনে করা হচ্ছে ২০২০ সালেই তারা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ফেলবে।

তাৎপর্যপূর্ণ বকেয়া কিছু বিষয় এখনও মীমাংসা হয়নি, এই যুক্তি দেখিয়ে এ ব্যাপারে পিছিয়ে রয়েছে ভারত।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, বর্তমান চুক্তিতে আরসেপের মূল নীতি ও স্পিরিট প্রতিফলিত হচ্ছে না।

সোমবার ব্যাংককে মোদী বলেন, "আমার মতে আরসেপ চুক্তি সমস্ত ভারতীয়ের স্বার্থ রক্ষা করছে না। ফলে গান্ধীজির মূলমন্ত্রই বলুন বা আমার বিবেক, কেউই আমাকে আরসেপে যোগ দেওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না।"

বকেয়া বিষয়গুলি কী?

মূল যে বিষয়গুলি ভারতকে এ চুক্তিতে সই করা থেকে বিরত রেখেছে তার অন্যতম কারণ হল আমদানিতে যে ব্যাপক খরচ পড়তে পারে, তাতে কোনও সুরক্ষাকবচ নেই। যা ভারতের পক্ষে অত্যন্ত চিন্তার কারণ দেশীয় শিল্পের আশঙ্কা এর ফলে চিনের সস্তা পণ্যে ভারতের বাজার ছেয়ে যাবে। ভারত চায় এমন কোনও স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা যার মাধ্যমে প্রয়োজনে আমদানিকৃত পণ্যের উপর শুল্ক প্রয়োজনে বাড়ানো যাবে।

ভারত এ ব্যাপারে এখনও কোনও নির্ভরযোগ্য আশ্বাস পায়নি। একই সঙ্গে শুল্কহীনতার প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তাদের যে দুশ্চিন্তা সে ব্যাপারটিও অসমাধিত। এর আগে চিনের মত আরসেপ ভুক্ত দেশগুলি শুল্কহীনতার প্রতিবন্ধকতা কাজে লাগিয়ে ভারতকে তাদের দেশে রফতানি বাড়াতে বাধা সৃষ্টি করেছিল।

এ ছাড়া শুল্ক কমানো বা তুলে দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও ভারত আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

এ ছাড়া উৎপত্তির আইনে সম্ভাব্য প্রতারণা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে ভারতের। কোনও পণ্যের জাতীয় উৎস স্থির হয়ে থাকে এর মাধ্যমে। ভারতের বক্তব্য এ বিষয়টি চুক্তিতে নেই। বর্তমান চুক্তি অনুসারে ভারত চড়া শুল্ক বসিয়ে রেখেছে এমন পণ্য, যে কোনও দেশ অন্য দেশের মাধ্যমে এমন পণ্য ফিরতি পথে ভারতে নিয়ে আসতে পারে, যার ফল ভুগতে হবে ভারতকে। এর ফলে সুবিধা পাবে চিনের মত দেশগুলি।

ভারত অধিকাংশ আরসেপ ভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে আলাদাভাবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালালেও অধিকাংশ দেশগুলির সঙ্গেই তাদের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।

শুল্কহ্রাসের ভিত্তিবর্ষ স্থির করার ব্যাপারেও ভারত আলোচনায় নিজেদের মত প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। দেশীয় শিল্পের সাহায্যার্থে ভারত চেয়েছিল ২০১৩ সালের বদলে ২০১৪ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরতে, কারণ ১৪ থেকে ১৯ সালের মধ্যে বেশ কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক বাড়িয়েছে তারা। ২০১৪ সালের আগের কোনও বছরকে ভিত্তিবর্ষ ধরলে এই পণ্যগুলির উপর আমদানি শুল্ক প্রচুর কমে যাবে।

বৃহৎ ভারতীয় সংস্থা, সিভিল সোসাইটি এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মাথাব্যথার কারণ কী?

আরসেপ চুক্তি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ভারতের শিল্পগোষ্ঠীর একাংশ এ বিষয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছে। এঁদের বক্তব্য, অন্য অংশীদার দেশগুলি সস্তা বিকল্প নিয়ে আসবে, যার ফলে মার খাবে ভারতের নিজস্ব উৎপাদকরা। উদাহরণ হিসেবে ভারতের ডেয়ারি শিল্প কঠোর প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কাছে। একই ভাবে ইস্পাত ও বস্ত্র শিল্পও সুরক্ষা দাবি করেছিল।

বর্তমান এফটিএ-র ব্যাপারে ভারতের বেহাল পরিস্থিতির উল্লেখ করে সিভিল সোসাইটি এবং বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা আরসেপ চুক্তিতে ভারতের সুবিধার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।

বাম দলগুলি তো ছিলই, এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল আরএসএস-এর স্বদেশি জাগরণ মঞ্চও। পুরনো ইউপিএ সরকার, যাদের আমলে আরসেপ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল, সেই সরকারের সদস্য এই দল চাইঠিল সরকার এ চুক্তিতে স্বাক্ষর না করুক।

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছিলেন, নোটবন্দি এবং জিএসটি চালুর মাধ্যমে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তার পর আরসেপ-এ সই করা ভারতের পক্ষে আত্মহত্যামূলক হবে।

কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও শনিবার বলেন আরসেপ-এ স্বাক্ষর করা ভারতের পক্ষে সর্বনাশা হবে।

ভারতের এ সিদ্ধান্তের অর্থ কী?

আরেসপ-এর অন্য দেশগুলি যেহেতু এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, তারা চাইবে এ ব্যাপারে ভারতকেও বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করাতে। তাদের সে প্রচেষ্টা কতটা সফল হয় তাই দেখার।

china Govt of India
Advertisment