/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/10/ie-2023-10-20T132026Z_1546105495_RC2DW3ARTQYN_RTRMADP_5_ISRAEL-PALESTINANS-SYRIA-PROTEST.jpg)
২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর, সিরিয়ার দামাস্কাসের কাছে ইয়ারমুকে প্যালেস্তাইনের শরণার্থী শিবিরে, গাজার প্যালেস্তিনীয়দের পাশে দাঁড়াতে প্যালেস্তাইনপন্থী বিক্ষোভের সময় সিরিয়ানরা জড় হয়েছিলেন। এক মহিলা সেই বিক্ষোভ দেখছেন। (REUTERS/Firas Makdesi)
ইজরায়েল এবং জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে গাজায় সংঘর্ষ চলছে। তারই মধ্যে, ইজরায়েলি যুদ্ধবিমান রবিবার (২২ অক্টোবর) গাজার কিছু অংশ এবং সিরিয়ার দুটি বিমানবন্দরে হামলা চালায়। ১৯৪৮ সালে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইজরায়েলে সবচেয়ে বড় হামলা হয়েছে দুই সপ্তাহ আগে। হামাস ওই আঘাত হানার প্রায় দুই সপ্তাহ পরেও সেই উত্তাপ অব্যাহত। আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং দীর্ঘস্থায়ী বিভাজন অনুযায়ী পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবং সদস্যরা বর্তমান হানাহানি সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কিন্তু, এর সঙ্গে সিরিয়ায় হামলা চালানো সম্পর্কটা কী?
ইজরায়েল, হিজবুল্লাহ এবং সিরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক কেমন ?
ইজরায়েল তার সর্বশেষ হামলার কারণ সম্পর্কে সরাসরি কিছু বলেনি। তবে এর আগে যুদ্ধের আরেকটি ফ্রন্ট তার উত্তর দিকে খোলা এবং সেদিকে প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে। এটা মনে করা হচ্ছে যে, প্যালেস্তাইন যে প্রতিরোধের কথা বলেছে, সেটা লেবানন-ভিত্তিক। আর, সেটা ইরান-সমর্থিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লাহকে আক্রমণ করার সঙ্গে যুক্ত। যা ইজরায়েলের উত্তর সীমানায় একটি যুদ্ধক্ষেত্র খোলার হুমকি দিয়েছে। লেবানন এবং সিরিয়া উভয়েরই উত্তর অঞ্চলে ইজরায়েল সীমান্ত। হিজবুল্লাহ এবং ইজরাইল গত কয়েক সপ্তাহে গুলি বিনিময় করেছে। এমনকী, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইজরায়েলে রকেট হামলা চালানোর অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছে। কিন্তু, হিজবুল্লাহ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেয়নি।
হিজবুল্লাহ এবং ইজরায়েল: ইতিহাস বলছে, ১৯৮২ সালে হিজবুল্লাহ জঙ্গিগোষ্ঠী সৃষ্টি হয়। তার পর থেকে, হিজবুল্লাহ পশ্চিম এশিয়ায় ইজরায়েল এবং পশ্চিমী সংস্কৃতির প্রভাবের বিরোধিতা করেছে। গৃহযুদ্ধের সময় প্রতিবেশী সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারকে সমর্থন করেছিল রাশিয়া এবং ইরান। আবার হিজবুল্লাহকে ইরান সমর্থন করে। হিজবুল্লা গোষ্ঠীটি ইরানের ধর্মতান্ত্রিক মডেল (দেশে একটি ধর্মীয় শাসন) দ্বারা অনুপ্রাণিত। এই মডেল ইরানে ১৯৭৯ সাল থেকে চালু আছে। হিজবুল্লাহও একটি শিয়া সংগঠন। আবার, ইরানও সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খবর আছে যে, ইরান হিজবুল্লাহকে কয়েক মিলিয়ন ডলার অর্থ দিয়েছে। আর, এই জঙ্গি সংগঠনের কয়েক হাজার সদস্য রয়েছে।
সিরিয়া এবং ইজরায়েল: সিরিয়া ১৯৪৮ সালে গঠনের পর থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য অন্যান্য আরব দেশের নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ইজরায়েলের বিরোধিতা করেছে। এটি ইজরায়েলের উপস্থিতি এবং দখলকে প্যালেস্তাইন এবং আরব স্বার্থের বিরুদ্ধে দেখেছে। সিরিয়া এবং ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধও হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধ। সেই যুদ্ধের পর ইজরায়েল সিরিয়ার গোলান হাইটস দখল করে। যা আজও ইজরায়েলই নিয়ন্ত্রণ করে।
হিজবুল্লাহ ও সিরিয়া: বিশ্লেষকরা বলছেন, বহিরাগত প্রভাবের পরিবর্তনের সঙ্গে হিজবুল্লাহ ও সিরিয়ার সম্পর্ক বদলেছে। যদিও উভয় আরব শক্তিই ইজরায়েল এবং পশ্চিমী প্রভাবের বিরোধিতা করেছে, আর রাশিয়ার সঙ্গে মিত্রতা বজায় রেখেছে। কিন্তু, হিজবুল্লাহ ও সিরিয়ার মধ্যে বিভিন্ন সময় পরস্পরবিরোধী স্বার্থও কাজ করেছে। ১৯৯০ সালে লেবাননের গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর হিজবুল্লাহকে লেবাননে সিরিয়ান গোষ্ঠীর উপস্থিতি স্বীকার করতে হয়েছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ, যিনি ২০০০ সাল থেকে সেদেশ শাসন করছেন, ইরান এবং হিজবুল্লাহর সিরিয়ান শিয়া জঙ্গিদের সেদেশে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/10/ie-west-asia-middle-east-map.jpg)
সিরিয়া কিভাবে বর্তমান সংঘাতে জড়িয়েছে?
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে যে ইজরায়েলি বিমান হামলা চালিয়েছে রাজধানী দামাস্কাস এবং উত্তরের শহর আলেপ্পোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লক্ষ্য করে। এই হামলায় একজন নিহত হয়েছেন এবং বিমানবন্দরের রানওয়ের ক্ষতি হয়েছে। যার ফলে সিরিয়ায় বিমান পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্প্রতি হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইজরাইল সিরিয়ায় বিমান বন্দর-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় হামলা চালিয়েছে। লেবাননে, হিজবুল্লাহ বলেছে যে শনিবার তাদের ছয় জঙ্গি ইজরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছে এবং গ্রুপের ডেপুটি লিডার শেখ নাইম কাসেম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে গাজায় স্থলপথে আক্রমণ চালালে ইজরায়েলকে ফল ভোগ করতে হবে। যুদ্ধের শুরুতে, হিজবুল্লাহ একটি বিবৃতিতে দাবি করেছিল যে তারা, 'বিপুল সংখ্যক রকেট এবং শেল' ব্যবহার করে সিরিয়ার ইজরায়েল-অধিকৃত গোলান হাইটস সীমান্তে অবস্থিত বিতর্কিত চেবা ফার্মে ইজরায়েলিদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। এই দাবির পাশাপাশি, হিজবুল্লা হামাসকে সমর্থনের কথাও জানিয়েছে।
আরও পড়ুন- তাঁর বিরুদ্ধে হিরানন্দানির হলফনামা, কী আইনি যুক্তি তুললেন মহুয়া মৈত্র?
উদ্বেগটা কোথায়?
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু উত্তর ইজরায়েলে সৈন্যদের বলেছিলেন যে হিজবুল্লাহ যদি ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে, 'সেটা তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হবে। আমরা এটিকে এমন শক্তি দিয়ে পঙ্গু করে দেব যা হিজবুল্লাহ কল্পনাও করতে পারছে না। আর, এর পরিণতি লেবানন রাষ্ট্রের জন্য বিধ্বংসী হবে।' হিজবুল্লাহকে সমর্থনকারী দেশের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাই হামাসের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের যুদ্ধ যখন তৃতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করছে, ইজরায়েলি বাহিনীর গাজায় সম্ভাব্য স্থল আক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। একইসঙ্গে, হিজবুল্লাহর মত সংগঠন এই যুদ্ধকে চরম পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
(অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস ইনপুট -সহ)